ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সবার ওপরে সেরেনা

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

সবার ওপরে সেরেনা

গোলাম মোস্তফা ॥ আরও একবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন সেরেনা উইলিয়ামস। শনিবার মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভেনাস উইলিয়ামসকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েই ক্যারিয়ারের ২৩তম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। সেইসঙ্গে ছাড়িয়ে গেলেন টেনিসের উন্মুক্তযুগে সর্বোচ্চ ২২ গ্র্যান্ডসøামজয়ী জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের রেকর্ডকেও। মহিলা এককে তার সামনে এখন কেবল মার্গারেট কোর্ট। টেনিসের সর্বকালের ইতিহাসে এই অস্ট্রেলিয়ান তারকা ২৪টি গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন। স্টেফিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দিন হারানো বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও ফিরে পেয়েছেন সেরেনা উইলিয়ামস। সেরেনা উইলিয়ামস স্টেফিকে ছাড়িয়ে যাবেন তা অনেক টেনিসবোদ্ধাই হিসাব করে রেখেছিলেন। কারণ তার অসাধারণ পারফর্মেন্স, দুর্দান্ত গতি আর শক্তি। এই বয়সেও যে প্রতিপক্ষের ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম সেরেনা! তবে এই পথচলাটা তার খুব সহজ ছিল না! কিন্তু সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্রীড়ার ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। অবিশ্বাস্যই মনে হতে পারে! মাত্র ১৭ বছর বয়সেই গ্র্যান্ডসøামে ঝড় তুলেছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস। ১৯৯৯ সালে ইউএস ওপেনের ফাইনালে। সেই সময়ের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মার্টিনা হিঙ্গিসকে হারিয়ে আফ্রিকান-আমেরিকার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অসাধারণ সব পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে দারুণ এক সাফল্যম-িত গল্পের রচনা করেছেন তিনি। যার পটভূমিতে রয়েছে সুইস কিংবদন্তি মার্টিনা হিঙ্গিস ছাড়াও লিন্ডসে ডেভেনপোর্ট, মারিয়া শারাপোভা এবং জাস্টিন হেনিনের মতো তারকাদেরও হেসে-খেলে হারানোর চিত্রনাট্যও। দারুণ রোমাঞ্চকর এই পেশাদার ক্যারিয়ারে ভেনাস উইলিয়ামসের বিপক্ষে জয়ের অসাধারণ কিছু ম্যাচ তো রয়েছেই। গত বছর উইম্বলডন জিতেই স্টেফি গ্রাফের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস। তার পরই টেনিস কোর্টের নতুন রানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন স্টেফি গ্রাফেরই উত্তরসূরি এ্যাঞ্জেলিক কারবার। ইউএস ওপেন জিতে সেরেনার কাছ থেকে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানও দখল করে নেন তিনি। গত মৌসুমে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়েই ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পাওয়া কারবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এবারও ছিলেন হট ফেবারিট। কিন্তু শুরুর আগের সেই তকমা আর দেখার সুযোগ পায়নি নতুন বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শুরুতেই ছিটকে পড়েন কারবার। কিন্তু অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ সেরেনা ধীরে ধীরে হেঁটে চলেন স্বপ্নের ফাইনালে। যে পথে বেলিন্ডা বেনচিচ, লুসি সাফারোভা, নিকোল গিবস, বারবোরা স্ট্রাইকোভা, জোহানা কন্টা, মিরজার্না বারোনি এবং সর্বশেষ ভেনাস উইলিয়ামসকে হারান তিনি। মাত্র দেড় ঘণ্টা লড়াই করেই বড় বোনের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে আনেন সেরেনা। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন সেরেনা। দীর্ঘ ১৪ বছর পর টুর্নামেন্টের সপ্তম-স্বর্গে উঠলেন আমেরিকান টেনিসের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। সেইসঙ্গে নিজের গড়া উইম্বলডনে সর্বোচ্চ সাত গ্র্যান্ডসøাম জয়ের রেকর্ডেই ভাগ বসালেন তিনি। বাকি নয় গ্র্যান্ডসøামের ছয়টি ইউএস ওপেন এবং তিনটি ফ্রেঞ্চ ওপেনে। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে এসে ওপেনযুগের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডসøামজয়ী সেরেনাকে প্রথমে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভেনাস নিজেই। সেরেনার চেয়ে ১৪ মাসের বড় ভেনাস উইলিয়ামস বলেন, ‘২৩তম গ্র্যান্ডসøামজয়ী সেরেনাকে অভিনন্দন।’ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে নতুন বছর শুরু করা সেরেনাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন অনেক কিংবদন্তিই। তবে সেরেনা কৃতজ্ঞ এমন এক বড় বোনকে পেয়ে। তাকে ছাড়া কোনভাবেই এই সংখ্যাটাকে ২৩ করা সম্ভব ছিল না। তাকে ছাড়া আমার এই অবস্থানে আসাটাও ছিল অসম্ভব। শুধু তার জন্যই আজ আমি এখানে আসতে পেরেছি। সেই আমার অনুপ্রেরণা। আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’ সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাতটি মেজর গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ভেনাস। যেখানেই গেছেন তার একইসঙ্গে ছিলেন। একত্রে অনুশীলন করে নিজেদেরকে গড়ে তুলেছেন। এবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ক্যারিয়ারের অষ্টম গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেতেন ভেনাস। কিন্তু তা আর হতে দিলেন না সেরেনা। বরং গ্র্যান্ডসøামের ফাইনালে মুখোমুখি লড়াইয়ে আরও এগিয়ে গেলেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান তারকা। তবে ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম কোন গ্র্যান্ডসøামের ফাইনাল খেলা এই দুই টেনিস কিংবদন্তিকে কী আরও কোন মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে দেখা যাবে? টেনিসপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।
×