ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কী এমন সুন্দরী প্রিয়াঙ্কা, কটাক্ষ বিজেপি নেতার

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

কী এমন সুন্দরী প্রিয়াঙ্কা, কটাক্ষ বিজেপি নেতার

‘প্রিয়াঙ্কা আর কী এমন সুন্দরী? তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী বিজেপিতে আছেন। তারকাও আছেন। স্মৃতি ইরানি তো ভাল বক্তা, সুন্দরীও।’ ভারতীয় রাজনীতিতে নারীদের সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য নতুন কিছু নয়। এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ নিয়ে তোলপাড় কম হয়নি। অনেকটা একই ভঙ্গিতে বৃহস্পতিবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলে দিনভর নির্বিকার থেকে গেলেন বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার। আনন্দবাজার পত্রিকা। কাটিয়ারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রিয়াঙ্কাকে তারকা প্রচারক করেছে কংগ্রেস। এ নিয়ে তার কী মত? উত্তরে কাটিয়ার এ কথা বলেন। কাটিয়ারের কথা সংবাদমাধ্যমে আসামাত্র সমালোচনার ঝড় হয়। কংগ্রেস দাবি করতে থাকে, নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহকে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। কাটিয়ার নিজে কিন্তু অনড়। ক্ষমা তো চাননি বরং দাবি করেন, যা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন। প্রিয়াঙ্কা তার ভাইঝির মতো। যা বলেছেন ভুল বলেছেন, এমন স্বীকারোক্তি বেরোয়নি তার মুখ দিয়ে। এদিন কুকথার শুরুটা অবশ্য করেছিলেন জেডিইউ নেতা শারদ যাদব। পাটনায় এক অনুষ্ঠানে ভোটের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তিনি প্রথমে মন্তব্য করেন, মেয়েদের সম্মানের চেয়ে ভোটের সম্মান রক্ষা করাটা বেশি দরকার। মেয়েদের সম্মান নষ্ট হলে তার পরিবার বা গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ভোটের সম্মান নষ্ট হলে দেশের ক্ষতি। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হলে দেখা যায়, শারদের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তিনি দাবি করতে থাকেন, তিনি ভুল কিছু বলেননি। সেটা প্রমাণ করতে গিয়ে আবার বলেন, যেভাবে মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে হয়, সেভাবে ভোটের সম্মানও রক্ষা করা উচিত। ফলে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। মহিলাদের সম্পর্কে আপত্তিকর কথা শারদ এই প্রথম বলছেন না, অবশ্য এর আগে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণী মেয়েদের গায়ের রং কালো। কিন্তু শরীরের বাঁধুনি ভাল। নাচেনও ভাল।’ সেবার খুব হইচই হয়েছিল এ নিয়ে। শারদ এদিন প্রমাণ করলেন, তিনি আদৌ বদলাননি। আর খানিক পরেই কুকথার তোড়ে তাকে ডিঙ্গিয়ে গেলেন কাটিয়ার। সরাসরি এমন ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে পড়ে প্রিয়াঙ্কা বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘মহিলাদের প্রতি বিজেপির মনোভাবটা যে কী, সেটাই প্রকাশ করে দিয়েছেন কাটিয়ার।’ তার কটাক্ষ, ‘কাটিয়ার যদি আমার সাহসী, শক্তিশালী নারী সহকর্মীদের মধ্যে এর বেশি কিছু খুঁজে না পান, তাহলে তিনি আমাকে আরও বেশি হাসির সুযোগ করে দেবেন।’ তবে রীতিমতো ক্রুদ্ধ শুনিয়েছে প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট বডরাকে। রবার্ট ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এমন জঘন্য, নারীবিদ্বেষী কথা শুনে আমি হতভম্ব। নারীকে পণ্যবস্তু হিসেবে না দেখে সমান অধিকার আর সম্মান দেয়াটা আমাদের সবার কর্তব্য। সামাজিকভাবে আমাদের একটা বদল আনতেই হবে।’ বিনয়কে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলেন তিনি। এদিন শারদ বা বিনয় কেউ-ই ক্ষমা চাননি। ক্ষমা চেয়েছে তাদের দল। জেডিইউর সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগী বলেন, শারদের কথায় কেউ দুঃখ পেলে তারা ক্ষমাপ্রার্থী। তবে তারও দাবি, শারদ মহিলাদের অসম্মান করতে চাননি। ত্যাগীর মতে, শারদ বলতে চেয়েছিলেন, মেয়ের ভুল বিয়ে দিলে যেমন পরিবারের ক্ষতি হয়, ভুল লোককে ভোট দিলে দেশের ক্ষতি হয়। বিনয়ের কথার সূত্র ধরে মুখ খোলেন বিজেপির বেঙ্কাইয়া নাইডু। তার বক্তব্য, কে কী বলেছেন তিনি শোনেননি। তবে টিভিতে বিনয় কাটিয়ার আর শারদ যাদবের নাম আসছে বলে দেখেছেন। বেঙ্কাইয়ার দাবি, ‘এমন কথা কারোরই বলা উচিত নয়। প্রিয়ঙ্কাজীকে নিয়ে নয়, কাউকে নিয়েই নয়। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারি, শত্রু নই। দল এ রকম কথাবার্তা সমর্থন করে না।’ প্রশ্ন হলো, দল যদি এমন কথা সমর্থন না-ই করে তাহলে বিনয় কাটিয়ারকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হলো না কেন? কেউ কেউ কিন্তু মনে করছেন, কাটিয়ারের এ কথার পেছনে দলীয় নেতৃত্বের পরোক্ষ মদদ থাকতেও পারে। সরাসরি প্রিয়াঙ্কাকে আক্রমণ করে হয়ত প্রিয়াঙ্কার গুরুত্বকে বাড়িয়ে দেখাতে চাইছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে রাহুলের থেকে প্রিয়াঙ্কাকে বড় করে দেখিয়ে গান্ধী পরিবারে চিড় ধরানোর কৌশল হতে পারে। রাহুল আর অখিলেশের হাত মেলানোর পর কি একটু বেশিই শঙ্কিত মোদির দল? ঘরোয়া মহলে বিজেপির কিছু নেতা কিন্তু সে কথা অস্বীকার করছেন না।
×