ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর মাওয়াপ্রান্ত ফের পাইল স্থাপনে প্রস্তুত

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

পদ্মা সেতুর মাওয়াপ্রান্ত  ফের পাইল স্থাপনে  প্রস্তুত

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত এখন পাইল স্থাপনের জন্য প্রস্তুত। তাই ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে আবার পাইল ড্রাইভ। সে কারণে ভারি ভারি যন্ত্রপাতির সমাবেশ ঘটেছে মাওয়া প্রান্তে। এর আগে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে তিনটি করে পাইল স্থাপনের পর বর্ষার প্রবল স্রোতের কারণে দীর্ঘদিন মাওয়া প্রান্তে পাইল বসানো বন্ধ ছিল। শুস্ক মৌসুম শুরু হলেও এপারে পাইল স্থপান শুরু হয়নি। তবে ৫ নম্বর পিলারে পাইল স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর গুরুত্বপূর্ণ এই কাজ। এখন মাওয়া ও জাজিরা দু’প্রান্ত ধরেই পাইল স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার জার্মানি হ্যামারটি মাওয়া প্রান্তে পাইল ড্রাইভ করবে। নতুন আসা জার্মানি দুই হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামার কাজ করবে জাজিরা প্রান্তে। এদিকে গত এক সপ্তাহে পদ্মায় আরও তিনটি পাইল স্থাপন হয়েছে। এ নিয়ে পদ্মায় পাইল স্থাপন হলো ৪৩টি। এখন হরদম পাইল বসানো এবং পিলার তৈরির কাজ নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের পর তৃতীয় পিলার হিসেবে ৩৯ নম্বর পিলারে ৬টি করে পাইল স্থাপন হয়েছে। এখন এ পিলার তিনটিকে পরিপূর্ণ করার কাজ চলছে। তিনটি পিলার সম্পন্ন হওয়ার পরই দুটি স্প্যান (১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচার) বসিয়ে দেয়া হবে। তবে প্রথম বসানো হবে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে। তাই এ পিলার দুটির কাজ সম্পন্ন করতে চূড়ান্ত ব্যস্ততা চলছে। সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মা সেতুর কাজ নদীর দু’প্রান্তসহ পুরো প্রকল্প এলাকায় বেশ ব্যস্ততা। দু’প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়ক ও টোল প্লাজা প্রায় সম্পন্ন। তাই প্রকল্প এলকার চেহারা আরও পাল্টে গেছে। তবে এখন মূল পদ্মা সেতুর কাজসহ চলছে নদী শাসনের কাজও। মাওয়ার কুমারভোগ ওয়ার্কশপে চলছে পাইলের টিউব তৈরির কাজ। পদ্মা সেতুর জন্য ২৪০টি পাইল টিউব প্রয়োজন। এ পর্যন্ত ১৮৫টি টিউব তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহার হয়েছে ৪০টি। আর বাকি টিউব পদ্মায় সারি সারি ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। এখন টিউব তৈরির পাশাপাশি এগুলো দ্রুত স্থাপনের দিকে মনোযোগ বাড়ানো হচ্ছে বলে প্রকৌশলীরা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে জানান। এই ওয়ার্কশপে একই সঙ্গে চলছে স্প্যান ফিটিংয়ের কাজ। এ পর্যন্ত চীনে তৈরি চারটি স্প্যান খ-াকারে এসেছে দেশে। এর মধ্যে প্রথমটি ফিটিং করে লোড টেস্ট করে ব্যবহার উপযোগী করে রাখা হয়েছে। আর বাকিগুলো এখন ফিটিংয়ের কাজ চলছে। দ্বিতীয় স্প্যান ফিটিং শীঘ্রই সম্পন্ন হবে বলে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের কর্মরত প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। এদিকে, চীনে বাকি স্প্যাগুলো তৈরি হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে তা সমুদ্রপথে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। নির্মাণযজ্ঞের ছাপ এখন চারদিকে। জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে (সংযোগ সেতু) এখন পর্যন্ত ৪৬টি পাইল স্থাপন হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়ক খুলে দেয়া এবং ফেরি রুট কাওড়াকান্দি থেকে কাঁঠালবাড়ি সরিয়ে আনার পর শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ফেরি রুটে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। ফেরির জন্য যানবাহন অপেক্ষায় থাকার দৃশ্য ছিল সব সময়ের চিত্র। আর যানজট চিত্র নিত্যদিনের। কিন্তু এখন এসব বিড়ম্বনার বালাই নেই বললেই চলে। উল্টো যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় থাকছে ফেরিগুলো। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জনকণ্ঠকে বলেন, কাজের কারণে এখানে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ফেরিঘাটের এ ইতিবাচক পরিবর্তনটি আমাকে বিস্মিত করেছে। পদ্মা সেতু চালুর আগেই তাই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাসহ এ পথে চলাচলকারী মানুষ সুফল পাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির এজিএম খন্দকার শাহ নেওয়াজ খালেদ শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, কাঁঠালবাড়ি প্রান্তে এখন ফেরিঘাট চারটি। তবে শিমুলিয়া প্রান্তে এখন ঘাট তিনটি। আরও একটি নতুন ঘাট স্থাপন হলে যানবাহন পারাপার আরও সহজ হবে। জনাব খালেদ জানান, পারাপারের সময় আধা ঘণ্টা হ্রাস পাওয়ায় এবং সহজ পারাপারের কারণে এখন প্রতিদিন গড়ে ৭শ’ যান বেশি পারাপার হচ্ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার ৭শ’ যান পারাপার হচ্ছে। পুরনো ঘাটে গড়ে দুই হাজার যান পারাপার হতো। পদ্মা সেতু ঘিরে এখনই নানা রকম সুফল ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। দিন দিন পর্যটক বাড়ছে এই পদ্মায়। আর পদ্মার চরগুলোও যেন সেজেছে নতুন সাজে। মাঘের শীতের নানা রকমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে প্রকল্প এলাকার চারদিকে। পদ্মার রুপালি ইলিশের পাশাপাশি চরের সবজি বিপ্লবের সমারোহের মাঝেই জেগে উঠছে পদ্মা সেতু, যা বাঙালীর অহঙ্কারের একটি অধ্যায়। সে কারণে ছুটে আসছে নানা এলাকার মানুষ।
×