ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র

ভুয়া নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

ভুয়া নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ চার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী প্রভাবশালী চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। প্রতারক চক্রটি কুড়িগ্রামসহ সারাদেশে প্রতারণার জাল বিস্তার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু কুড়িগ্রামের চারজনের কাছে অর্ধকোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত এ চক্রটি বিভিন্ন পরিচয়ে ভুয়া প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগ ও যোগদানপত্র প্রদান করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে ঢাকার দারুস সালাম থানায় ২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চক্রটির প্রতারণার শিকার হয়ে একটি এজাহার দায়ের করেন রাশেদুল ইসলাম তাজুল। এজাহারের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৪ গত ১৫ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে দারুস সালাম থানার দক্ষিণ বিশিল ১০নং রোডের ১৩৩/১নং বাসার চতুর্থ তলার ফ্লাট থেকে মামলার ১নং আসামি আশিষ চৌধুরী ও ৩নং আসামি নাসির শিকদার এবং দারুস সালাম থানার পাইকপাড়ার স্টাফ কোয়ার্টার (ওয়াকআপ কলোনি) ২২/৫নং বাসার ৩ তলা থেকে ২নং আসামি ছামছুল আরেফিন মিঠুকে গ্রেফতার করে। আটককৃত তিনজনের কাছ থেকে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সিল, প্যাড, স্টাম্প, ল্যাপটপ, মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের লোনের কাগজপত্র, ফাঁকা চেক, চাকরি প্রত্যাশীদের বায়োডাটা, এসেন্সিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের কাগজপত্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র জব্দ করা হয়। এছাড়াও এসেন্সিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের প্যাডে সাইদুল আলমের ক্যাজুয়াল নিয়োগপত্র ৪ পাতা, একই প্যাডে রতন কুমার ভক্ত স্বাক্ষরিত সুরুজ মোল্যা সাহিবা আক্তারের ক্যাজুয়াল নিয়োগপত্রের ফটোকপি দুই পাতা, আবু বক্কর শরিফ ও রফিকুল ইসলামের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসন-১ অধিশাখার যোগদান নিয়োগপত্রের কপি দুইপাতা, রিপন কির্ত্তনীয়া ও প্রতাপ পা-ের চাকরিতে যোগদানের নিমিত্তে এসএম আবু জার, পরিচালক স্বাক্ষরিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর হর্টিকালচার উইং খামারবাড়ী ঢাকা অফিস আদেশ দুই পাতা, নাম ঠিকানা বিহীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসন-১ অধিশাখার চাকরির যোগদানপত্র তিন পাতা জব্দ করা হয়। পরে আসামিদের গত ১৬ জানুয়ারি দারুস সালাম থানায় মামলা করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব-৪। এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পৌরসভাধীন কৃষ্ণপুর মৌজার উত্তর ডাকুয়াপাড়া গ্রামের মোঃ আনছার আলীর ছেলে রাশেদুল ইসলাম তাজুলের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি দেয়ার নাম করে কয়েক দফায় ১২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। টাকা নেয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভুয়া নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্রের ফটোকপি দিয়ে এ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান ইউনিয়নের নাজমুল হাসানের কাছে পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার, সদর উপজেলার কামরুন্নাহারের কাছে ৬ লাখ ৫০ হাজার ও আব্দুল হাকিমের পাঁচ থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। অভিযোগ সূূত্রে জানা গেছে, প্রতারক চক্রের সদস্য ছামছুল আরেফিন মিঠু কখনও নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর এ্যাসাইনমেন্ট অফিসার, আবার কখনও প্রধানমন্ত্রীর এ্যাসাইনমেন্ট অফিসার গাজী হাফিজুর রহমানের ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রের অপর এক সদস্য আশিষ চৌধুরী কখনও এ্যাসাইনমেন্ট অফিসারের পিএস, কখনও সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের পিএস পরিচয় দিয়ে আসছিল। এই চক্রটি সারাদেশে শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে প্রতিটি জেলায় স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ মন্ত্রণালয়ে লোভনীয় চাকরির প্রলভন দেখিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
×