ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলাভিত্তিক শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

উপজেলাভিত্তিক শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপজেলা ভিত্তিক শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রথমে একটি উপজেলার কোন কোন গ্রামে বিদ্যুত নেই তা বের করা হচ্ছে। এরপর শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় ওইসব গ্রামগুলোতে বিদ্যুত দেয়া হচ্ছে। এজন্য বিদ্যুত বিভাগ বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বলছে এখন আরও ২৫টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই ২৫টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে উদ্বোধন করবেন। এজন্য আরইবি এবং বিদ্যুত বিভাগ শীঘ্রই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। আরইবি সূত্র জানায়, ডিসেম্বর’১৬ মাসে আরও ২৫টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। যা অচিরেই উদ্বোধন করা হবে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চলমান অর্থবছরে ১৪৬টি উপজেলা এবং আগামী অর্থবছরে ৩১৪টি উপজেলা বিদ্যুতায়ন করা হবে। এভাবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরনাগাদ মোট ৪৬০টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন আরইবির গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি ৭৫ লাখ। আগামী জুনে আরও নতুন ২৫ লাখ পরিবারকে বিদ্যুত সংযোগের আওতায় আনা হবে। এতে গ্রাহক সংখ্যা হবে দুই কোটি। অন্য বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির সব এলাকায় বিদ্যুত লাইন রয়েছে। কিন্তু কেবলমাত্র আরইবির নতুন গ্রাহকের জন্য বিদ্যুত লাইন নির্মাণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়া সেরে আরইবিকে সারা দেশের সকল প্রান্তে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। আরইবির উদ্যোগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০ হাজার কিলোমিটার লাইন এবং ৮৪টি উপকেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় ৩০ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হবে। এর মধ্যে দেশের বিদ্যুতখাত ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ২০১৩ সালের নবেম্বরে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর ডিসেম্বরে উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ২৪৫ মেগাওয়াট। গত তিন বছরে আরও প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এরমধ্যে ২০১৪ সালে উৎপাদনে আসে ৬৩৫ মেগাওয়াট, পরের বছর ২০১৫তে উৎপাদনে আসে এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট, আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত উৎপাদনে এসেছে ৯২৭ মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র। এর বেশিরভাগই গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র। গত তিন বছরে উল্লেখযোগ্য সাতটি বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এগুলো হচ্ছে হরিপুর-৪১২ মেগাওয়াট, ভোলা-২২২ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ-৩৬০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ-২২৫ মেগাওয়াট, বিবিয়ানা-৩৩৫ মেগাওয়াট এবং শাহাজিবাজার-২২০ মেগাওয়াট। অন্য কেন্দ্রগুলো তেল চালিত ছোট আকারের বিদ্যুত কেন্দ্র। সরকারের পরিকল্পনায় ২০২১ সাল বলা হলেও আরইবি ২০১৮ সালের মধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ফলে সরকারী কোম্পানিগুলোকে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে। দুটি সরকারের শুরুতে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায় ২০০৯ সালে দেশে মাত্র ২৭ বিদ্যুত কেন্দ্র ছিল। সবগুলো বিদ্যুত কেন্দ্র মিলিয়ে উৎপাদান ক্ষমতা ছিল ওই সময়ে চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। তবে গড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুত উৎপাদন হতো। বিদ্যুতখাতে এক নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার গঠন করে। ওই সময়ে সারাদেশে গড়ে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হতো। খোদ রাজধানীতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখতে হতো। সরকার গঠনের পরই বিদ্যুতখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় ওই সরকার। শুরু থেকেই অনেকটা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করা হয়। সমালোচনা হলেও বিদ্যুতখাতের সার্থকতা সমালোচকদের মুখেই হাসি ফুটিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের নেয়া কর্মপরিকল্পনায় দেখা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং এক লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন ও প্রয়োজনীয় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও ক্ষমতাবর্ধন করা হবে। এজন্য সরকারের ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংস্থান করতে হবে। অতীতে বিদ্যুতের প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতা সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। দাতা সংস্থা বছরের পর বছর ঘুরিয়ে প্রকল্প বাতিল করত। এখন সেই পরিস্থিতি থেকে সরে এসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অনেক ব্যাংকই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে সরকারের কাছে আসছে। সরকার বলছে এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন কোন বড় সমস্যা নয়।
×