ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরও কঠিন পরীক্ষার সামনে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

আরও কঠিন পরীক্ষার সামনে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিউজিল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরে বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য খুব একটা ভালো সিরিজ (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ) যায়নি। আমরা কোন ম্যাচ জিততে পারিনি। এটা নিয়ে এভাবে পড়ে থাকলে চলবে না। দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার ভারতের সঙ্গে খেলা শুরু হবে। তারপর বড় একটা সিরিজ আছে শ্রীলঙ্কায়। নিউজিল্যান্ড সিরিজে আমরা কোন কোন জায়গায় ভুল করেছি, ভারত সিরিজের আগে তা নিয়ে যখন বসব, চেষ্টা করব কারণ খুঁজে বের করার। পুনরায় যাতে সে ভুলগুলো না হয়, সে চেষ্টা করব। নিউজিল্যান্ড সিরিজের কথা ভেবে পুরোটা সময় পড়ে থাকলে আমাদের জন্য ভাল ?হবে না।’ তা ঠিক। ব্যর্থতা নিয়ে বসে থাকার মানে নাই। তবে সামনে বাংলাদেশ দলের জন্য কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে। নিউজিল্যান্ডে টালমাটাল অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। হারের ষোলোকলা পূর্ণ করেছে। তিন ওয়ানডে, তিন টি২০ ও দুই টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। দুই বছর পর বিদেশ সফরে গিয়েই এমন বেহাল দশা হয়েছে বাংলাদেশের। তাতে বোঝা যাচ্ছে, সামনে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে চলেছে দল। বিদেশের মাটিতেই যে এখন থেকে বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা। দুই বছরের বেশি সময় ধরে টানা নিজেদের মাটিতে খেলেছেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিমরা। সাফল্যও মিলেছে আকাশচুম্বী। এই সময়ের মধ্যে আফগানিস্তান, জিম্বাবুইয়েকে তো হারিয়েছেই, পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকেও সিরিজে হারিয়েছে। দেশের বাইরে গিয়েও বিশ্বকাপে সাফল্য মিলেছে। কিন্তু যেই দল আবার বিদেশ সফর শুরু করেছে, শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে। সামনে সেই ধাক্কা এখন সামাল দেয়ার পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। দেশের মাটিতে কম, বিদেশের মাটিতেই যে বেশি খেলা রয়েছে। আবার বিরামহীন ক্রিকেটও রয়েছে। যেটিও দলের ক্রিকেটারদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষ। এবার সামনে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট রয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে সেই একমাত্র টেস্টটি অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথমবার টেস্ট খেলবে। এ টেস্টে স্বাভাবিকভাবেই ভারতই শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকছে। এরপরও দল নিউজিল্যান্ডের ধাক্কা সামলে চেনা কন্ডিশনে কতটা ভাল করতে পারে, সেইদিকেই সবার নজর থাকবে। ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি খেলার পরই আবার শ্রীলঙ্কা সফর যেতে হবে বাংলাদেশকে। দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও দুই টি২০ খেলতে শ্রীলঙ্কায় যাবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা সফর শেষে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সিরিজটি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিমূলক সিরিজ। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ইংল্যান্ডে জুনে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে তিন জাতি সিরিজে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ছাড়াও থাকবে নিউজিল্যান্ড। ডাবল লীগ পদ্ধতির এ সিরিজে ১২ মে বাংলাদেশ খেলতে নামবে। ২৪ মে সিরিজ শেষে ১ জুন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচটি দিয়েই ২০০২ ও ২০০৪ সালের পর তৃতীয়বারের মতো টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। ৫ জুন অস্ট্রেলিয়া ও ৯ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দিয়ে গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ হবে বাংলাদেশের। যদি নক আউট পর্বে ওঠে বাংলাদেশ, তাহলে আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষ হবে ১৮ জুন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে এসেই আবার আরেকটি সিরিজের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে। এবার দেশের মাটিতে খেলা। পাকিস্তান খেলতে আসবে বাংলাদেশে। দুই টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ১ টি টি২০ ম্যাচ খেলতে জুনের শেষেই বাংলাদেশে পা রাখার কথা পাকিস্তান ক্রিকেটারদের। জুলাই মাসটি জুড়েই হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ। এখানেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের শেষ নয়। আছে আরও খেলা। আগস্টের শুরুতেই আবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। আইসিসির ভবিষ্যত সফরসূচী অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ টেস্ট ও তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। আবার এর মধ্যে গত বছর অক্টোবরে যে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এসে খেলে যায়নি, সেই টেস্টটিও হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পর দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে অক্টোবর-নবেম্বরে ২ টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ২টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সিরিজটি দক্ষিন আফ্রিকায় হবে। নবেম্বরের মাঝামাঝি সিরিজ শেষ হবে। এরপর ২০১৭ সালে আর কোন সিরিজ নেই। ২০১৮ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্ট ও ১টি টি২০ সিরিজ খেলার পর একটি তিনজাতি সিরিজও খেলতে পারে বাংলাদেশ। মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ২ টেস্ট, তিন ওয়ানডে ও ১টি টি২০ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। জুনে এশিয়া কাপ হবে। নবেম্বরে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে। পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি করে সিরিজ ছাড়া সব খেলাই বাংলাদেশকে বিদেশের মাটিতে খেলতে হবে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদেশের মাটিতেই বেশি খেলা রয়েছে। আর বিদেশের মাটিতে খেলা মানে, অভিজ্ঞতা অর্জন। কিন্তু সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের মত অবস্থা হলে দুরবস্থার সম্ভাবনাও আছে। যেটি দেশের মাটিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। তামিম যতই বলুন, সব ভুলে সামনের সিরিজগুলো নিয়েই ভাবতে হবে। ব্যর্থতা ভুলে এগিয়ে যেতে হবে।
×