ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়ে বলে কেউ টিউশনিও দেয় না...

টাকার অভাবে ২ মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হবার উপক্রম

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

টাকার অভাবে ২ মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হবার উপক্রম

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ জীবনের সঙ্গে হররোজ যুদ্ধ করে চলেছে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের বাংলা এবং ইংরেজী বিভাগের ১ম বর্ষের দুই মেধাবী ছাত্রী সুরমা রানী ও বাসনা রানী। তাদের বাড়ি রাজারহাট উপজেলার চাকিরপাশা ইউনিয়নের বাজেমুজরই গ্রামে। ছোটবেলা থেকে অভাবী পরিবারের তারা। প্রচ- সংগ্রাম করে আজও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিমি হেঁটে অথবা অটোরিক্সায় কলেজে আসে। এই ছাত্রী দুটির জীবনে এক করুণ কাহিনী লুকিয়ে আছে। সুরমা ও বাসনার বাবা দিনমজুর। যেদিন আয় হয় সেদিন সংসারে খাবার জোটে নতুবা উপোস থাকতে হয়। ছোটবেলা থেকে প্রচ- মেধাবী বলেই তাদের পড়ালেখা কোন বাধাতেই থেমে থাকতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছে আর মানসিক শক্তি তাদের এ অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এইচএসসি পাস করার পর টাকার অভাবে এরা দুজনেই কোন পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারেনি। জীবনের এমনি এক কঠিন অবস্থায় এসে মনে হয়েছিল থেমে যাবে তাদের শিক্ষাজীবন। কিন্তু মনের জোরে রীতিমতো পরিবারের সঙ্গে যুদ্ধ করে তারা উভয়ে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়। দিনোবাজারের হাটের মানুষদের কাছে চাঁদা তুলে এবং শহরের কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষের সহায়তায় তাদের পড়ালেখা শুরু হয়। তাদের দুজনের বাবারই সন্তানদের খরচ চালানের সাধ্য নেই। সুরমার পারিবারিক জীবন আরও করুণ। তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত। বাবা-মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। দিনমজুর বাবার সংসারে নিজেই রান্না করে এবং অসুস্থ মায়ের সেবা করে ও সংসার সামলিয়ে তাকে প্রতিদিন কলেজ আসতে হয়। অধিকাংশ দিন না খেয়ে কলেজে আসে তারা। পড়াশুনা ছাড়া তাদের কোন চাহিদা নেই। তাই এ যুদ্ধে তাদের জয়ী হতেই হবে। গোটা শহর হন্যে হয়ে খুঁজেও একটি টিউশনি পায়নি তারা। ছোট্ট শহর, তার ওপর মেয়ে বলেই তাদের টিউশনিতেও নিতে চান না কোন অভিভাবক। সুরমা-বাসনা জানায়, ছোটবেলা থেকে দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত এসেছে তারা। তাদের যে পরনের জামা কাপড় তাও অন্য মানুষের দেয়া। নিজেদের কষ্টের কথা অন্যকে বলতে তাদের লজ্জা নেই। কিন্তু এখন তারা আর পারছে না তাদের পড়ালেখার খরচ চালাতে। কলেজের শিক্ষকরা কিছু বই তাদের সহায়তা করলেও অধিকাংশ বই কিনতে পারেনি এখনও। তারা একটা বৃত্তি চায়, যার টাকা দিয়ে পড়ার খরচ চালাবে। তাহলে তাদের জীবন সুখকর হতো। ইতোমধ্যে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকসহ কয়েক জায়গায় দরখাস্ত করলেও তারা কোন সাড়া পায়নি। বাসনার বাবা বাবলু রায় জানান, ছোটবেলা থেকেই মেয়েটির পড়াশুনার প্রতি খুব ঝোঁক কিন্তু টাকার অভাবে কিছুই দিতে পারিনি। নিজ মেধাগুণে কলেজে ভর্তি হয়েছে। আমি অসহায় আর সন্তানকে পড়ালেখা করাতে পারছি না টাকার অভাবে। সুরমার বাবা স্বপন রায় জানান, দিনমজুরি করে সংসার চালাই। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার টাকা লোন নিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছি। টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ প্রায়। এখন তার মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগার করতে পারছি না। কোন অসহায় মানুষ তার পাশে এগিয়ে এলে মেয়েটির অন্তত পড়াশুনা বন্ধ হবে না।
×