ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিসচা ও ডিএসসিসির যৌথ উদ্যোগে মহাসমাবেশ

চালকদের কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন চূড়ান্ত করার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

চালকদের কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন চূড়ান্ত করার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে চালকদের কঠোর শাস্তির বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, কঠোর আইন হলে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সবাই সচেতন হবে। পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সড়ক দুর্ঘটনাকে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও শিশুদের সচেতনতার জন্য পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন ও সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়গুলো যুক্ত করারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক মহাসমাবেশ থেকে এসব তথ্য ও সুপারিশ ওঠে আসে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যৌথ উদ্যোগে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে নিচসা কর্মীদের ৭ম মহাসমাবেশের আয়োজন করে। এতে দেশের সকল জেলা থেকে নিচসার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। ‘দোষারোপ নয়, দুর্ঘটনার কারণ জানতে হবে সবাইকে নিয়ম মানতে হবে’ এই সেøাগান নিয়ে এবারের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নতুন উপদ্রব হলো মোবাইল ফোন। অসচেতনভাবে চালক ও যাত্রীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে নিজ নিজ এলাকায় সকল এমপিকে প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সকলের জন্য সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যসূচীতে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত করা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত প্রচার চালানোর কথা উল্লেখ করে স্পীকার বলেন, আমি মনে করি সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। আমরা সবাই ইচ্ছা করলে তা সম্ভব হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্নসহ সকল সড়কে জেব্রা ক্রসিং করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি সিগন্যালের সঙ্গে জেব্রা ক্রসিংয়ের সমন্বয় থাকতে হবে। সড়কে দ্রুত চলার প্রবণতা কমানোর কথা উল্লেখ করে স্পীকার বলেন, দ্রুত পথ চলার চেষ্টা করা হলে নানাদিক থেকে আইন লঙ্ঘন হয়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি বড় অন্তরায় বলে আমি মনে করি। দুর্ঘটনাগুলো প্রতিরোধযোগ্য একথা উল্লেখ করে শিরীন শারমিন বলেন, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নতুন উপদ্রব হয়েছে মোবাইল ফোন। চালক ও যাত্রীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার কারণে অসতর্কতায় দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কোন কিছুই সুফল বয়ে আনে না। এজন্য সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অবশ্যই আইনের প্রয়োজন। সড়ক পরিবহন আইন যুগোপযোগী করা উচিত। আমরা যেন কার্যকর আইন পাই। নিরাপদ সড়ক করার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে, তা দূর করতে কি ধরনের আইন জরুরী তা আগে ঠিক করতে হবে। এসব বিষয় সামনে রেখেই আইন করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ২৪ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলছে। কিন্তু সড়ক নিরাপদ হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য একটি মাত্র শাস্তি হয়েছে। অসংখ্য মামলা থাকলেও কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। গত দু’বছরে প্রায় ৩০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসলেও গত বছর নিহতের সংখ্যা আড়াই হাজারেও বেশি। তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন শক্ত করেন। আইনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে সবই করা সম্ভব। গুলশান এভিনিউতে প্রভাবশালীরা ১৭ বছর ধরে ফুটপাথ রাস্তা দখল করে রেখেছিল। তাদের উচ্ছেদ করে দিয়েছি আইনের জোরে। রাজধানীর মধ্যে দখলে থাকা ১০টি রাস্তা ইতোমধ্যে খালি করা হয়েছে। যদিও এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ নয়। তিনি বলেন, শেওড়াপাড়া এলাকায় ৩০ ফুটের রাস্তা দখল করে তা ১০ ফুটে পরিণত করা হয়েছিল। দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। অথচ চারটি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর বাড়ি নির্মাণের তদারকি করছে। কিন্তু যারা সড়ক দখল করে বাড়ি বানাচ্ছে তাদের কেউ কিছু বলছে না। মেয়র বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা প্রয়োজন। চালকদের প্রশিক্ষণ দিন। যোগ্য চালক গড়ে তুলুন। যাদের কাছে লাইসেন্স নেই, তারা গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করবে এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, পাঁচটি কোম্পানির বাস ট্রাক চলছে সারাদেশে। কিন্তু তারা জনস্বার্থে কিছুই করছে না। সরকারকে এসব পরিবহন মালিকদের বাধ্য করতে হবে নিজ খরচে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে দক্ষ চালক তৈরি করতে হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। এই ধারাবাহিকতা আমাদের থাকবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার জন্য আমরা যদি একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করি তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না। এটি একটি বড় সমস্যা। সকলের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা না থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা কঠিন হবে। কিছু দিনের মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে সাইন সিগন্যাল স্থাপন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইনটি চূড়ান্ত করার বিষয়টি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা সবার মতামত নিচ্ছি। এখনও কেউ মতামত দিলে তা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আইনটি চূড়ান্ত হবে সংসদে। তাই এর মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। আমি মনে করি, আইনটি পাস করার ক্ষেত্রে জনস্বার্থ কোনভাবেই উপেক্ষিত হবে না। জনবিরোধী আইনও হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে এমন তথ্য দিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নতুন বছরের শুরুতে দুর্ঘটনার মাত্রা অনেক বেশি বাড়ায় আমরা চিন্তিত। কুয়াশার সময় গাড়ির গতি ৫০ কিলোমিটার করার জন্য আমরা সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কুয়াশার কারণে প্রয়োজনে গাড়ি বন্ধ রাখারও প্রস্তাব ছিল। আমাদের প্রস্তাব মানা হলে বছরের শুরুতে এত প্রাণহানি হতো না। কাঞ্চন বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি প্রাধান্য না দিলে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, সুইডেনে সড়ক দুর্ঘটনা ইতোমধ্যে শূন্যের কোঠায় নেমেছে। আমরা সচেতন হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ জরুরী।
×