ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষানীতি ও পাঠ্যবই বদলানোর দাবি

অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যসূচী দাবিতে রাজপথে মহিলা পরিষদের সদস্যরা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যসূচী দাবিতে রাজপথে মহিলা পরিষদের সদস্যরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক বিষয় নিয়ে মানববন্ধনের জন্য আমরা আজ রাজপথে দাঁড়িয়েছি। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের কাছ থেকে যে শিক্ষানীতি, পাঠ্যপুস্তক আমরা পেয়েছি তা দেখে আমরা বিস্মিত। হেফাজতের ২১ দাবির মধ্যে তাদের ১৯ দাবি পূরণ হয়েছে, তা থেকেই আমরা বুঝতে পারি আমরা কোন্দিকে এগোচ্ছি। রাজপথে দাঁড়িয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত দুদিনের জাতীয় পরিষদ সভার শেষদিন শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাজপথে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নারীরা। ‘অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক, নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষানীতি ও পাঠ্যসূচী চাই’ দাবি নিয়ে মানববন্ধনে ৫৩ জেলা শাখা থেকে আগত ৪ শতাধিক নেতাকর্মী ও সংগঠক অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনটি পরিচালনাকালে মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, সরকার বছরের শুরুতেই শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছেন যা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা পাঠ্যসূচীতে অনেক অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছি যা বাংলাদেশের মূল চেতনার সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অসাম্প্রদায়িক একটি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষানীতি এবং পাঠ্যসূচী করার দাবিতেই এই মানববন্ধন। সভাপতি আয়শা খানম উদ্বেগের সঙ্গে আরও বলেন, আমরা মুখ বুজে সামরিকতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি জাহানারা ইমাম ও সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে। আমরা যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছি। ’৯১ সালে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে তারা জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার আজ যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় আছে তাদের কাছ থেকে আমরা এই পাঠ্যসুচী আশা করতে পারি না। আমরা এমন পাঠ্যসূচী চাই যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম জানতে পারবে ভাষা আন্দোলনের কথা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের কথা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, ’৭২-এর সংবিধানের কথা। এ সময় মহিলা পরিষদের সকল নারীকর্মী শিক্ষানীতি ও পাঠ্যসূচী পরিবর্তনের দাবি জানান। তারা সরকারের কাছে যেসব দাবি জানানÑপাঠ্যসূচী পুনর্লিখিত করতে হবে, প্রয়োজনে অতীতের পাঠ্যসূচীর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, যারা এই পাঠ্যসূচী ছাপিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শান্তি দেয়া হোক, মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষের মানুষদের চিহ্নিত করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক, প্রশাসনে এখনও যারা জামায়াত-শিবিরের পক্ষের লোক আছে তাদের চিহ্নিত করা হোক, যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হোক। মানববন্ধনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যে নারী-পুরুষের সমতা আনয়নের কথা বলা হয়েছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিশেষভাবে প্রশংসিত। কিন্তু আমরা কি ধরনের শিক্ষা দিতে চাই, কি ধরনের মূল্যবোধ তৈরি করতে চাই; বিষয়গুলো নিয়ে যখন ভাবি তখন দেখি বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে যা সংযোজন হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী, আমাদের আকাক্সক্ষার পরিপন্থী, সরকারের নীতির পরিপন্থী । আমরা যে পাঠ্যসূচী দেখছি তা পিতৃতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক। আমরা যে শিক্ষানীতির জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়েছি তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য, সংবিধানের নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য। আমরা চাই যারা পাঠ্যসূচীতে সুকৌশলে এই পরিবর্তন এনেছেন তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য বলেন, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পাঠ্যসূচীতে যে পরিবর্তন এনেছে আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ করছি।
×