ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য উচ্চতায় রজার ফেদেরার

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

অনন্য উচ্চতায় রজার ফেদেরার

গোলাম মোস্তফা ॥ নাদাল-ফেদেরারের দ্বৈরথ মানেই অন্যরকম রোমাঞ্চ। তা দেখতে মুখিয়ে থাকা টেনিসপ্রেমীদের থাকে বাড়তি প্রস্তুতি। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল ছিল তারচেয়েও যেন একটু বেশি কিছু। চোট-ফর্মহীনতায় টেনিসের সাবেক দুই শীর্ষ তারকাই যে প্রায় হারিয়েই যাচ্ছিলেন। সেই দুই তারকাই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফিরলেন দুর্দো- প্রতাপে। কিন্তু নাদাল নন, শেষের হাসিটা এবার ফেদেরারই হাসলেন। নতুন বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে সুইজারল্যান্ডের জীবন্ত কিংবদন্তি ৬-৪, ৩-৬, ৬-১, ৩-৬ এবং ৬-৩ সেটে হারান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের ১৮তম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পান তিনি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাদালের বিপক্ষে জয়ের পর কেঁদে ফেলেন ফেদেরার। এই কান্না যে আনন্দের। পাঁচ সেটের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। প্রতিপক্ষকে হারাতে ফেদেরার সময় নেন ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট। সেইসঙ্গে ২০০৯ সালে এই টুর্নামেন্টে নাদালের কাছে হারের প্রতিশোধটাও দারুণভাবে নিয়ে নিলেন সুইস তারকা। ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন ফেদেরার। ২০০৬-৭ সালে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। সাময়িক বিরতির পর ২০১০ সালে সর্বশেষ মেলবোর্নে শিরোপা উচিয়ে ধরেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী এই টেনিস তারকা। দীর্ঘ সাত বছর পর মেলবোর্নে আবারও স্বরূপে ফিরলেন ফেদেরার। তাও আবার চিরচেনা, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বন্ধু রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে। বয়সে ফেদেরারই বড়। সেই নিয়মে যেন জয় দিয়েই শুরু করেন সুইস তারকা। ৩৪ মিনিটের লড়াই শেষে ফেদেরার ৬-৪ গেমে সেটে জিতে নেন। দ্বিতীয় সেটেই আবার ঘুরে দাঁড়ান স্প্যানিশ তারকা। ৪২ মিনিটে ৬-৩ গেমে জিতে ম্যাচে ফিরেন তিনি। তৃতীয় সেট জিতে আবারও এগিয়ে যান ফেদেরার। তবে দমে যাননি নাদাল। ৪০ মিনিট লড়াই করে চতুর্থ সেট আবারও নিজের করে নেন তিনি। এর ফলে ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম সেটে। শেষ সেটের লড়াইটা আরও বেশি হাড্ডাহাড্ডি। শেষ পর্যন্ত পেরে উঠতে পারেননি নাদাল। একঘণ্টা এক মিনিট লড়াই করার পর ৬-৩ ব্যবধানে পঞ্চম সেট জিতে নেন রজার ফেদেরার। সেইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পঞ্চম শিরোপা নিজের শোকেসে তুলেন তিনি। আর ক্যারিয়ারের ১৮তম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান ফেড এক্সপ্রেস। শুধু তাই নয়, ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। ১৯৬৮ সালের পর টেনিসের উন্মুক্ত যুগে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের রেকর্ডটা নিজের করে রেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কেন রোজওয়াল। ১৯৭২ সালে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। এবার সেই রোজওয়ালকে ছাড়িয়ে গেলেন রজার ফেদেরার। শিরোপা জয়ের পথে রজার ফেদেরার জার্গেন মেলজার, নোয়া রুবিন, টমাস বার্দিচ, কেই নিশিকোরি, মিসচা জেভরেভ, স্টানিসøাস ওয়ারিঙ্কা এবং সবশেষে সেমিফাইনালে রাফায়েল নাদালকে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন। নাদালের বিপক্ষে এটা ছিল রজার ফেদেরারের ৩৫তম মুখোমুখি লড়াই। এই জয়ের পরও নাদাল ২৩-১২ ব্যবধানে এগিয়ে। আর গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে এটা ছিল নবম। যার ছয়টিতেই জিতেছেন নাদাল। আর ফেদেরার জিতেছেন তিনবার। নাদালের বিপক্ষে দারুণ রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ জিতে উচ্ছ্বাসিত ফেদেরার। ম্যাচ শেষে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘টেনিস খুব কঠিন একটা খেলা। এখানে কোন ড্র নেই। যদি একটিও থাকতো তাহলে আজ রাতে আমি খুব খুশি মনে সেটাই গ্রহণ করতাম এবং সেটা নাদালের সাথে ভাগাভাগি করে নিতাম। একদম সত্যিই কথাই বলছি। রাফা প্লিজ খেলাটা চালিয়ে যাও, তোমাকে টেনিসের বড্ড প্রয়োজন।’ ফেদেরারের জয়ে নাদালও যেন সন্তুষ্ট। এ প্রসঙ্গে ম্যাচের শেষে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন কোর্টের বাইরে থাকার পরও কি অসাধারণ টেনিস-ই না খেলেছে সে। সত্যিই বিস্ময়কর। এটা করতে নিশ্চিত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তোমার জন্য আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে।’ ১৪টি গ্র্যান্ডসøামেই আটকে থাকা নাদাল এ সময় আরও বলেন, ‘আমার জন্যও এই মাসটা দারুণ। বলতে পারেন বিস্ময়করও। আসলেই খুব উপভোগ করেছি। তবে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আজ যেখানে এসেছি তা কঠোর পরিশ্রমেরই ফসল। সম্ভবত আমার চেয়ে ফেদেরার আরও অনেক বেশি করেছে। তাই সে এটার যোগ্য।’ ফেদেরারের আহ্বানে নাদাল এরপর জানালেন, ‘খেলাটা চালিয়ে যাওয়ার সব চেষ্টাই করব আমি। তবে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি অনেক উচ্চ পর্যায়ে ফিরে এসেছি। এই মৌসুমে টেনিস কোর্টে লড়াই চালিয়ে যাব আমি।’
×