ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবাইকে সমানভাবে আইনের আশ্রয় দিতে পারিনি ॥ প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

সবাইকে সমানভাবে আইনের আশ্রয় দিতে পারিনি ॥ প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশে কর প্রদানের সীমা সর্বনিম্ন হলেও শত শত কোটি টাকার অনেক মালিক কর দেন না। তারা শত কোটি টাকা লেনদেন করেন, জাল নথি ও ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য আমদানি- রফতানি করেন কিন্তু যখন এই বিষয়টি ধরা পড়ে তখন জড়িতদের খুঁজে পাওয়া যায় না। ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং আইনের আশ্রয় সমানভাবে পাওয়ার অধিকারী এটি শুনে আসছি আমাদের সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে। এটি কতদূর দিতে পেরেছি? আমি বলব, পারিনি। এটি আমাদের অপারগতা’। প্রতিটি জেলার প্রখ্যাত আইনজীবীদের বদলে এখন দলীয় আইনজীবীরা সহকারী সরকারী কৌঁসুলি (এপিপি) হন। ‘আগে প্রতিটি জেলায় প্রখ্যাত আইনজীবীরা ফৌজদারি মামলায় এপিপি হিসেবে নিয়োগ পেতেন। এই নীতি বেশ কিছু সময় চলার পর এখন আর দেখা যাচ্ছে না। এখন এপিপি বলতে যেকোন সরকারী দলের, যে-ই থাকে, তাদের একটি প্যানেল লিস্ট করা হয়। এর বাইরে নিয়োগ দেয়া হয় না।’ শনিবার সুপ্রীমকোর্র্ট অডিটরিয়ামে লিগ্যাল এইড কমিটির মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন প্রধানবিচারপতি। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আইনী সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বার্ষিক আয়ের যে সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে তার পরিধি বাড়ানো দরকার। আমরা মনে করি যার ওপর আয়কর প্রযোজ্য হবে না তাকে যাতে লিগ্যাল এইড দেয়া যায় এ বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। প্রধান বিচারপতি বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছাড়াও যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে তাদের আইনী সহায়তা দিতে হবে। কারণ তাদের জমিজমা থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বছরে এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ একটি ফসল ফলিয়ে জীবন ধারণ করতেন। তাদের এই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। ‘আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার প্যানেল আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের দরকার। প্রয়োজনে আমরা সহযোগিতা করব। অভিজ্ঞ সাবেক বিচারপতিদের অনুরোধ করব নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন, এ অডিটরিয়ামে। আমরাও থাকব’। ‘আমি একটি ফান্ড গঠন করব। সেই ফান্ড থেকে যেসব মামলায় প্রখ্যাত আইনজীবী আছেন, তাদের বিপরীতে লড়ার জন্য অন্য প্রখ্যাত আইনজীবী নিয়োগে অর্থ দেয়া হবে’। লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবীদের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মামলায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তখন ভারসাম্য থাকে না। আমি কাউকে খাটো করার জন্য বলছি না। একপক্ষে প্রথিতযশা ও অভিজ্ঞরা থাকেন। অন্যপক্ষে মোটামুটি প্রখ্যাত না, অনভিজ্ঞরা থাকেন। এ ক্ষেত্রে খাপ (ম্যাচ করে না) খায় না। এর ফলে সরকারী তহবিল থেকে টাকা চলে যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে দুস্থরা বিচার পাচ্ছেন না। বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। এজন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা প্রয়োজন’। ২৬ জানুয়ারি গাজীপুরের কিশোর ও কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেখানে শুধু গরিবেরা নয়, ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেমেয়েরাও ষড়যন্ত্রের কারণে আছে। সেখানে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। দেখলাম, কেউ কেউ আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী, তাদের যেন জামিনের ব্যবস্থা করা হয় তা বলেছি। সেখানেও আইন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা ধনাঢ্য ব্যক্তি, আবার প্রভাবশালীর চাপে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্য অপরাধীদের সঙ্গে খারাপ অবস্থায় আছে।’
×