ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রয়েছে অর্থ সঙ্কট, চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

অর্ধেক জনবলে চলছে খুমেক হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

অর্ধেক জনবলে চলছে খুমেক হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল। প্রায় ৯ বছর আগে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়নি। অর্ধেক জনবল দিয়েই চলছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ এ হাসপাতালটি। এখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৫০ রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরে আসে দৈনিক সহস্রাধিক রোগী। এত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ২৫০ শয্যার অনুকূলে থাকা চিকিৎসক-সেবিকাসহ অন্যরা। এ ছাড়া হাসপাতালটিতে অর্থ সঙ্কট রয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সমস্যা সমাধান ও প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার আবেদন জানালেও অদ্যাবধি এর কোন সুরাহা হয়নি। ফলে খুলনা জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই হাসপাতালে আসা গরিব ও সাধারণ পরিবারের শত শত রোগী কাক্সিক্ষত সেবা লাভে বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে নগরীর ছোট বয়রা এলাকায় ‘খুলনা হাসপাতাল’ নামে যাত্রা শুরু হয়েছিল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপালের। প্রথমে মাত্র ৭৫ বেড নিয়ে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু। পরে পর্যায়ক্রমে ২৫০ বেডে উন্নীত করা হয় এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভের পর এটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে পরিচালিত হচ্ছে। খুলনাসহ এতদাঞ্চলের মানুষের দাবি ও দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা থেকে ৫০০ বেডে উন্নীত করা হয়। কিন্তু ৫০০ বেডের জন্য যে জনবল দরকার অদ্যাবধি তা নিয়োগ দেয়া হয়নি। পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ, সিসিইউ, বার্ন ইউনিটসহ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সঙ্কট রয়েছে এ হাসপাতালে। এখানে ৫০০ বেডের রোগীদের জন্য খাবার, বিছানাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকলেও ৫০০ শয্যার অতিরিক্ত ভর্তি রোগীরা বেড পায় না। বারান্দার মেঝেতে বিছানা নিয়ে তাদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়। শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত ভর্তি রোগীদের হাসপাতাল থেকে (পথ্য) খাবার দেয়া সম্ভব হয় না। তবে স্টকে থাকলে ট্যাবলেটসহ যতসামান্য ওষুধ তাদের দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ৫০০ শয্যার খুমেক হাসপাতালে রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ১৬৫০ জন জনবল প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে আছে ২৫০ শয্যার ৩৮২ জনবল। এখানে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ও চিকিৎসক প্রয়োজন ৭১৩ জন, বর্তমানে আছেন ৮১ জন। দ্বিতীয় শ্রেণীর ২৫৬ জনের বিপরীতে আছেন ১৫১ জন, তৃতীয় শ্রেণীর ১৭৮ জনের স্থলে রয়েছেন ৪২ জন। চতুর্থ শ্রেণীর ৫০৩ জন কর্মচারীর জায়গায় ১০৮ জন কর্মরত আছেন। এ ছাড়া হাসপাতালটিতে ১৩০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজ করছেন। সূত্র মতে, ৫০০ শয্যার জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইলটি স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এটির অনুমোদন মিলবে তা কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেন না। সূত্র জানায়, ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির ২৫০ শয্যা রাজস্ব খাতের অধীন এবং বাকি ২৫০ শয্যা উন্নয়ন খাতের আওতায় রয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন খাত থেকে ২৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রাজস্ব খাতের অর্থ দিয়ে উন্নয়ন খাতের ২৫০ শয্যার খরচও চালাতে হচ্ছে। এ জন্য হাসপাতালে অর্থ সংকটও প্রকট হয়েছে। এতে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসাধীন গরিব রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। অনেক রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে অপর্যাপ্ত চিকৎসক-সেবিকাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তথাপিও বিভিন্ন সময়ে রোগীর স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে সেবাদানকারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হচ্ছেন । খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) ডাঃ আনন্দ মোহন সাহা বলেন, একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব সুবিধা থাকা প্রয়োজন, তা এই হাসপাতালে নেই। হাসপাতালটি জনবলসংকটে আছে দীর্ঘদিন। স্বল্প জনবল দিয়ে অধিক মানুষকে সেবা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে অর্থসংকটও রয়েছে। ৫০০ শয্যার জনবল পাওয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে এই সঙ্কট কেটে যাবে এবং হাসপাতালটি এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদামত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×