ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক

দেশে মডেল ফার্মেসি চালু সরকারের জনবান্ধব ওষুধনীতির সুফল

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

দেশে মডেল ফার্মেসি চালু সরকারের জনবান্ধব ওষুধনীতির সুফল

(শেষাংশ) তাদেরকে আমরা বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের পক্ষ থেকে গত বছর আমন্ত্রণ জানাই এদেশে মডেল ফার্মেসি চালুর বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করতে। ওষুধ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও মডেল ফার্মেসি প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করতে সম্মত হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত এই প্রকল্পটির নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ ফার্মেসি মডেল ইনিসিয়েটিভ (বিপিএমআই)’, যা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল এবং ম্যানেজমেন্ট সাইন্স ফর হেলথের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হবে। বর্তমান সরকারের মডেল ফার্মেসি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগে ওষুধের দুই ধরনের দোকান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম ধরনের নাম হবে ‘ফার্মেসি’ এবং দ্বিতীয়টির ‘মেডিসিন স্টোর’। কোন দোকানে পূর্ণকালীন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট না থাকলে ‘ফার্মেসি’ নাম ব্যবহার করা যাবে না। তবে ‘মেডিসিন স্টোর’গুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট না থাকলেও চলবে। এগুলোতে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট বা ফার্মেসি টেকনিশিয়ানরা দোকান পরিচালনা করবে। গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট পরিচালিত দোকান অর্থাৎ ফার্মেসিগুলোতে আলাদা একটি লোগো থাকবে, যাতে জনগণ সহজেই এসব দোকান চিনে নিতে পারে। গত বছরের শেষের সপ্তাহে এসব দোকান পাইলট ভিত্তিতে পরিচালনা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর পান্থপথ, কলাবাগান, বনানী ও গুলশানে মোট সাতটি মডেল ফার্মেসি চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এগুলো উদ্বোধন করেছেন। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এখনকার পর্যায় হলো ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে এবং পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে সারাদেশে এসব দোকান ছড়িয়ে দেয়া হবে। সিলেট মহানগরীতে মডেল ফার্মেসি চালুর তারিখ নির্ধারিত রয়েছে বৃহস্পতিবার ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখ। ইতোমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল কর্তৃক গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের বাছাই করা হচ্ছে এবং গত ২৬ নবেম্বর ২০১৬ থেকে ৩০ জন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের একেকটি ব্যাচকে ফার্মেসি কাউন্সিল ও এমএসএইচ কর্তৃক প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে, যা চলমান থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘ফার্মেসি’ নামের ওষুধের দোকান কমপক্ষে ৩০০ বর্গফুট আয়তনের হতে হবে। তবে ‘মেডিসিন স্টোর’ কমপক্ষে ১২০ বর্গফুটের হতে পারবে। তবে কোন ধরনের দোকানেই ডাক্তারের চেম্বার থাকতে পারবে না। ফার্মেসিতে বিভিন্ন পর্যায়ের তাপ-সংবেদনশীল ওষুধগুলোর সঠিক সংরক্ষণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটর অবশ্যই থাকতে হবে। তবে মেডিসিন স্টোরের বেলায় এই শর্ত শিথিলযোগ্য। এছাড়া ফার্মেসিতে ওটিসি ড্রাগ এবং প্রেসক্রিপশন ড্রাগ উভয়ই বিক্রি করতে পারবে। তবে মেডিসিন স্টোরগুলো ওটিসি ড্রাগের সাথে সীমিত সংখ্যক প্রেসক্রিপশন ড্রাগ বিক্রি করতে পারবে, যেগুলো সরকার নির্ধারিত অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া মেডিক্যাল সাপ্লাইস, মেডিক্যাল ডিভাইসেস, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সামগ্রী ইত্যাদি উভয় দোকানই বিক্রি করতে পারবে। এভাবে উভয় ধরনের দোকানের জন্য বেশ কিছু নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, যা অনুসরণ করে কোন মেডিক্যাল স্টোর নিজেকে ফার্মেসিতে উন্নীত করতে পারবে। বর্তমানের দোকানগুলোও সব শর্ত পূরণ করে মেডিক্যাল স্টোরে রূপান্তরিত হতে পারবে। সরকার কর্তৃক সারাদেশে মডেল ফার্মেসি চালু হলে দেশের মানুষ ওষুধের ক্ষেত্রে অনেক প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবে। যেমন এই মডেল ফার্মেসিতে কোন নিম্নমানের বা নকল-ভেজাল ওষুধ বিক্রি হবে না। তেমনি কোন মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা চোরাচালানকৃত ওষুধও বিক্রি হবে না। ওষুধের প্যাকেটে কোম্পানির মুদ্রিত দামের চাইতে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি হবে না। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধ হওয়ার কারণে নেশার ওষুধও কারও পক্ষে কেনা সম্ভব হবে না। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত এই মডেল ফার্মেসির উদ্যোগটিকে নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সবার সমর্থন করা উচিত। আসুন, আমরা জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬-এর অংশ এই মডেল ফার্মেসিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করি এবং ওষুধ কেনার সময় ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে ওষুধের নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যও বুঝে আসি। ১৯৮৬ সালের মতো মডেল ফার্মেসির উদ্যোগটি এবার যেন কোন মহলের চক্রান্তে ভেস্তে না যায়। লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগ; সাবেক চেয়ারম্যান, ফার্মেসি বিভাগ; সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আহ্বায়ক, জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬ প্রণয়ন উপ-কমিটি [email protected]
×