ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা কী গ্রেফতার?

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা কী গ্রেফতার?

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড নব্য জেএমবির বর্তমান শীর্ষ নেতা মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা কি গ্রেফতার? জানা মতে, মুসা শুধু জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ডই নয়, জঙ্গী তৈরির কারিগরও। জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহকারীদের অন্যতম। রাজধানীর আশকোনার ‘সূর্য ভিলা’ জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের সময়ে তার স্ত্রী-সন্তান ধরা পড়লেও সে গ্রেফতার এড়িয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। মুসার পরের সারিতে নেতৃত্ব দেয়ার মতো আপাতত আর কোন বাঘা জঙ্গী নেতার নাম নেই গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায়। শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, মুসার গ্রেফতার ঘোষণা এলেই নব্য জেএমবির চ্যাপ্টার শেষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসূাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার সিলেটের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জঙ্গী মুসা পুলিশের নজরদারিতে আছে। যে কোন সময় গ্রেফতার হবে। এর আগে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, জঙ্গী মুসা দেশেই অবস্থান করছে। আমরা তাকে ধরার চেষ্টা করছি। শীঘ্রই তাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারব। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মুসার গ্রেফতারের ঘোষণার বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। মুসাকে গ্রেফতারের ঘোষণা দেয়া হলেই নব্য জেএমবির চ্যাপ্টার শেষ হয়ে যাবে। অবশ্য কিছু জঙ্গী সদস্য গ্রেফতারের বাইরে থেকে যাবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানের পর মুসার বিষয়টি তারা প্রথম জানতে পারেন। আজিমপুরের জঙ্গী আস্তানায় নিহত শীর্ষ জঙ্গী তানভীর কাদরীর কিশোর ছেলে তাহরিম কাদরী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে প্রথম নাম প্রকাশ করে মাঈনুল ওরফে মুসার। কিশোর জঙ্গী তাহরিম কাদরী জবানবন্দীতে বলেছে, মেজর জাহিদ ও মাঈনুল ওরফে মুসার সঙ্গে আমার বাবার দীর্ঘদিন থেকে পরিচয় ছিল। আমার বাবা, মেজর জাহিদ ও মুসাসহ উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি মসজিদে নামাজ পড়ত। তারা প্রায়ই উত্তরার লাইফ স্কুলের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে একসঙ্গে জগিং করত। জবানবন্দীতে এই কিশোর জঙ্গী জানায়, বাবার মাধ্যমেই মেজর জাহিদ ও মুসার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। আমাকে ও আমার ভাইকে মুসা অংক, ইংরেজী ও বিজ্ঞানের বিষয় পড়াতেন। জবানবন্দীতে সে আরও বলে, প্রায়ই জাহিদ আঙ্কেল, আন্টি (জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার), মেয়ে জুনায়রা ওরফে পিংকি এবং মুসা আঙ্কেল আন্টি আমাদের বাসায় যাতায়াত করত। জাহিদ আঙ্কেলের বাসা ছিল উত্তরা ১৩ নং সেক্টরে। তাদের বাসায় আমরাও যেতাম। আন্টিসহ মুসা আঙ্কেল ওই বাসায় যেত। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, উত্তরার লাইফ স্কুলে এক সময় শিক্ষকতা করত মাঈনুল ওরফে মুসা। সেখান থেকেই নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মেজর (অব) জাহিদুল ইসলাম ও তানভীর কাদরীর সঙ্গে তার পরিচয়। হলি আর্টিজানে হামলা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল এই মুসা। তামিম চৌধুরীসহ নব্য জেএমবির তানভীর কাদরী, জাহিদ, রাশেদ, জাহাঙ্গীর, মারজান, বাশারুজ্জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। আজিমপুর আস্তানা থেকে উদ্ধারের পর নিহত মেজর জাহিদের মেয়ে জুনায়ারা পিংকি ওই সময় সিটির গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল, তার মা মুসা আঙ্কেলের বাসায় গেছে। তাহরিম ও পিংকির দেয়া তথ্যের সূত্র ধরেই সিটিটিসি কর্মকর্তারা খুঁজতে শুরু করে মুসাকে। তদন্ত সূত্র জানায়, আশকোনার আস্তানায় মুসার স্ত্রী তৃষা মনি সন্তানসম্ভবা হলেও নিয়মিত এখানে থাকত না। অন্য জঙ্গীদের স্ত্রীদের নিজের বাসায় রেখে সে অন্য একটি জঙ্গী আস্তানায় থাকত। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার সে আশকোনার বাসায় আসত। সেই হিসেবে গত শুক্রবার তার আশকোনার আস্তানায় আসার কথা থাকলেও সে আসেনি। মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে প্রায় চল্লিশ বছর বয়সী দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিও আসত। মুসা অন্য কোন আস্তানায়ও একইভাবে বিস্ফোরক দিয়ে হ্যান্ডগ্রেনেড তৈরি করছিল ধারণা পুলিশ কর্মকর্তাদের। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে উত্তরার লাইফ স্কুল থেকে মুসার জীবনবৃত্তান্ত ও ছবি সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে দক্ষিণখানের এক মসজিদের ইমামের সঙ্গে তার সখ্যের তথ্য পাওয়া যায়। নব্য জেএমবির অনেক নেতাকর্মী নিহত ও গ্রেফতার হলেও মুসা নিজে দায়িত্ব নিয়ে সংগঠন গোছানোর কাজ করছিল। এ কারণে সে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে। নিজের বাসাতেই হ্যান্ডগ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট তৈরি করে। আশকোনার আস্তানায় অভিযান চালানোর পর যে সুইসাইডাল ভেস্ট, হ্যান্ডমেড গ্রেনেড রাখা হয়েছিল তা এনেছিল মুসাই। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, মুসাই রাজধানীর আশকোনার সূর্য ভিলা আস্তানাটি অনলাইন ব্যবসায়ী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিল। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, মেজর জাহিদ, তানভির কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, রাজীব গান্ধীসহ শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতারা নিহত হলে জঙ্গী সংগঠনটির হাল ধরে মুসা। হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার মাস্টারমাইন্ড মুসা আরও একটি এই ধরনের হামলার চক্রান্ত করে আশকোনায় সুইসাইড গ্রুপের নারী ও পুরুষ জঙ্গীদের সমন্বয়ে একটি জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলেছিল। রাজধানীর আশকোনার আস্তানায় অভিযানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গী হিসেবে সর্বশেষ তালিকায় রয়েছে শীর্ষ জঙ্গী মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসার নামটি।
×