ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিক স্লোগানে হবে উৎসব

কবিতা মানে না বর্বরতা বর্বরতা মানে না কবিতা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

কবিতা মানে না বর্বরতা বর্বরতা মানে না কবিতা

মোরসালিন মিজান ॥ কবিতার উৎসব। উৎসব যেহেতু, আনন্দঘন হওয়া চাই। হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হলো না। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠল কবিতা উৎসবের মঞ্চ। হ্যাঁ, ১৯৮৭ সালের কথা। এ বছরই সূচনা হয় জাতীয় কবিতা উৎসবের। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন এরশাদ। সামরিক স্বৈরশাসকের বুটের তলায় পিষ্ট হচ্ছে গণতন্ত্র। বাক-স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। এ অবস্থায় এগিয়ে আসলেন কবিরা। সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা থেকে শুরু করে দেশের সব বরেণ্য কবি এক মঞ্চে হাত ধরাধরি করে দাঁড়ালেন। রাজনৈতিক শক্তির বাইরে সোচ্চার হলো কবিকণ্ঠ। নতুন এই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ক্ষমতার চেয়ার। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলকে নতুন গতি দিল কবিতা উৎসব। তার পর থেকে চলছে। এখনও সকল অন্যায়-অবিচার, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার কবিতার উৎসব। প্রতিবাদী চেতনায় উদ্ভাসিত। প্রতি বছরের মতো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে সরব হয়ে উঠবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেকিম চত্বর। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর পাশের খালি জায়গায় দুই দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হবে। ৩১তম উৎসবে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসছেন কবিরা। বিদেশ থেকেও আসছেন নানা ভাষার কবি। কেউ নিজের লেখা কবিতা পড়বেন। কেউ আবৃত্তি করবেন প্রিয় কবিতা থেকে। কবিতায় বলবেন। কবিতার কথা বলবেন। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে। থাকবে সেমিনার। অধিকাংশ প্রস্তুতি এরই মাঝে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ যথাসময়ে শেষ করতে চেষ্টার অন্ত নেই। আয়োজকরা জানান, উৎসব উদ্বোধন করবেন কবি বেলাল চৌধুরী। উদ্বোধনী দিন সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এর পর উৎসবস্থলে জাতীয়সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, একুশের গান ও উৎসব সঙ্গীত পরিবেশিত হবে। মঞ্চের আয়োজন শুরু হবে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ ও ঘোষণা পাঠের মধ্য দিয়ে। পরে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা। বর্তমান সময় ও কবিতায় করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করবেন কবি বেলাল চৌধুরী। বিকেল থেকে শুরু হবে কবিতা পাঠ ও সেমিনার। দ্বিতীয় দিনেও থাকবে অভিন্ন আয়োজন। সারাদেশ থেকে আসা কবিরা নিজেদের কবিতা পড়বেন। আয়োজকরা প্রবীণের সঙ্গে নবীনের মেলবন্ধন ও ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মিলন ঘটাতে চান। তাই খ্যাতিমান কবিদের আলাদা করে উৎসবে আমন্ত্রণ জানান হয়েছে। তেমনি প্রতিশ্রুতিশীল নবীনদের বরণ করে নেয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছেন আয়োজকরা। নতুন দিনের নতুন কবিরা নতুন স্বপ্নময় কবিতা নিয়ে মঞ্চে থাকবেন বলে আশা করছে পরিষদ। উৎসবের উল্লেখযোগ্য দিক, বিদেশী কবিদের উপস্থিতি। এবার ৭ দেশ থেকে ১২ জনের মতো কবি আসছেন। এ তালিকায় রয়েছেন সুইডেনের ক্রিস্টিয়ানা কার্লসন, অস্ট্রিয়ার ম্যানফ্রেড কোবো, আর্জেন্টিনার জোনা বাগার্ত, জার্মানির তৌবিয়াস বাগার্ত, পুয়েট্রোরিকোর লাজ লোপেজ, রাশিয়ার ভিক্টর আলেকসান্দ্রোভিচ। ভারত থেকে আসছেন আশিস সান্যাল, চিন্ময় গুহ, বীথি চট্টোপাধ্যায়, অংশুমান, কাজল চক্রবর্তী, রাতুল দেব বর্মণ প্রমুখ। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ পশ্চিমবঙ্গের কিংবদন্তি আবৃত্তি শিল্পী ও অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। উৎসবে প্রিয় কবিতা থেকে আবৃত্তি করবেন তিনি। উৎসবের এবারের সেøাগানÑ কবিতা মানে না বর্বরতা। সেøাগান থেকেই কবিদের বলাটি পরিষ্কার হয়ে যায়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যত ধরনের বর্বর কর্মকা- হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাতে এমন সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎসব সঙ্গীতে বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে আসছে। কবি মুহাম্মদ সামাদের লেখা উৎসব সঙ্গীতের কথাগুলো এ রকমÑ কবিতা মানে না বর্বরতা/বর্বরতা মানে না কবিতা/ দেশে দেশে হিংসার বিষে ভরা দ্বন্দ্বে/ বারুদের লেলিহান শিখাতে/ লুণ্ঠন নীপিড়ন হত্যা.../ না না না এই নৃশংসতা কবিতা মানে না/ বর্বরতা মানে না কবিতা। গত কয়েকদিন টিএসসির উৎসব দফতরে গিয়ে দেখা যায়, নিবন্ধনের কাজ চলছে পুরোদমে। একাধিক কর্মী নিয়োজিত আছেন এ কাজে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের যারা উৎসবে কবিতা পড়তে আগ্রহী তারা নাম নিবন্ধন করছেন। সন্ধ্যায় দফতরে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাতসহ অনেকেই। কাজ হচ্ছিল। চলছিল আড্ডা। আয়োজন প্রসঙ্গে পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সাসাদ জনকণ্ঠকে বলেন, উৎসব প্রস্তুতি মোটামুটি চূড়ান্ত। কবিতার শক্তি নিয়ে আবারও আমরা মিলিত হচ্ছি। সমবেত হচ্ছি। সবার উপস্থিতিতে প্রাণ পাবে কবিতা। কবিতায় সকল বর্বরতার বিরুদ্ধে বলব আমরা। বর্বর সময়টি ব্যাখ্যা করে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত বলেন, এই যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে খুনোখুনি হচ্ছে, ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে আরেক মানুষ, কবিতা এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে। অবিচার-নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ও বর্বরতার উদাহরণ। মানবিক পৃথিবীর দাবিকে উপেক্ষা করে যে বর্বরতা, কবিতা উৎসব তার প্রতিবাদ। কবিতার মানবিক সেøাগানে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
×