ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষতিগ্রস্ত ৪০ ফ্ল্যাট

চট্টগ্রামে আবাসিক ভবনে রহস্যজনক বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

চট্টগ্রামে আবাসিক ভবনে রহস্যজনক বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের দেওয়ানবাজার এলাকায় শুক্রবার ভোরে একটি আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে একই পরিবারের ৩ সদস্য দগ্ধ হয়েছে। তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিকট শব্দে এ বিস্ফোরণের কারণ সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে দেওয়ানবাজারসংলগ্ন পশ্চিম বাকলিয়ার নিরাপদ হাউজিং সোসাইটির মাদ্রাসা ভবন নামের ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এর প্রভাবে সংলগ্ন আরও দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উড়ে গেছে দরজা জানালা। এমনকি বেলকনির রেলিং ও দেয়াল ধসে পড়ে। এলাকাবাসী জানায়, বিস্ফোরণের শব্দে স্থানীয়দের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দগ্ধ ৩ জনকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারকৃতরা হলেন ছামুদা খাতুন (৭০), তার নাতি আরিফ (২৭) ও নাতনি ইফতি (১৭)। ছামুদা ও ইফতির শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়েছে। আরিফের শরীরের ২৫ ভাগ পুড়ে গেছে বলে চমেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক খায়রুন নেসা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। পশ্চিম বাকলিয়ার নিরাপদ হাউজিং সোসাইটিতে অবস্থিত এ ভবনটির নাম মাদ্রাসা আরাবিয়া খায়রিয়া এতিমখানা। এলাকায় এটি মাদ্রাসা ভবন হিসেবে পরিচিত। তবে সেখানে কোন মাদ্রাসা কিংবা এতিমখানা নেই। এ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে আনোয়ারা উপজেলার পড়ুয়াপাড়া গ্রামে। ভবনটির মালিক মোঃ ছালেহ। তার পুত্র সোহেল ছালেহ অধ্যক্ষ হিসেবে আনোয়ারার প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে থাকেন। ফায়ার সার্ভিস জানায়, ছয়তলা বিশিষ্ট এ ভবনে ৩৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ঘটে বিস্ফোরণ। এ বিস্ফোরণে ওই ফ্ল্যাটের দেয়াল উড়ে যায়। পুরো ভবনের সব ফ্ল্যাটই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৮ ফ্ল্যাটের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ভবন থেকে ছিটকে যাওয়া দেয়ালের টুকরো পাশের দুটি ভবনে আঘাত হানে। তন্মধ্যে একটি ভবনের বেলকনির অংশও ভেঙ্গে পড়ে। পার্শ্ববর্তী দুটি ভবনের ৪/৫ ফ্ল্যাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খসে পড়ে দেয়ালের প্লাস্টার, ভেঙ্গে যায় জানালার কাঁচ। ভবনের তৃতীয় তলায় সপরিবারে বসবাস করতেন প্রবাসী আবদুল মোতালেব। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে লোহাগাড়া উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে যান। ঘরে ছিলেন তার মা এবং দুই সন্তান। এই তিনজনই দগ্ধ হয়েছেন। আনোয়ারার মাদ্রাসা আরবিয়া খায়রিয়া এতিমখানার অধ্যক্ষ সোহেল ছালেহ সাংবাদিকদের জানান, এ ভবনে কোন শিক্ষা কার্যক্রম ছিল না। এটি সম্পূর্ণ আবাসিক ভবন। ভবনের ভাড়া দিয়ে আনোয়ারায় এতিমখানা পরিচালিত হতো। মাদ্রাসা ভবন হিসেবে পরিচিত হওয়ায় বিষয়টি নানাজনে নানাভাবে দেখছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ নামের কারণে ভবনটি সব সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারির মধ্যেও ছিল। সুতরাং অন্যভাবে সন্দেহ করার সুযোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন। ঘটনার খবর শুনে দ্রুত ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যরা। সিআইডি এবং বোমা নিষ্ক্রিয়কারী টিমও তৎপর হয়। তবে সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিস্ফোরণের নেপথ্য কারণ কিংবা কোন ধরনের আলামত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুরো বিষয়টি দেখা হচ্ছে রহস্যজনক হিসেবে। ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, ভবনে কোন গ্যাস সিলিন্ডার ছিল না। কোন ধরনের স্পিøন্টার কিংবা নাশকতার আলামতও মেলেনি। ফলে এখনও পরিষ্কার নয় কি কারণে বিস্ফোরণটি ঘটেছে। তবে তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। যথাÑ বৈদ্যুতিক, রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসর এবং গ্যাসের পাইপলাইন। বিশেষজ্ঞ টিম এ নিয়ে কাজ করছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা বেশ জোরালো। শীতের দিন হওয়ায় রাতে দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। এতে পাইপ লিক হয়ে পুরো ঘর গ্যাসায়িত হয়ে থাকতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটিও জানিয়েছে, ভোরে রান্নাঘরের চুলায় আগুন দেয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবকিছু পরিষ্কার হবে তদন্তে। আর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্ভাব্য সকল কারণই খতিয়ে দেখছে।
×