ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেনাকাটায় ৩০ হাজার মার্কেটার, সক্রিয় ১০ হাজার কর্মী;###;মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হাতছানি, অনেকের আয় ৩ লাখ টাকার বেশি

সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ওবায়েদুল ইসলাম রাব্বি একজন সফল এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) কাজে বেশ বিজ্ঞ তিনি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স সাইট এ্যামাজনের হয়ে কাজ করছেন দুই বছর ধরে। নিজের নিশ সাইটে এ্যামাজনের কোন একটি পণ্যের এ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করে দেয়াই তার মূল কাজ। এতে করে তার সাইট হয়ে যারা এ্যামাজনের সাইটে ব্রাউজ করছেন, ওই লিঙ্ক হয়ে ঢুঁ দিচ্ছেন এ্যামাজনে, কেনাবেচা করছেন নতুন কোন পণ্য, তা থেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পাচ্ছেন রাব্বি। আর অনলাইনে এই কাজের নামই এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে উন্নত ধাপের এই কাজ করে রাব্বির মাসিক আয় প্রায় ৩ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ৪০ হাজার। একইভাবে স্পার্ক ডাটা টেক লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাজু আহমেদ তোহাও একজন সফল এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। খাতটিতে যুক্ত হয়ে বর্তমানে তার আয় প্রায় ৪ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় ৩ লাখ ২০ হাজার। আর তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা আল-আমিন কবির এই খাতে যুক্ত হয়ে প্রথম বছরে আয় করেছিলেন প্রায় ১ লাখ ডলার! শুধু তাই নয়, একই কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের একেকটি ওয়েবসাইট বিক্রি করেই ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন। জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে দেশ অর্জন করছে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। একই সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অজস্র তরুণের। বর্তমানে খাতটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৩০ হাজার কর্মী, তবে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন ১০ হাজার। যাদের অধিকাংশই ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিলিয়ন ডলারের এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং দেশে এক অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। দেশের মার্কেটাররা এই খাতে যুক্ত হয়ে তথ্য প্রযুক্তির ফ্রিল্যান্সিং জগতে সূচনা করেছে এক নতুন দিগন্তের। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সভাপতি ও বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ধারণাটি বেশ নতুন। তবে বেশ কিছু তরুণ এই কাজটি ভালভাবে রপ্ত করতে পেরেছে। তারা মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। এর ব্যাপ্তি বিশ্বজুড়ে, সে তুলনায় আমাদের দেশে এটি দ্রুত প্রসারিত হয়নি। ভালভাবে কাজ করা গেলে, এ খাত থেকে আরও অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কথা হলো এই খাতে কাজ করা বেশ কয়েকজন মার্কেটারের সঙ্গে। তরুণ তথ্য প্রযুক্তি আল-আমিন কবির তাদের একজন। মার্কেটের নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। সফল তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। কবির একজন সফল এ্যাফিলিয়েট মার্কেটারও। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, অনলাইনে আরেকজনের পণ্য কমিশনের মাধ্যমে বিক্রি করাই এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অন্য যে কোন পেশার চেয়ে এই পেশায় আয় বেশি। আগে যারা ফ্রিল্যান্সিং করতাম, তারা মূলত অন্যের হয়ে কাজ করতাম। এখন এই কাজটি আমরা নিজেরা সরাসরি করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা খুব দক্ষ তারা নিজেরা তাদের একেকটি ওয়েবসাইট ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিক্রি করেন। জানা গেছে, কাজ শুরুর প্রথম বছরে আল-আমিন কবির আয় করেছিলেন প্রায় ১ হাজার ডলার! তবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে প্রভাব রাখায় বর্তমানের আয় সম্পর্কে তথ্য জানাতে নারাজ তিনি। রাজু আহমেদ তোহাও একজন সফল এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। তিনি স্পার্ক ডাটা টেক লিমিটেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তার আয় প্রায় ৪ হাজার ডলার। জনকণ্ঠকে তিনি জানান, প্রায় ৩ বছর ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। ১ বছর আগে গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান। পূর্বের ২ বছর কাজ করতেন অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে। তোহা জনকণ্ঠকে বলেন, এসিও ছাড়া এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আগে এসিও’র কাজ জানতে হবে। কম্পিউটার সায়েন্সে শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া তোহা আরও বলেন, ‘এই কাজে একজন আমেরিকান যে সুযোগ পান, দেশের মানুষও একই সুবিধা পাচ্ছে। কাজের জন্য প্রয়োজন কেবল উচ্চগতির ইন্টারনেট।’ তার তথ্যমতে, ফেসবুকে আমাজান এ্যাফিলিয়েট বাংলাদেশ গ্রুপে প্রায় ২০ হাজার সদস্য রয়েছে। যার মধ্যে অন্তত ১০ হাজার সদস্য সক্রিয়ভাবে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন। মাহবুব ওসমানী। বাইক কোডের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট। একইসঙ্গে সফল এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। এই পেশায় যুক্ত রয়েছেন ৩ বছর ধরে। বর্তমানে তার আয় প্রায় ২ হাজার ডলার। জনকণ্ঠকে জানালেন, অনলাইনে অন্যের পণ্য বা সার্ভিসকে কমিশনের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়ার প্রক্রিয়াই এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। বতর্মানে তিনি এ্যামাজন ও ক্লিক ব্যাংকের হয়ে কাজ করছেন। এই সেক্টরের ভবিষ্যত প্রসঙ্গে জানালেন, এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ খুবই সম্ভাবনাময়। এটি বিলিয়ন ডলারের মার্কেট। তবে এখানে কাজ করতে হলে খুবই অভিজ্ঞ হতে হবে। ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কেউ যদি ইংরেজিতে পারদর্শী হয় এবং কাজ করার ধৈর্য্য থাকে সেই ব্যক্তির সফলতা পেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে দীর্ঘ কথা হয় ওবায়েদুল ইসলাম রাব্বির সঙ্গে। এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি শিক্ষকতা করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (ডিআইপিটিআই)। ফলে তার হাত ধরে নতুনরাও আসছে এই পেশায়। রাব্বির মতে, অনলাইনে কোন কোম্পানির পণ্য মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি করে কমিশন পাওয়ার প্রক্রিয়াই এ্যফিলিয়েট মার্কেটিং। রাব্বি জনকণ্ঠকে বলেন, এই পেশার সঙ্গে আমি ২ বছর ধরে জড়িত। ২০১০ সাল থেকে এসইও’র কাজ করতাম। নতুন কাউকে এ্যামাজনে কাজ করতে হলে প্রথমেই তাকে এসইও’র কাজে দক্ষ হতে হবে। আমি এসইও’তে বেশ দক্ষ ছিলাম। যেহেতু আগে থেকে এই কাজ জানা ছিল তাই আমার বেশি সময় লাগেনি। ২ মাসেই সমস্ত কাজ রপ্ত করতে পেরেছি। যদি নতুন কেউ এই খাতে আসে, এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বুঝতে তার সর্বোচ্চ ১ মাস লাগবে। তবে উপার্জন করতে সর্বোচ্চ ৬ মাস লাগতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হবে, বেশি বেশি আর্টিকেল পড়তে হবে; একই সঙ্গে পড়তে হবে এ্যাফিলিয়েট সম্পর্কিত ব্লগ। ধীরে ধীরে এসইও’তে দক্ষ হয়ে উঠতে পারলে, তবেই সে সফল হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি বিশাল খাত। বিলিয়ন ডলারের মার্কেট। এখানে নতুন যারা আসবে তাদের কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। এসইও, সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, গ্রাফিক্স, ওয়েভ ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত ধারণা, কন্টেন্ট রাইট করার মতো দক্ষতা বা আর্টিকেল লেখার মতো কাজ জানতে হবে। তবেই সে সফল হবে। যদি এর কোন একটি কাজ কেউ নাও জানে তাতেও সে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে না জানা কাজটি অন্য কাউকে দিয়ে আউট সোর্সিং করিয়ে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই কাজের জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট ও নিশ ওয়েবসাইট লাগবে। কাজ করার ক্ষেত্রে থাকতে হবে ধৈর্য্য এবং হতে হবে পরিশ্রমী। প্রথম ৬ মাসে কোনক্রমেই হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ কোন কোন ক্ষেত্রে ৬ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা প্রয়োজন আছে কি-না এমন প্রশ্নে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার রাব্বি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। তবে তাদের করণীয় একটিই। আরও উচ্চগতির ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের স্পিড বৃদ্ধি করতে হবে, তবেই কাজ করা আরও সহজ হবে। তিনি জানালেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ে টাকা ওঠানোর মাধ্যম প্যাপল হলেও এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের টাকা আসার মাধ্যম পেওনিয়ার, যা সরকার অনুমোদিত ও বৈধ। এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ॥ এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার ওবায়েদুল ইসলাম রাব্বির মতে, অনলাইনে কোন কোম্পানির পণ্য মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি করে কমিশন পাওয়ার প্রক্রিয়াই এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে উন্নত ধাপ। মাহবুব ওসমানীর মতে, অনলাইনে অন্যের পণ্য বা সার্ভিসকে কমিশনের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়ার প্রক্রিয়াই এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। রাজু আহমেদ তোহার মতে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) ছাড়া এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা অসম্ভব। অর্থাৎ এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে আগে এসিও’র কাজ জানতে হবে। আরও ব্যাখ্যা করে বললে এভাবে বলা যায়, কোন একটি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে অন্য আরেকটি ওয়েবসাইটে পণ্যের এ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করে দেয়। ওই লিঙ্ক