ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের পুরো ইতিহাস নিবন্ধন করা হবে

এবার ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে পাইলটদের

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

এবার ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে পাইলটদের

আজাদ সুলায়মান ॥ এবার পাইলটদের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ফ্লাইট সেফটি বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে। পাইলটদের ব্যক্তিগত জীবন, পেশাদারিত্ব ও চাকরি জীবনের খুঁটিনাটি সব ঘটনা-দুর্ঘটনা ডাটাবেজের আওতায় আনা হবে। এ জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিবন্ধিত করা হবে দেশের সব পাইলটের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের পুরো ইতিহাস। বেবিচকের পরিচালক (সেফটি) উইংকমান্ডার জিয়াউল কবির চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেছেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আরও অনেক আগেই পাইলটদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এটা আইকাও স্বীকৃত একটা বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ডাটাবেজ। এখানেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যানের দফতর থেকে এ সংক্রান্ত দরপত্রের একটি ফাইল অনুমোদিত হয়ে সেমসুতে গেছে। ডাটাবেজ তৈরি করা হলে বিমানসহ অন্য বেসরকারী এয়ারলাইন্সে কর্মরত পাইলটদের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। ডাটাবেজ না থাকায় অনেক পাইলট বর্তমানে তাদের অনেক অপকর্ম ধামাচাপা দিতে সক্ষম হচ্ছেন। বেবিচক সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে চার শতাধিক পাইলট বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে কর্মরত। তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছু প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পাওয়া যায় না। যেমন কিছুদিন আগে নাদিম নামে বিমানের একজন পাইলট দুবাইয়ের একটা শপিং মলে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এ ঘটনা দেশে-বিদেশের মিডিয়ায় ফাঁস হওয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। তারপরও বিমান তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। পাইলট নাদিমের মামা ক্যাপ্টেন এনাম ওই বিভাগের দায়িত্বে থাকায় এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়। সিভিল এভিয়েশনে এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হলে সাংবাদিকদের বলা হয়, ওই ক্যাপ্টেনের ফাইল মেইনটেইন করার কথা বিমানে। সেটা সিভিল এভিয়েশনের নোটিসে আনা হয়নি তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একইভাবে ফেল করা বা এ্যাকসিডেন্ট ইনসিডেন্ট থাকার অভিযুক্ত পাইলটরা ইন্সট্রাক্টর পদে বসতে পারেন না। কিন্তুু বিমানে দেখা গেছে, পাইলটরা তাদের চাকরি জীবনে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে বেশ দাপটের সঙ্গেই ইন্সট্রাক্টর পদে বসছেন। এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও চারজন বিতর্কিত পাইলটকে ইন্সট্রাক্টর পদে বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। এখন তাদের গ্রাউন্ড কোর্স চলছে। খাজা নামের একজন ফেল করা পাইলটকে ইন্সট্রাক্টর করা হয়েছে। আমিনুল ইসলাম চট্টগ্রামে এটিপি ক্র্যাশ করার ঘটনায় অনেক দিন গ্রাউন্ডেড থাকার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে দিয়ে ভিভিআইপি ফ্লাইট চালানোর মতো অপকর্ম করেছে বিমান। একইভাবে ক্যাপ্টেন ফজল ট্রেনিংয়ে ফেল করার পরও তাদের বোয়িং ৭৭৭-এর ইন্সট্রাক্টর বানানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বিমান। এছাড়া সিলেটে এফ-২৮ ক্র্যাশ করা সাফাকে ৭৩৭-এর ইন্সট্রাক্টর করার প্রক্রিয়া চলছে। একইভাবে সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে ক্যাপ্টেন এনামকেও ইন্সট্রাক্টর পদে বসানোর জন্য