ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাহী আদেশ!

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

নির্বাহী আদেশ!

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, দুটো বহু বিতর্কিত জ্বালানি পাইপলাইন তৈরির কাজ এগিয়ে নেয়া, ওবামাকেয়ার দুর্বল করা, গর্ভপাতে সাহায্য নিষিদ্ধ, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগ বন্ধ, টিপিপি চুক্তি থেকে প্রত্যাহার ও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা কমানোসহ নানাবিধ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে তার পক্ষ থেকে। এই পদক্ষেপের ফলে বিপাকে পড়তে যাচ্ছে ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের অভিবাসীরা। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় জলবায়ু চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন সেই অঙ্গীকারও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার দিনই ট্রাম্প বলেছিলেন, তার অন্যতম লক্ষ্য হবে মেক্সিকো থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানো। একের পর এক নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছেন, দক্ষিণের সীমান্তে ‘শক্ত, উঁচু, সুন্দর’ দেয়াল তুলবেন। ক্ষমতা নিয়েই সেরকম এক নির্দেশনায় সই করে দিয়েছেন তিনি। ক্ষমতা নেয়ার দ্বিতীয় দিনে ট্রাম্প দুটো নির্দেশে সই করেন। একটি কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শোধনাগারে জ্বালানি তেল আসার জন্য ১১৭৯ মাইল পাইপলাইন নির্মাণ। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব হবে এই উদ্বেগের কারণে ২০১৫ সালে ওবামা ওই কাজ স্থগিত করেছিলেন। আরেকটি পাইপলাইনের কাজও গত বছর বন্ধ হয়ে যায় যখন নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের আদিবাসীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলে। তাদের দাবি ছিল, এই পাইপলাইন নির্মাণে তাদের জীবন জীবিকা ঐতিহ্য নষ্ট হবে। ট্রাম্প পরিবেশ বা ঐতিহ্য কোনটাই আমলে নেননি। দরিদ্র মানুষের জন্য সহজ শর্তে যে স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করেছিলেন ওবামা, সেগুলোতে সরকারী ভর্তুকি দেয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান প্রথমবার এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যে, বিশ্বের কোন জায়গায় গর্ভপাতে সহায়তা করার কর্মসূচীতে সাহায্য দেয়া যাবে না। এই নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রে সবসময় বিতর্কিত ইস্যু। ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলেই তা বাতিল করে, আবার রিপাবলিকান এলে সক্রিয় করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করেছেন। নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের সব নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছেন ট্রাম্প। তবে ব্যতিক্রম সেনাবাহিনী। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বার বার আমলাতন্ত্রকে আক্রমণ করেছেন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার কিছু দেশের সঙ্গে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তিকে খুবই গুরুত্ব দিত ওবামার সরকার। ট্রাম্প এই চুক্তিকেও নির্বাহী আদেশে বাতিল করে দিলেন। ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এছাড়া কিছু বহুপাক্ষিক চুক্তি পর্যালোচনার বিষয়টি বিবেচনা করছে প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট তার রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। হোয়াইট হাউস কলমের খোঁচাতেই সরকারের নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা প্রয়োগে এক মুহূর্তের জন্যও সময় নষ্ট করছেন না। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে আমেরিকার মূল্যবোধবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। একই দেশে সমকামীদের সমর্থন করা আর একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না। বিশাল গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের একের পর এক এই একরোখা নীতি দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর সকল ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। ট্রাম্পযুগ যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে তা ইতিবাচক না নেতিবাচক তা সময়ই বলে দেবে।
×