ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্যহীন হোক নগর

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

বর্জ্যহীন হোক নগর

বর্জ্য নিয়ে টানা-হেঁচড়া আর যা-ই হোক স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এমনকি পরিবেশ দূষণকে আরও সক্রিয় মাত্রায় বাড়িয়ে তোলে এই বর্জ্য। বর্জ্যরে সঙ্গে ব্রজ্যে উচ্চারণগত সাদৃশ্য যতই নিকটতর হোক, দুটিই মানুষের জন্য সুখপ্রদ নয়। বর্জ্য মানেই আবর্জনার স্তূপ। আর সেই স্তূপের ভেতর লুক্কায়িত থাকে নানা রোগের জীবাণু। থাকে দুর্গন্ধ বিস্তারের নানা উপাদান। বাতাস বিষাক্ত হয়ে ওঠে বর্জ্যঘ্রাণে। মানুষের নাসারন্ধ্র হয়ে সেই দুর্গন্ধ পৌঁছে যায় মস্তিষ্কে। মানবদেহ আক্রান্ত হতে বাধ্য অসুখ-বিসুখে। খোদ ঢাকা শহরে, এমনকি সারাদেশে প্রতিদিন টনে টনে বর্জ্য জমে। সেইসব বর্জ্য গড়িয়ে খাল-বিল-নদীতেও মিশে যায়, আর দূষণে সয়লাব হয় পানি। বিষাক্ত হওয়ার সম্ভাবনাই থাকে যার। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পায় উদ্ভাবনী ক্ষমতায়। তারা বর্জ্যকে পরিত্যক্ত করেনি। বরং বর্জ্যকে রূপান্তর করে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য উপকরণে পরিণত করেছে। তারা দূষণমুক্ত উপাদানে বর্জ্যকে পরিণত করে আসছে অনেকদিন ধরেই। বাংলাদেশ সেই পথ অনুসরণ করে না। বর্জ্যরে পাহাড় গড়ে মহানগর, নগর, শহরজুড়ে। জনজীবন যেখানে পায় না প্রাধান্য। বর্জ্য থেকে বিদ্যুত, সার উৎপাদন প্রক্রিয়াটি বাঙালীর মস্তিষ্কে তোলপাড় তোলে না। অথচ বিশ্বে একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি এসব। দেড় কোটি মানুষের ঢাকা মহানগরী এবং অর্ধকোটির বেশি অধ্যুষিত চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন বারো হাজার মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য তৈরি হয়। বলা যায়, দুটি মহানগরীই বর্জ্যরে সঙ্গে বসবাস করে আসছে। বর্জ্যময় নাগরিক বাতাসজুড়ে কেবলই বিষ ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু এ বিষে হয় না বিষক্ষয়। বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করার পরিকল্পনার কথা শুনে আসছে নগরবাসী বহুদিন ধরেই। বছর চারেক আগে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প নিয়ে বেশ লম্ফঝম্প শুরু হয়। বিদ্যুত বিভাগ বলেছে, উৎপাদিত বিদ্যুত পিডিবি কিনে নেবে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ চায় বর্জ্য চুল্লিতে পুড়িয়ে ছাই উৎপাদন করে তা সার হিসেবে ব্যবহার করতে। বর্জ্য ভস্মীকরণের বিপরীতে অবস্থান বিদ্যুত বিভাগের। তাদের মতে প্রতি এক মেগাওয়াট বিদ্যুত প্ল্যান্ট চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় চল্লিশ টন বর্জ্য। এ হিসাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বর্জ্য দিয়ে তিন শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। এর বাইরে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরের বর্জ্য দিয়ে স্থানীয়ভাবে দশ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হতে পারে। বিদ্যুত বিভাগ সিটি কর্পোরেশনকে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মেয়ররা তেমন আগ্রহ দেখাননি। বরং এখন তারা বর্জ্য পুড়িয়ে ছাই তৈরিতে আগ্রহী। হয়ত তারা ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো মানিক রতন’ নামক বাক্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়েছে। তাই এক মেয়র চীন যাবেন ছাই উৎপাদন পরিদর্শনে। এতে হয়ত সুফল আসবে। বিদ্যুত উৎপাদন হবে, নাকি ছাই তৈরি হবে- এ নিয়ে টানা-হেঁচড়া চলছে। চলবে বলে মনে হয়। কিন্তু এই বর্জ্যে যে নাগরিক জীবন ওষ্ঠাগতপ্রায়। তাই দ্রুত বর্জ্যমুক্ত, জঞ্জালমুক্ত মহানগর গড়ার জন্য তৎপর হওয়ার মধ্যে নিহিত রয়েছে তিলোত্তমা নগরীর স্বপ্ন পূরণ। নগরবাসী এই ভানুমতির খেলের প্রতি তিতিবিরক্ত। তারা চায় তাদের শহর হবে পরিচ্ছন্ন, আবর্জনামুক্ত, বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণের শহর। তা যেন না হয় সুদূর পরাহত।
×