ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক আজ

রোহিঙ্গা নির্যাতনের কাহিনী শুনল কফি আনান কমিশন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গা নির্যাতনের কাহিনী শুনল কফি আনান কমিশন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে কফি আনান কমিশনের তিন সদস্য দুদিনের সফরে কক্সবাজারে এসেছেন। প্রতিনিধিদল প্রথম দিন উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা বস্তি-ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তারা কথা বলেছেন নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। রবিবার সকালে উখিয়ার বালুখালী নতুন রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্প ও লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করেছেন। আনান কমিশনের সদস্যরা হলেন মিয়ানমারের নাগরিক উইন ম্রা ও আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাসান সালামে। আজ সোমবার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ও ক্যাম্প পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ঢাকায় ফিরবেন এ প্রতিনিধিদল। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জনগণের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সুচি গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে পরামর্শক কমিটি গঠন করেন। কফি আনান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মিয়ানমারের ছয় নাগরিক ও তিন বিদেশী বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত কমিশন এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুপারিশ জমা দেবে বলে জানা গেছে। রাখাইন রাজ্যের সব নাগরিকের মানবিক ও উন্নয়ন, নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপাদানগুলোকে নিয়ে একটি সুপারিশ তৈরি করার লক্ষ্যে এ কমিশন কাজ করছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১২ নবেম্বর থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্তত ৬৬ হাজার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে ১৯৭৮, ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিয়ে এদেশে রয়ে গেছে অন্তত ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এদিকে রবিবার সকালে উখিয়ার বালুখালীতে নতুন করে গড়ে উঠা বস্তিতে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক ও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের কাহিনী শুনেন কমিশনের তিন সদস্য। রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমার সরকারের সামরিক জান্তার নির্যাতন সইতে না পেরে তারা এদেশে পালিয়ে এসেছে। ওখানকার সেনা সদস্যরা নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ ও ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন কফি আনান কমিশনের সদস্যরা। এর আগে কফি আনান কমিশনের তিন সদস্য শনিবার ঢাকায় পৌঁছান। তবে ৯ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিশনের প্রধান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান এ সফরে ঢাকায় আসেননি। সূত্র জনায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাখাইন কমিশন তাদের প্রতিবেদন মিয়ানমার সরকারের কাছে পেশ করবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়েও সুপারিশ পেশ করবে কমিশন। গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারে মংডু কাউয়ারবিলে পুলিশের (বিজিপি) ৩টি সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। মিয়ানমারের ৯ জন বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্য নিহত হওয়ার জের ধরে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে রোহিঙ্গারা। বেসরকারী হিসেবে নতুন করে প্রায় লাখ খানেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ধেয়ে এসে আশ্রয় নেয়ার খবর পেয়ে বর্তমানেও প্রতিদিন বিজিবির চোখে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা, শাপলাপুর রোহিঙ্গা বস্তি ছাড়াও ওসব রোহিঙ্গা ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্থান করে নিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নিয়ন্ত্রণহীন ওই রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। এদের একাংশ রোহিঙ্গাদের নিয়ে গঠিত সন্ত্রাসী বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
×