হয়ে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে পণ্যটি ক্রয় করলে লিঙ্ক যুক্ত করা ব্যক্তিটি অর্থাৎ এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পেয়ে থাকেন। আর এই প্রক্রিয়াকে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। যেহেতু বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এ্যামাজন এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং তাই এ্যামাজন এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এভাবে বলা যায়, নিজের নিশ সাইটে এ্যামাজনের কোন একটি পণ্যের এ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করে পণ্যটির ক্রয়-বিক্রয় থেকে কমিশন প্রাপ্তির প্রক্রিয়াই এ্যামাজন এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এ্যামাজন এ্যাফেলিয়েট মার্কেটিংয়ের ৪ প্রক্রিয়া ॥ মার্কেটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছেÑ সোশ্যাল সাইটে লিঙ্ক শেয়ার, ল্যান্ডিং পেজ তৈরি, ব্লগ সাইট তৈরি করে ও ওয়েবসাইট তৈরি করে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়। তবে এই চার উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ ও উৎকৃষ্ট পদ্ধতি হচ্ছেÑ ওয়েবসাইট তৈরির কাজ। কয়েকজন মার্কেটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ মার্কেটারই এ্যামাজনের হয়ে কাজ করেন। এ্যামাজন এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার ওবায়েদুল ইসলাম রাব্বির মতে, এ্যামাজনের হয়ে কাজ করতে হলে প্রথমেই এ্যামাজনের কোন পণের প্রচার ও প্রসারে উদ্দেশ্যে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। সেখানে মার্কেটার কোন পণ্য নিয়ে কাজ করতে চায় তা সিলেক্ট করতে হবে। একই সঙ্গে পণ্যটির বর্ণনা দিতে হবে পরিপূর্ণরূপে। আর ঠিক তখনই নতুন ওয়েবসাইটে নিশ সাইট হিসেবে কাজ করবে। সাধারণত একটি নিশ সাইটে প্রতিটি পণ্যের জন্য আলাদা আলাদা কন্টেন্ট থাকে। নিশ সাইটের জন্য যা দরকার সেগুলো হলোÑ কিওয়ার্ড রিসার্চ, একটি ডোমেইন বা নাম নির্বাচন ও হোস্টিং সেট আপ, ওয়েবসাইট তৈরি (ওয়ার্ডপ্রেসই শ্রেয়), মানসম্মত কন্টেন্ট, ভাল মানের ব্যাকলিঙ্ক বিল্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, প্রয়োজনীয় পেজ সেট আপ ও কাক্সিক্ষত কনভার্সন রেট। মার্কেট প্লেস ॥ এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বেশি কিছু মার্কেট প্লেস রয়েছে। প্রচলিত মার্কেট প্লেসের মধ্যে রয়েছেÑ এ্যামাজন এ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম, ক্লিক ব্যাংক, ক্লিক শিওর, ক্লিক টু সেল, অফার ভোল্ট, জেবিজু, লাইভ স্টিমিং, সিপিএ এম্পায়ার, শেয়ার এ সেল, কমিশন জাংশন। তবে দেশীয় এ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের মতে, এ্যামাজন এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংÑই সেরা। কেননা ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ্যামাজন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এখানে বছরের পর বছর ধরে হাজারো পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ, এ্যামাজন সাইটটি আমেরিকানদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। শতকরা ৮০ ভাগ আমেরিকানের এ্যামাজনে এ্যাকাউন্ট রয়েছে। তারা নিয়মিত এ্যামজন থেকে কোন না কোন পণ্য কিনে থাকেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ্যামাজন থেকে প্রতি মিনিটে ৮৬ হাজার ডলারের পণ্য কেনাবেচা হয়। বিশ্বের ২ মিলিয়ন মার্কেটার এখানে কাজ করে। বর্তমানে এর ইউজার সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন। এই পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আয় ॥ অনলাইনে কাজের কোন খাতেই আয় নির্ধারিত নয়। মূলত কাজের উপর আয় নির্ভর করে। যার যত দক্ষতা তার আয় তত বেশি। এসইও’র কাজ জানা আছে এমন নতুন এ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা এই পেশায় যুক্ত হয়ে মাসে ৩০০ ডলার আয় করতে পারবেন। নতুনরা কোথায় শিখবে ॥ দেশের বহু সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সম্প্রতি কেউ কেউ অনলাইনেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তবে নতুনরা যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে গুগল থেকে ধারণা নেয়া উচিত। ইউটিউবের টিউটিরায়লগুলো ভাল করে রপ্ত করলে কাজ শেখা সহজ হবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মার্কেটাররা। সামগ্রিক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সভাপতি ও বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ৪ হাজার ৮০০ ধরনের কাজের মধ্যে এটি একটি। এর বাজার বিস্তৃত। তবে দেশে এটি দ্রুত প্রসারিত হয়নি। ২ বছর ধরে দেখে আসছি, এখানে যারা কাজ করছে তারাই কাজ করছে। নতুনরা তেমভাবে আসছে না। আমার মতে, খাতটিতে ব্যবসায়িক জ্ঞানের প্রসারের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে কিছু করা যেতে পারে। স্বতন্ত্রভাবে অনেকেই এখানে আউটসোর্সিং করছে। তার যদি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে তবে আয়টা আরও ভাল হবে। একই সঙ্গে দেশ অর্জন করতে পারে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা।
×