ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অভাবনীয় প্রবৃদ্ধিই আগ্রহের কারণ

দেশী কোম্পানিতে বাড়ছে বিদেশী বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

দেশী কোম্পানিতে বাড়ছে বিদেশী বিনিয়োগ

অপূর্ব কুমার ॥ গত অর্থবছরে পুঁজিবাজারে সক্রিয় ছিল বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। প্রতি মাসেই আগের তুলনায় বেড়েছে বিদেশী বিনিয়োগ। বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি এখনও তাদের নজর ভালমানের বাংলাদেশী কোম্পানির প্রতি। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশীদের অগাধ আস্থারই প্রতিফলনই ঘটেছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। এর আগে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করত। কিন্তু এখন তাদের বিনিয়োগের ধরন পাল্টাচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সঙ্গে তারা এখন দেশীয় কোম্পানির দিকে ঝুঁকছেন। বিদেশী পোর্টফলিও ম্যানেজাররা এখন দেশের কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, সুশাসন, আর্থিক প্রতিবেদন, লভ্যাংশ প্রদানের হার ও ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করে শেয়ার কিনছেন। আগামী দিনে আরও ভাল করবে এমন আশাতে তারা বাংলাদেশী কোম্পানির শেয়ার কিনছেন। জানা গেছে, আইটি, ব্যাংকিং, ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের প্রসার অভাবনীয়। উন্নয়নে আন্তর্জাতিক মানটি একদিনে হয়নি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে সাধারণ শ্রমিক। উন্নত বিশ্ব দেখছে কিভাবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে জয় ছিনিয়ে নিচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশ হতে আর খুব বেশি সময় নেবে না। আর তাই বিভিন্ন দেশের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক হিসেবে কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। আমেরিকার ওয়াসাটচ, মর্গান স্ট্যানলি, জেপি মর্গান, গোল্ডস্যাম স্যাকস, ব্রিটেনের এবারডিন, সিঙ্গাপুরের এরিসাইগের বিশ্ববাজারে শেয়ার ১০ হাজার কোটি ডলারের। তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। নবেম্বর পর্যন্ত ১১৪ কোম্পানিতে বিদেশী বিনিয়োগ ১৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। বিদেশীরা বেছে বেছে ভাল কোম্পানিতে ঝুঁকেছে। গত এক বছরে বাজারে তালিকাভুক্ত জিএসপি ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্ম, আর্গন ডেনিমস, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বারাকা পাওয়ার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, এপেক্স ফুডস, ড্যাফোডিল কম্পিউটার, ইউনিক হোটেল, ব্র্যাক বাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, আইডিএলসি ও স্কয়ার ফার্মা দেশীয় কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। তারা এসব কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। জানা গেছে, গত ২০১৬ সালে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ৫ হাজার ৫৭ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। এর বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৩ হাজার ৭১৬ কোটি টাকার শেয়ার। ফলে নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে তাদের নিট বিনিয়োগ ছিল মাত্র ১৮৫ কোটি টাকা। ডিএসই ও সিএসইতে গত বছর এক লাখ ২৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। শেয়ার কেনা ও বেচার হিসাবে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশীদের লেনদেনের অংশ ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এ হার ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৭ এবং ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বিদেশীদের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা করেন এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আশা করছেন, চলতি বছর বিদেশীদের বিনিয়োগ আরও কিছুটা বাড়বে। তারা আরও জানান, বিদেশীরা আগে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও এখন দেশীয় কিছু শেয়ারে বেশি বিনিয়োগ করছেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ধারনের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরে জিএসপি ফাইনান্সের বিদেশী বিনিয়োগ ১.৭০ শতাংশ থেকে ৪.০৪ শতাংশ, বেক্সিমকো ফার্মা ৩৬.৩৩ থেকে ৩৮.৩১ শতাংশ, আর্গন ডেনিমস ১.৬৫ থেকে ২.৩৭ শতাংশ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ০.২৭ থেকে ১.৩৭ শতাংশ, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১.৭৭ থেকে ২.৭৭ শতাংশ, বারাকা পাওয়ার শূন্য থেকে ০.৫৪ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৯.০৭ থেকে ৪২.৮৮ শতাংশ, এ্যাপেক্স ফুডস ১.৫৭ শতাংশ, ড্যাফোডিল কম্পিউটার ২.৯৪ শতাংশ, ইউনিক হোটেল ১.৪০ থেকে ১.৭৬ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংক ৩৫.৭৬ থেকে ৪২.১৫ শতাংশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ০.৪৮ শতাংশ, আইডিএলসি ২.২৩ থেকে ৪.২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, টানা দর পতনের মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালে দেশের পুঁজিবাজারে মূল্যস্তর অত্যন্ত বিনিয়োগ অনুকূল অবস্থানে নেমে এসেছিল। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়েছেন। তারা তুলনামূলক সস্তায় বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন। মূল্যস্তরের পাশাপাশি দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ক্রমহ্রাসমান ব্যাংক সুদ হার, আবাসন খাতসহ বিকল্প খাতে বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসা ইত্যাদি বিষয়ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাড়তি বিনিয়োগে উৎসাহী করেছে। তাদের মতে, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে রক্ষণশীলতা থেকে বের হয়ে আসা। দু’বছর আগেও বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির বাইরে অন্য কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চাইতেন না। করলেও সে ধরনের কোম্পানির সংখ্যা ৭/৮টির বেশি নয়। কিন্তু বর্তমানে তারা স্থানীয় অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা বাড়ার কারণেই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখনও দেশীয় ভাল কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব দরবারে জায়গা করে নেবে এমন আশাতেই বিদেশী বিনিয়োগ দেশে আসছে। এটি দেশ ও পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।
×