ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু

সাগরঘেঁষা অবহেলিত চরাঞ্চলে বিশেষ ইকোনমিক জোন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

সাগরঘেঁষা অবহেলিত চরাঞ্চলে বিশেষ ইকোনমিক জোন

মেজবাহউদ্দিন মাননু/শংকর লাল দাশ, কলাপাড়া/ গলাচিপা থেকে ॥ পায়রা সমুদ্রবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্থানীয় ভূমি প্রশাসন সর্বোচ্চ দুই হাজার একর জমি বাছাইয়ের কাজ করছে। প্রথম ধাপে দুই শ’ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জনবসতিহীন কিংবা অপেক্ষাকৃত কম মানুষের বসতি এমন চরাঞ্চল বাছাই করা হচ্ছে। এমনকি যেসব চরাঞ্চলে প্রচুর খাস জমি রয়েছে ওইসব চরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। রামনাবাদ মোহনার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সাগরঘেঁষা দুটি চরকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করার পরিকল্পনা রয়েছে। চর তোজাম্মেল ও চর ইমারশনে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সম্ভাব্য পরিকল্পনা চলছে। চর দুটিতে দুই হাজার ৭৭৯ দশমিক ৭১ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানা জমি রয়েছে এক হাজার ৪৯ দশমিক ৬৩ একর। নয়নাভিরাম এ চর দুটিকে প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক জোনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। রাঙ্গাবালীর নয়নাভিরাম দাঁড়ছিড়া নদী বেষ্টিত বড় বাইশদিয়া ইউনিয়নের পাশেই এ চর দুটির অবস্থান। চর দুটি সম্পুর্ণ খাস জমি ছিল। পরবর্তীতে ২০৮ পরিবারকে আবাসন ও খাসজমি বন্দোবস্ত সুবিধার মাধ্যমে বসতি দেয়া হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার এ প্রক্রিয়ায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোক্তারা পায়রা বন্দর কেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে এসেছেন। ইতোমধ্যে পায়রা বন্দরের দুই দিকে নদীর পাড়ঘেঁষে মদিনা গ্রুপ এবং এমএম গ্রুপ জমি কিনে ভরাট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তেল শোধনাগার, ডকইয়ার্ড, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের ব্যবসাকেন্দ্র ছাড়াও গার্মেন্ট শিল্পের প্রসার ঘটাতে এ অঞ্চলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোক্তাদের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রাঙ্গাবালী (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সাদিকুর রহমান জানান, মূলত সরকারের এই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে পায়রা সমুদ্রবন্দর অন্যতম। অবহেলিত এই চরাঞ্চলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সরকারী মহাপরিকল্পনার কাজও শুরু হয়েছে। বসতিহীন যেসব চরাঞ্চল অবহেলিত ছিল, তা কাজে লাগানো হচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ওইসব চরাঞ্চলেও বিদ্যুত প্লান্ট করার পরিকল্পনা চলছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান এমপি জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বহুবার সরকারে থেকে কিংবা বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় দক্ষিণের এই সাগরপারের জনপদে এসেছেন। তিনি শুরু করেন পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ। পাশাপাশি এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা ছাড়াও কুয়াকাটা, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলায় পর্যটন জোন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রাঙ্গাবালীর বড় বাইশদিয়া ইউনিয়নের জাহাজমারার চরে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প স্থাপন এবং শিপইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ ছাড়া এসব চর এলাকায় কোস্টাল ফরেস্ট সৃজনের বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কলাপাড়া কলেজ মাঠের এক বিশাল গণসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কলাপাড়ার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজেরও দ্বিতীয় পর্যায়ের পাইলিং শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণের অবহেলিত এই নদীঘেরা, সাগরঘেঁষা জনপদ এখন পরিণত হয়েছে কর্মচঞ্চল এলাকায়। অবহেলিত চরাঞ্চল ঘিরে চলছে নানা ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রক্রিয়া। গোটা জনপদ পরিণত হচ্ছে আলোকিত জনপদে। আর সেটা হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত।
×