ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নামের তালিকা চেয়েছে সার্চ কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নামের তালিকা চেয়েছে সার্চ কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়েছে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি। প্রত্যেক দল তাদের পছন্দ অনুযায়ী ৫ জনের নামের তালিকা দিতে পারবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি বেলা এগারোটার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন ও বিধি) বরাবর এই নামের তালিকা পাঠাতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যে ৩১ রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে তারাই কেবল এ তালিকা পাঠাতে পারবে। এছাড়াও সার্চ কমিটি আগামীকাল সোমবার ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামত নেয়ার জন্য পুনরায় বৈঠকে মিলিত হবেন। শনিবার রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেলা সোয়া এগারোটায় সুপ্রীমকোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তিদের অনুসন্ধানে সার্চ কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সার্চ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ছাড়াও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সার্চ কমিটির কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতেই মূলত শনিবারের বৈঠকে হয়েছে। এছাড়াও প্রথম দিনের বৈঠকে দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়েছে সেসব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তারা প্রত্যেকে ৫জন করে নামের তালিকা পাঠাতে পারবে। ৩১ জানুয়ারি বেলা এগারোটার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিবের কাছে এই তালিকা পাঠাতে হবে। এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তিদের অনুসন্ধানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪ টায় তারা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আবার বৈঠকে বসবেন। এ সময় তিনি ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তির নামের তালিকা সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী ও অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা। গত বুধবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে। সার্চ কমিটি অনুসন্ধান ও পর্যলোচনার পর প্রধান নির্বাচন কমিশন ও অপর চার কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে। সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনার নিয়োগ দেবেন। এজন্য সার্চ কমিটি কমিশনে নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে দুজনের নাম প্রস্তাব করতে পারেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে একজন করে নিয়োগ দেয়া হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী বিদায় নেবেন ৮ ফেব্রুয়ারি। অপর সদস্য মোঃ শাহ নেওয়াজ কমিশন থেকে বিদায় নেবেন ১৪ ফেব্রুয়ারি। কমিশন সচিব জানিয়েছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান কমিশনের ধারাবাহিকতা থাকবে। এর পর নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এর আগেই নতুন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী বর্তমান কমিটি কাজ করছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। তিনি জানান, নির্ধারিত ১০ কার্যদিবস অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সার্চ কমিটির সব কার্যক্রম শেষে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন কমিশন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের সবার কাছে চিঠি যাবে ৩১ জানুয়ারি বেলা এগারোটার মধ্যে নাম পৌঁছানোর জন্য। এছাড়া যে ১২ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সার্চ কমিটি তাদেরও বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইসি গঠনে তাদের পরামর্শ নেয়া হবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ গত বুধবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে এই সার্চ কমিটি গঠন করে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য শিরীণ আখতার। নিয়ম অনুযায়ী, ছয় জনের এই কমিটির তিনজন উপস্থিত থাকলেই বৈঠকের কোরাম পূর্ণ হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমান কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। সে সময় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান চার সদস্যের সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান সদস্যদের নাম বাছাই করেন। আগের সার্চ কমিটি অনুসন্ধান করে ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি ৫জন নিয়ে কমিশন গঠন করেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রদান করার এখতিয়ার শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির হাতে। তবে এ বিষয়ে সংবিধানে আইন করার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত এ নিয়ে কোন আইন হয়নি। এতদিন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি। গতবার থেকে সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হচ্ছে। জানা গেছে, ৬ সদস্যবিশিষ্ট এই সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রাপ্ত নামের তালিকা পর্যালোচনা করবেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবদের নামের তালিকাও পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া অবসরপ্রপ্ত জেলা বিচারকদের নামের তালিকাও সংগ্রহ করে কমিশনে নিয়োগ দেয়ার জন্য পর্যালোচনা করবেন। এছাড়া সার্চ কমিটির ছয় সদস্য ব্যক্তিগতভাবেও যোগ্য ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করে পর্যলোচনা করবেন। এসব তালিকা থেকে পর্যালোচনা করে সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়া হবে; সেখান থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করে কমিশনে নিয়োগ দেয়া হবে।
×