ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফিট থাকতে নারীরা ভিড় জমাচ্ছেন ফিটনেস ক্লাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

ফিট থাকতে নারীরা ভিড় জমাচ্ছেন ফিটনেস ক্লাবে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ কয়েক বছর আগেও নারীরা শরীরচর্চার দিক দিয়ে পুরুষদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জিমগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর আধিক্যতা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা জিম বা ফিটনেস সেন্টারগুলোতে নারীদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কম বয়সী থেকে শুরু করে বয়স্কÑ অনেক নারী এখন নিয়মিত জিম করছেন সুস্থ থাকার প্রত্যাশায়। রাজধানীর বেশিরভাগ জিমগুলো এখন হয়ে উঠেছে নারীবান্ধব। সেজন্যই দিন দিন নারীর পদচারণা বাড়ছে জিমগুলোতে। অনেক নারী মেদ ঝরাতে ফিটনেস ক্লাবমুখী হলেও অনেকে আবার ফিট থাকতে প্রতিনিয়ত জিমে যাচ্ছেন। ঢাকায় এমন অনেক সেন্টারে পুরুষদের পাশাপাশি একই স্থানে শরীরচর্চা করেন নারীরাও। তবে বেশিরভাগ সেন্টারে নারী ও পুরুষদের অনুশীলনের জন্য আছে আলাদা আলাদা সেকশন। আফিফা আনোয়ার প্রায় ৩ বছর ধরে শরীরচর্চা করছেন। কয়েক বছর আগেও তার ওজন অনেক বেশি ছিল। কিন্তু প্রতিদিন জিম করার কারণে সে তার মেদ ঝরিয়ে স্বাভাবিক ওজন ফিরে পেয়েছে। তবে তার ওজন যেন ভবিষ্যতে বেড়ে না যায় এজন্য তিনি এখনও জিম করছেন। রাজধানীর ফার্মগেটের ‘ফিটনেস ফার্স্ট’ নামক জিমে প্রতিদিন আফিফা অনুশীলন করেন। সরেজমিনে গিয়ে জিমটিতে দেখা গেল, নারী ও পুরুষের শরীরচর্চার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। সেইসঙ্গে নারীদের জন্য নারী প্রশিক্ষকও রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক তপন মাহমুদ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমার ফিটনেস ক্লাবেও নারীদের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে আমার এখানে প্রায় দেড় ’শ নারী প্রতিদিন বিভিন্ন শিফটে জিম করছেন। নারীরা এখানে ঘরোয়া পরিবেশে শরীরচর্চা করতে পারেন। তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে জিম করতে পারে তার সবরকম সুবিধা রয়েছে এখানে। প্রতিটি মানুষেরই সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা উচিত। এজন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই।’ ঢাকার মালিবাগে ‘ফিটনেস বাংলাদেশ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে একইস্থানে নানা ধরনের শারীরিক অনুশীলন করছিলেন বেশ কিছু নারী ও পুরুষ। ট্রেড মিলে দৌড়াচ্ছিলেন শিক্ষার্থী ফাবিহা আমিন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি মোটামুটি সবধরনের উপকরণ ব্যবহারের চেষ্টা করি। ট্রেড মিল, সাইক্লিং প্রতিদিন করতে হয়। মূলত শরীর ফিট রাখতেই জিম করা হয়। তার পাশেই থাকা গৃহবধূ তামান্না হক বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে শরীরচর্চা করলেও এখানকার পরিবেশ ভাল। আমি এখানে সাইক্লিং, কার্ডিও, বিভিন্ন ধরনের ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করি। আমার বাচ্চা হওয়ার পর আমি অনেক মুটিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ মুটিয়ে যাওয়ার কারণে শরীর ভার লাগত, একটু কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে যেতাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে জিমে আসলাম। শরীরচর্চা শুরু করলাম। এখন ওজন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।’ ‘ফিটনেস বাংলাদেশ’ জিমে ফাবিহা ও তামান্নাদের পাশে একই সময় অনুশীলন করছিলেন আরাফাত। মেয়েরা জিম করছে সেইসঙ্গে ছেলেদের পাশাপাশি থেকে জিম করছে এ বিষয়টি ছেলেরা কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা একটি ইতিবাচক বিষয় যে ছেলে-মেয়েরা একসাথে জিম করছে। এখানে অনেক মেয়ে আসছেন। তাদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে। পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে ও মিলেমিশে আমরা এখানে অনুশীলন করি। ’ ফিটনেস বাংলাদেশের মালিক ও এর প্রধান প্রশিক্ষক বলেন, ‘নারী-পুরুষ সবাই সমান। পড়ালেখা বা চাকরি নারী ও পুরুষ একসঙ্গে করতে পারলে একসঙ্গে জিম করতে পারবে না কেন? এই বিষয়টি মাথায় রেখেই উদ্যোগ নিয়েছি নতুন একটি পরিবেশ তৈরি করার। তিনি বলেন, প্রথমে মেয়েরা অনীহা দেখালেও এখন এ প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকেই নারী। আমরা সবসময় তাদের নিরাপত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করি।’ প্রতিদিন তিন শ’র বেশি নানা বয়সী নারী সিদ্ধেশ্বরীর ‘কমব্যাট জিমে’ অনুশীলন নিচ্ছেন বলে জানালেন সেখানকার মহিলা সেকশনের প্রশিক্ষক শম্পা আল মজিদি। তিনি বলেন, ‘ শরীরচর্চার সব উপকরণ এখানে আছে। তিন শ’ নারী প্রতিদিনই আসেন এখানে। ৬৫ বছর বয়স্ক নারীও যেমন আছে তেমনি দশ বছরের মেয়েরাও এখানে এক্সারসাইজ করেন। কমব্যাট জিমেই অনুশীলন করছিলেন তাহমিনা শেখ। তিনি বলেন, ‘দশ বছর ধরে জিম করছি। অনেক মোটা ছিলাম। সিøমিংয়ের জন্য ফ্রি হ্যান্ডসহ নানা কিছু করেছি। ওজন কমার পর ওয়েট লিফটিং করছি।’ তার পাশেই থাকা প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য বলেন, জিম করলে কাজের উদ্দীপনা বাড়ে। এ জন্যই তিনি নিয়মিত জিম করেন বলে জানালেন। মিরপুর ২ নম্বরের ‘নিউ পাওয়ার হাউস’ নামক একটি জিমে গিয়ে দেখা গেল, পাশাপাশি আলাদা হলরুমে নারী ও পুরুষদের শরীরচর্চা চলছে। নারীদের সেকশনে একজন প্রশিক্ষক রয়েছেন। তাকে অনুসরণ করেই উপস্থিত নারীরা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করছেন। এই ফিটনেস প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোঃ ফজলে খোদা বিদ্যুত বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা পুরুষদের চেয়ে কোনদিক দিয়েই পিছিয়ে নেই। আমার এখানে প্রায় ২০০ নারী শরীরচর্চা করছেন। প্রতি বছরে নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা এখানে নারীদের সুবিধার জন্য দুই শিফটে দু’জন নারী প্রশিক্ষক রেখেছি। এছাড়া রিফ্রেশমেন্টের জন্য আমরা প্রতিবছর বনভোজনেরও ব্যবস্থা করি।’ রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে অত্যন্ত বড় পরিসরে শরীরচর্চা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘গোল্ড জিম’। সেখানে এ্যাডোনাইজ ফিটসেন সেন্টারে দুটি আলাদা সেকশনে নারী ও পুরুষদের জন্য রয়েছে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক। নারী সেকশনের প্রশিক্ষক আসফিয়া তাম্মি বলেন, ‘শারীরিক নানা অসুস্থতার নিরাময় পেতেও অনেকে তাদের কাছে আসছেন। ‘ষাটোর্ধদের হরমোনাল, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা সমস্যা থাকে। এগুলো ভাল করতে নানা এক্সারসাইজ করে অনেকে। ওয়েটলিফটিং হাড় শক্ত করে স্ট্যামিনা বাড়ায়, কার্ডিও ভ্যাসকুলার হরমোনে কাজ করে। এছাড়া বেশিরভাগ নারী তাদের ওজন কমাতে ও ফিট থাকার জন্য শরীরচর্চা করতে এখানে আসেন। নারীরা আজ সর্বক্ষেত্রেই সমানভাবে এগিয়ে। বাংলাদেশের নারীরা রান্না করতে ও খেতে যেমন ভালবাসে তারা তাদের শরীর ফিট রাখতেও জানে।’
×