ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটে হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

সঙ্কটে হাসপাতাল

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুবৃহৎ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি দীর্ঘদিন থেকে চলছে অর্থ ও জনবল সঙ্কটে। ৯ বছর আগে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি উন্নীত করা হয় ৫০০ শয্যায়। তবে সেই অনুপাতে জনবল ও বাজেট বরাদ্দ হয়নি। ফলে আড়াই শ’ শয্যার বরাদ্দ দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পাঁচ শ’ শয্যার হাসপাতালটি। তদুপরি বর্তমানে সেখানে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৫০ রোগী ভর্তি থাকে। শয্যা না পাওয়ায় তাদের অনিবার্য ঠাঁই হয় মেঝে কিংবা বারান্দায়। অতঃপর চিকিৎসা সেবা কি মেলে তা সহজেই অনুমেয়। ফলে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-স্টাফরা মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তেমনি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন অসহায় রোগীরা। ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালে রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজন ১৬৫০ জনবল। কিন্তু হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে ৩৮২ জনবল দিয়ে। এরকম একটি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যেখানে ৭১৩ চিকিৎসক ও কর্মকর্তা প্রয়োজন, সেখানে এখন আছেন মাত্র ৮১ জন। অনুরূপ অবস্থান প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর স্টাফের ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি নেই পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ, সিসিইউ, বার্ন ইউনিটসহ রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষাগার। একই রকম করুণ অবস্থা বিরাজমান রোগীদের জন্য বরাদ্দ পথ্য ও ওষুধপত্রের ক্ষেত্রেও। শয্যার বাইরে থাকা রোগীরা ওষুধ ও পথ্য পায় না বললেই চলে। চিকিৎসা কি মেলে তাও সহজেই বোধগম্য। আসলে এসব সমস্যার মূলে রয়েছে অর্থ। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৫০ শয্যা রাজস্ব খাতের অধীন। বাকি ২৫০ শয্যার অর্থ বরাদ্দ হয় উন্নয়ন খাত থেকে। অদ্যাবধি এই অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না যাওয়ার কারণেই যত সমস্যা-সঙ্কট। নিতান্ত বাধ্য হয়ে রাজস্ব খাতের বরাদ্দ দিয়েই চালাতে হচ্ছে হাসপাতাল। ফলে অর্থ সঙ্কট হয়েছে তীব্র। এতে স্বভাবতই হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে পদে পদে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সমস্যা সমাধান, প্রয়োজনীয় জনবল বরাদ্দ সর্বোপরি অর্থ ছাড়ের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন-নিবেদন করলেও কোন সুফল মেলেনি। অনুমোদন পাওয়া যায়নি অর্থ মন্ত্রণালয়ের। খুব দ্রুত এই সমস্যার জরুরী সমাধান না হলে অচিরেই সমস্যা আরও বাড়বে বৈ কমবে না। ৫০০ শয্যার জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইলটি স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ থেকে সরকারী আমলাতান্ত্রিক গ্যাঁড়াকলের একটি নমুনা মেলে বৈকি! মোটামুটি একই চিত্র দেখা যায় ঢামেক হাসপাতালসহ প্রায় সব সরকারী হাসপাতালে। রোগীর অনুপাতে চিকিৎসক-নার্সসহ আনুষঙ্গিক জনবল প্রায় সর্বত্রই কম। হাসপাতালগুলোতে শয্যা, ওষুধ-পথ্যের সঙ্কটও প্রকট। অথচ রোগীদের বিশেষ করে অসহায় ও গরিব রোগীর ভিড় লেগেই আছে। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার-নার্সের প্রাণান্ত। চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত রোগী ও স্বজনদের আহাজারিসহ ক্ষোভ-বিক্ষোভের খবরও মেলে। আবার বরাদ্দকৃত ওষুধ ও পথ্যের কিছু যে লোপাটও হয় না দুর্নীতিপরায়ণ কর্তৃপক্ষের হাতে পড়ে, তাও অজানা নয়। সর্বোপরি উন্নত দেশের তুলনায় তো বটেই, এমনকি দেশীয় অনুপাতেও চিকিৎসক-নার্স-ওষুধপত্র ইত্যাদির বরাদ্দ পাওয়া যায় না। কেননা জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য খাতেই বরাদ্দ অনেক কম। তাই জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। আপাতত খুমেক হাসপাতালের অর্থ ছাড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করবে বলেই প্রত্যাশা।
×