ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ধনী দেশ অর্থ দিচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ধনী দেশ অর্থ দিচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ধনীদেশগুলো অর্থায়ন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, যেসব দেশের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি হচ্ছে তারা সহযোগিতা করছে না। আর এ কারণে এই ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। তিনি বলেন, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে তিনটি রোডম্যাপ প্রণয়ন ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে অভিযোজন ও প্রশমন সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা হবে। রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা-সম্পর্কিত এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যদানকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। কর্মশালার যৌথ আয়োজক অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি)। মুহিত বলেন, আন্তর্জাতিক মহল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য দেশীয় ফান্ডে যে পরিমাণ অর্থ আসার কথা তা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ সরকার তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করছে। জাতিসংঘের বড় বড় সদস্য দেশগুলোর নানা জটিলতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে আর্থিক সহযোগিতা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের যে সুযোগ রয়েছে তা বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বাজেটের মধ্যে এটা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোতে টাকা খরচের মান খারাপÑ আপনার মন্তব্য কী?’ ওই অনুষ্ঠানে একজন সাংবাদিকের এ রকম একটি চিরকুট পেয়ে কিছুটা রাগ হয়ে অর্থমন্ত্রী তার জবাবে বলেন, জলবায়ুর বিভিন্ন প্রকল্পে কী হচ্ছে আপনি কি জানেন? কে বলেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের মান খারাপ? কোথায় মান খারাপ?’ তিনি বলেন, এটা ননসেন্স প্রশ্ন। বরং প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ হচ্ছে সেরা পারফর্মার। আমি চ্যালেঞ্জ করছি আপনাকে। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বড় বড় দেশগুলো বিদ্যুত উৎপাদনে যে কার্বন বা ফুয়েল ব্যবহার করে তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। এতে ক্ষতির পরিমাণও বেশি। তাই, সমস্যা মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের তহবিল বাড়ানো উচিত। দেশে সোলার এনার্জি ব্যবহারে ৬০ শতাংশ খরচ কম পড়ে। তাই সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পরিবেশবান্ধব প্রকল্প বাড়াচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতির ওপর যে প্রভাব পড়বে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিদেশী সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের জলবায়ু হুমকির মুখে। সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে উৎপাদন ও সংরক্ষণমুখী বন ব্যবস্থাপনা কৌশলগ্রহণ করেছে সরকার। উপকূলে জেগে উঠা চর বনায়নের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৫০০ কিমি. এলাকা জুড়ে সবুজ বেষ্টনী স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া একই সময়ের মধ্যে দেশের স্থলভাগের প্রায় ৫ শতাংশ এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক এলাকার ৭ শতাংশ সংরক্ষিত এলাকা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আইচি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বাজেটে পরিবেশবান্ধব ইটভাঁটি সম্প্রসারণে জাতীয় বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ অর্থ ব্যবহারের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন খাতে গত এক দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলো যে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে, এর অর্ধেকই গেছে মাত্র ১০টি দেশে। অন্যদিকে গরিব ও জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পেয়েছে সবচেয়ে কম। সর্বশেষ জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওভারসিস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (ওডিআই) এই তথ্য দিয়েছে। সংস্থাটির গবেষণায় বলা হয় ২০০৩ সাল থেকে জলবায়ু খাতে ১৩৫ দেশে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে মরক্কো, মেক্সিকো ও ব্রাজিল প্রত্যেকে ৫০ কোটি ডলার করে পেয়েছে। এই তিনটি দেশই বিশ্বের প্রথম ১০ কার্বন নিঃসরণকারী দেশের মধ্যে আছে। এসব দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিরও প্রচুর সম্ভাবনা আছে। অথচ কম কার্বন নিঃসরণকারী, আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচ- প্রভাব পড়বে এমন দেশগুলো পেয়েছে অনেক কম অর্থ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে নাইজিরিয়া, বাংলাদেশ ও নেপাল গত এক দশকে মাত্র ৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ পেয়েছে। অথচ এই দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে আছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো অভিযোজন খাতে বরাদ্দের মাত্র সাত ভাগ পেয়েছে।
×