ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সার্চ কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

সার্চ কমিটি

বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই বিচারপতি পূর্বতন চার সদস্যের সার্চ কমিটির নেতৃত্বেও ছিলেন, যেটি ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটির সদস্য বাছাই রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার, তিনিই নাম প্রস্তাব করেন। রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়ে থাকে। সন্দেহ নেই গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় ঘোষিত সার্চ কমিটি ভালভাবেই উত্তীর্ণ হবে। পক্ষপাতহীন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে এমন সার্চ কমিটিই দরকার যার সদস্যরা হবেন দলনিরপেক্ষ এবং সুযোগ্য। নতুন সার্চ কমিটির কাজ হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করা। প্রসঙ্গত একটি আইনের অধীনে রাষ্ট্রপতির ইসি গঠন করার কথা সংবিধানে বলা হলেও সেই আইন গত সাড়ে চার দশকেও হয়নি। আগের রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর একটি সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে মনোনীতদের নামের তালিকা থেকে নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতিও অভিন্ন পথ অনুসরণ করছেন। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। অবশ্য ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে পাওয়া গণতন্ত্রের সৌরভকে ম্লান করে দেয়ার অপপ্রয়াস চালিয়ে থাকে অস্ত্রশক্তিÑ এমন দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল নয়। একাত্তরে তেমনটাই ঘটেছিল এ দেশে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার কসরতে সেই অপশক্তি খোদ মানুষের প্রাণটাই কেড়ে নিতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু মানুষ অর্থাৎ রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার আসল মালিক জনগণই তা রুখে দিয়েছিল। ফলত হাজার বছরের ইতিহাসে অর্জিত হয়েছিল এক আশ্চর্য সুন্দর ফসলÑ বাঙালীর নিজস্ব স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে চাই মানবিক পবিত্র দলিল, যার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে দেশ। আমাদের সেই মানবিক দলিল হলো পবিত্র সংবিধান, যা রচিত হয় স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই। সেই সংবিধানের আলোকেই রাষ্ট্রের পথচলা। সংবিধানের ভিত্তিতে ও সামঞ্জস্যতায় দেশের সব আইন প্রণয়ন। এই আইন প্রণেতারা কারা? রাষ্ট্রের মালিক জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সোজা কথায় সংসদ সদস্যরা। জাতীয় সংসদ সেই পীঠস্থান, যেখানে সুশাসনের লক্ষ্যে এবং গণতন্ত্র সুরক্ষায় প্রণীত হয় যুগোপযোগী আইন। সেই আইনের আলোকেই পরিচালিত হয় নির্বাহী শাসনব্যবস্থা। এভাবেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংসদ থাকে সার্বভৌম স্তম্ভ হিসেবে। তাই সংসদ সদস্য নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সেই নির্বাচন ছাড়াও রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সুতরাং নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত কাজ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরাট একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেশের মানুষ আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে এই কমিটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করবে এবং ভাল কিছু উপহার দেবে। তবে কমিটি ঘোষণার পর বিএনপি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য অর্থবহ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দলটির অতীত কর্মকা- থেকেই এ বিষয়ে সম্যক ধারণা মেলে। সুতরাং দলটির ক্ষুব্ধ আপত্তি আমলে নেয়ার কিছু নেই। শক্তিশালী ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনে এই সার্চ কমিটি যথাযথ অবদান রাখুকÑ এটাই দেশবাসীর চাওয়া।
×