ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য এলাকায় নদী খননের সিদ্ধান্ত নিল সরকার

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

পার্বত্য এলাকায় নদী খননের সিদ্ধান্ত নিল সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার নদী খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) এজন্য প্রকল্প তৈরি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় নদীর সীমানা নির্ধারণ, নাব্য বৃদ্ধি এবং স্থলবন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত এক সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়। পাহাড়ী নদী খননের উদ্যোগ দেশে প্রথমবারের মতো নেয়া হলো। বৈঠক শেষে জানানো হয়, পার্বত্য এলাকার নদী খনন ছাড়াও সেখানকার তিন জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণ করা হবে। এতে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, পাহাড় বয়ে আসা নদীগুলোতে দিন দিন পলি জমতে শুরু করেছে। বন ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য এলাকার জুমচাষকেই এজন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। অতীতে নৌরুটের বাইরে আর নদী খনন না করায় পার্বত্য এলাকার নদীতে পানির প্রবাহ অনেকাংশে কমে গেছে। বৈঠক সূত্র জানায়, নদীগুলোর মধ্যে কাসালং, মাইনি, ইছামতি, কর্ণফুলী, চেঙ্গি, মাতামুহুরি, সাঙ্গু, ফেনী ও হালদা নদী প্রথমে খনন করা হবে। কর্ণফুলী এ অঞ্চলের মূল নদী। কর্ণফুলীর উৎপত্তিস্থল ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড়। রাঙ্গামাটি এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী পতেঙ্গার সন্নিকটে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এ নদী দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। এ নদীর পাড়েই গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। নদীটি নৌরুটের জন্য ড্রেজিং করা হলেও এ এলাকার অন্য নদীগুলো বেশ অবহেলিত। জানা যায়, কর্ণফুলীর প্রধান উপনদীগুলো হচ্ছেÑ রাইনখিয়াং, সুবলং, খেগা, কাসালং ইছামতি এবং হালদা। কর্ণফুলীর উজানে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুত কেন্দ্র। এছাড়া হালদা দেশের প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। পার্বত্য এলাকার অর্থনীতির সঙ্গে এসব নদীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, নদীগুলোর অবস্থা বিবেচনা করে বৈঠকে বলা হয়, নদীগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দখলের শিকার হচ্ছে। প্রভাবশালী মহল নদীর দুই পাড়ের জমি দখল করছে, এর পাশাপাশি নদীগুলোতে পলি জমে নাব্য হারাচ্ছে। দখল রোধে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেবে। জেলা প্রশাসন সীমানা পিলার স্থাপন করবে। বৈঠকের পর নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, নদীগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলাগুলোয় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য নদীগুলো খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নদীগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কাসালং, মাইনি, ইছামতি, কর্ণফুলী, চেঙ্গি, মাতামুহুরি, সাঙ্গু, ফেনী ও হালদা। এছাড়া আরও কিছু নদী খনন করা হবে। মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম কোন সরকার পার্বত্য জেলার নদী খননের উদ্যোগ নিল। এর ফলে ওই এলাকার মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হবে, তেমনি তারা ব্যবসা-বাণিজ্যেও বড় অবদান রাখতে পারবে। শাজাহান খান বলেন, দেশের অনেক নদী নাব্য হারিয়ে ফেলেছিল। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নদীগুলোর নাব্য ফিরিয়ে আনা ও খননের কাজ গতিশীল করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ’১৩ সাল পর্যন্ত ১৪টি ড্রেজার কিনেছে সরকার। ২০১৪ থেকে ’১৯ সাল পর্যন্ত আরও ২০টি ড্রেজার কেনার কাজ চলছে। এছাড়া বেসরকারীভাবে আরও ৫০টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ড্রেজার দিয়ে নদী খননের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত এক হাজার ২শ’ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে। শাজাহান খান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির রামগড়, রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার তেগামুখ ও বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে স্থলবন্দর নির্মাণ করা হবে। এগুলো নির্মিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এছাড়া অনেক অবৈধ মালামাল পরিবহন হয়। আনা-নেয়া হয়। এ বন্দরগুলো হলে অবৈধ ব্যবসা কমে যাবে। তথন বৈধভাবেই মানুষ ব্যবসা করবে। কর্মসংস্থান হবে। ব্যবসার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপস্থিত ছিলেন।
×