অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অলস টাকাসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ রবিবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গবর্নর ফজলে কবির। নয়া মুদ্রানীতিতে বেসরকারী বিনিয়োগে জোর দিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্পষ্ট ঘোষণা থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের সময় ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয় ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। নবেম্বর পর্যন্ত বেসরকারী খাতে প্রকৃত ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সে মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। নতুন মুদ্রানীতিতেও ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ বা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতির মতোই দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিও সংকুলানমুখী থাকবে বলে জানা গেছে। নতুন মুদ্রানীতির বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে মুদ্রানীতির বিষয়ে তাদের পরামর্শও চাওয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মুদ্রানীতিতে সংযোজন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বর্তমানে খাতটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, নবেম্ব^র শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। সে হিসাবে নবেম্বরে ব্যাংকিং খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা ছিল অতিরিক্ত তারল্য। চলতি অর্থবছরে সরকারের জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। জাতীয় প্রবৃদ্ধির এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে। ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে নেমে এলেও বিনিয়োগ মন্দায় চাহিদা নেই ব্যাংকের ঋণের। এ কারণে বেড়ে গেছে ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ। পাঁচ বছর আগেও দেশে বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশের ওপরে। অথচ চলতি অর্থবছরের নবেম্বর শেষে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, অতিরিক্ত তারল্য এখন ব্যাংক খাতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে নতুন মুদ্রানীতিতে গুণগত ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সভায় মুদ্রানীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে গুণগত ঋণ প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা এ প্রসঙ্গে বলেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের যাবতীয় কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি গবর্নর মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি প্রায় সফল হয়েছে। এ সময়ে দেশে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম ছিল।