ট্রেনিংয়ে পাঠানো হচ্ছে। বিমানের একজন পরিচালক জানান, বোয়িং ৭৭৭-এর ইন্সট্রাক্টর বানানোর জন্য আইকাও-এর একটা গাইড লাইন রয়েছে। সাধারণত ক্লিন ইমেজ, দক্ষ, মেধাবী ও জ্যেষ্ঠ পাইলটদেরই প্রাধান্য দিতে হয় ইন্সট্রাক্টর পদে। এদের সার্বিক কার্যকম স্ক্রিনিং করার দায়িত্ব পালন করার এখতিয়ার সিভিল এভিয়েশনের। কিন্তু প্রকৃত ডাটাবেজ না থাকায় এ ধরনের অপকর্ম গোপন রেখেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পাইলটদের সংগঠন বাপার নেতৃবৃন্দ মেধা ও জ্যেষ্ঠতার চেয়ে নিজ নিজ পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কোন পাইলট কোন্ পদে কখন বসবে, কোন্ ফ্লাইটে কখন কে যাবে, তা নির্ধারণেও বাপাই মূল ভূমিকা পালন করছে। এ নিয়ে পাইলটদের মাঝে আবারও শুরু হয়েছে দলাদলি ও গ্রুপিং কোন্দল। এ সম্পর্কে উইং কমান্ডার জিয়াউল কবীর বলেন, যদি ডাটাবেজে তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের সব তথ্য সংরক্ষণ থাকত তাহলে বিমানের কাছে তথ্যের জন্য ধর্ণা দিতে হতো না। বিমানের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া তাদের সব তথ্য এক মুহূর্তে পাওয়া যেত। তখন এ জাতীয় অভিযোগের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া যেত। এখন কোন্ পাইলট কখন কী করেছে সে তথ্য জানতে বিমানের কাছে লিখতে হয়। বিমান যদি তথ্য না দেয় করার কিছু থাকে না এবং কোন ধরনের ব্যবস্থাও নেয়া যায় না। সেজন্য ডাটাবেজ একবার চালু হয়ে গেলে এ জাতীয় সমস্যা থাকবে না। তিনি জানান, খুব শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি দরপত্র ডাকা হবে। যারা ডাটাবেজের কাজ করবেন তারা প্রত্যেক পাইলটকে একটা করে স্মার্টকার্ড দেবেন। তাতেই থাকবে সব ধরনের তথ্য। এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশের এয়ারলাইন্সও ইচ্ছা করলে বাংলাদেশের পাইলটদের বিষয়ে জানতে পারবে। এ জাতীয় ডাটাবেজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জিয়াউল কবির চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এখন একজন পাইলটের জন্য একটা ফাইল মেইনটেইন করতে হয়। ফাইলিং সিস্টেমে অনেক তথ্য বিকৃতি করা হয়, পরিবর্তন করা হয়, এমনকি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাইলই গায়েব হয়ে যায়। তখন আর করার কিছুই থাকে না। ডাটাবেজ হয়ে গেলে সব তথ্য থাকবে সেন্ট্রাল সার্ভার ও পাইলটের নিজ নিজ স্মার্টকার্ডে। তাতে সব তথ্য সব সময়ই পাওয়া যাবে অবিকৃত। বিদেশে বসে থেকেও ইচ্ছে করলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান বা মেম্বার পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রয়োজনে দেখতে পারবেন। পাইলটদের ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত আচার-আচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ডাটাবেজে সবই থাকবে। তবে পাইলটরা যদি কোথাও গিয়ে কোন অফেন্স করে বা মারামারি করে,সেটা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অপারেটরের। সিভিল এভিয়েশন দেখবে শুধু তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, পেশাগত যোগ্যতাÑ যার মানদ- আইকাও কর্তৃক নির্ধারিত। অবশ্য বিদেশের এয়ারলাইন্সগুলো সিভিল এভিয়েশনের চেয়েও এ সব বিষয়ে কড়াকড়ি। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে কোন পাইলট যদি চুরির মতো বা নৈতিক শৃঙ্খলার মতো বিষয়েও অভিযুক্ত হন সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ফায়ার করা হয়। একইভাবে অন্যান্য বিদেশী এয়ারলাইন্সেও শৃঙ্খলাজনিত কারণে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়। তবে বিমানসহ অন্যান্য বেসরকারী এয়ারলাইন্সের পাইলটদের স্বাস্থ্যগত ও লাইসেন্সিং বিষয়ে তদারকি করার দেখভাল করে থাকে সিভিল এভিয়েশন। এক্ষেত্রে কাউকে বিন্দুুমাত্র ছাড় দেয়া হয় না। তারপরও যদি কেউ তথ্য গোপন কিছু করে সেটা ভিন্ন কথা। এজন্যই তো পাইলটদের ডাটাবেজে আনা হচ্ছে।
×