ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে দুটি বাঁধের কারণে পানি পাচ্ছে না কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

বরিশালে দুটি বাঁধের কারণে পানি পাচ্ছে না কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ব্রিজ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারদের দেয়া দুটি বাঁধের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার খালের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগের জীবাণু। একই সঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে চলতি বোরো মৌসুমের চাষাবাদ। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের সভায় একাধিবার বাঁধ দুটি অপসারণের দাবি জানানো সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে অদ্যাবধি কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী, কৃষক, জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা সদরের গোডাউন রোডে এলজিইডির অর্থায়নে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য গত ছয় মাস পূর্বে সমগ্র খালে বাঁধ নির্মাণ করে ঠিকাদারের শ্রমিকরা। ওই ব্রিজ নির্মাণ অনেক আগে শেষ হলেও বাঁধের মাটি অপসারণ না করায় উপজেলা সদরের পূর্ব পার্শ্বের খালে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ওই বাঁধের পাঁচ শ’ গজ দূরত্বে থানা কোয়ার্টারের সামনে সদর বাজারে প্রবেশের জন্য এলজিইডি বিভাগ থেকে একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ এখনও চলমান। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে গত ছয় মাস আগে ওই ব্রিজ নির্মাণের সময় সমগ্র খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার। পানিপ্রবাহ বন্ধের ফলে গত বর্ষা মৌসুমে রাজিহার ও বাকাল ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় বর্ষার পানিতে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়ে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। ফলে অসংখ্য মাছের ঘের, পানের বরজ ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের সভায় রাজিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার, বাকাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপুল দাস ও গৈলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন কৃষকদের স্বার্থে গোডাউন রোডের বাঁধের মাটি অপসারণ ও থানা কোয়ার্টারের ব্রিজের বাঁধ কেটে দিয়ে পানি চলাচল নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি করেন। বাঁধের কারণে বর্তমান সেচ মৌসুমে উপজেলা সদর থেকে পূর্ব ও উত্তর দিকে বিশেষ করে রাজিহার, বাকাল ও গৈলা ইউনিয়নের সেচের জন্য পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিনের স্রোত বন্ধ থাকা খালের পানির সঙ্গে সদর হাট-বাজারের ফেলা ময়লা ও বর্জ্যরে স্তূপ পানিতে পচে দুর্গন্ধ ও জীবাণুবাহী রোগ ছড়াচ্ছে। ভরাট হয়ে গেছে খাল। সুবিধামতো সময়ে ওই পানি ধোয়া-মোছার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে হোটেল, রেস্তরাঁসহ চায়ের দোকানেও। চাষীদের দাবির মুখে সম্প্রতি কোয়ার্টারের সামনে নির্মাণাধীন ব্রিজের জন্য দেয়া বাঁধের কিছু অংশ কেটে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। বাঁধের ওই কাটা অংশ দিয়ে সেচ মৌসুমে জোয়ারের সময় যেটুকু পানি প্রবেশ করে এলাকার চাষাবাদের প্রয়োজনে তা খুবই কম। ভরা সেচ মৌসুমে বাঁধের কাটা অংশ দিয়ে উত্তর দিকে প্রবেশ করা পানির স্বল্পতায় রাজিহার ও বাকাল ইউনিয়ন এবং গৈলা ইউনিয়নের বড় অংশে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হয়ে উৎপাদন কমের আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলা সদরের খালে দুর্গন্ধযুক্ত কালো জীবাণুবাহী পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি বিভাগ, উপজেলা কৃষি বিভাগ, স্যানিটেশন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকেও কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চাষীদের চাষাবাদ সচল রেখে ও জীবাণুবাহী পানি অপসারণ করতে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী তারিক সালমন বলেন, চাষীদের কথা চিন্তা করে ঠিকাদারকে দিয়ে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তা যে পর্যাপ্ত নয়, তা তাকে কেউ জানায়নি। তিনি আরও বলেন, কৃষি কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×