ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশ আক্রমণ করবে না ॥ রিপাবলিকান সমাবেশে টেরেসা মে

ইরাকের মতো যুদ্ধ আর নয়

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

ইরাকের মতো যুদ্ধ আর নয়

ব্রিটেন ও আমেরিকা তাদের নিজস্ব কল্পনামতো বিশ্ব গড়ে তোলার চেষ্টায় কখনও আবার বিদেশে আক্রমণ চালাবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বৃহস্পতিবার ফিলাডেলফিয়াতে মার্কিন রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিকদের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় এ কথা বলেন। এটি ২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। খবর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও টেলিগ্রাফের। মে অতীতের ব্যর্থ নীতির পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এটি ছিল টনি ব্লেয়ার ও জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত। মের মন্তব্য ছিল ১৯৯৯ সালে শিকাগোতে দেয়া এক ভাষণে ব্লেয়ারের বর্ণিত ‘উদারনৈতিক হস্তক্ষেপ’ মতবাদের প্রত্যাখ্যান। হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তুতি নেয়ার পর্বে মে ওই ভাষণ দেন। তিনিই হবেন প্রথম বিদেশী নেতা যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন। তখন তারা এক বড় ধরনের নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলবেন। ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পর ওই চুক্তির বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ব্রিটেন ও আমেরিকা এক নতুন বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবে। এর ফলে চীন ও ভারতের মতো এশীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক উত্থান পাশ্চাত্যের প্রভাবকে ম্লান করবে না বলে নিশ্চিত হবে। তিনি রাশিয়ার আগ্রাসন ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরাকের ক্ষতিকর প্রভাব রোধেরও সংকল্প ব্যক্ত করেন। আমেরিকা সফরকালে বৃহস্পতিবার মে জোর দিয়ে বলেন, তিনি তাদের ব্যক্তিত্বের পার্থক্য সত্ত্বেও ট্রাম্পের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলবেন। তবে দু’নেতার মধ্যে নীতিগত পার্থক্যের লক্ষণ দেখা দেয়। মে বলেন, তিনি নির্যাতনের নিন্দা করেন এবং ওয়াটারবোডিংয়ের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থনের কারণে ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় সীমিত করে দিতে পারে বলে আভাস দেন। শ্রোতাদের তুমুল করতালির মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, বেক্সিট ও ট্রাম্পের নির্বাচন বিশেষ সম্পর্ক নবায়িত করার এক সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি একে বিশ্বের আদৌ জানা আছে এমন অন্যতম কল্যাণকর শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। মে ট্রাম্পের নির্বাচনকে ‘আমেরিকার পুনরুজ্জীবনের এক নতুন যুগের ঊষালগ্ন’ বলে স্বাগত জানান। তিনি রিপাবলিকানদের বলেন, আমি কেবল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই আপনাদের উদ্দেশে নয়, আপনাদের পার্টির এজেন্ডার অন্তর্নিহিত একই নীতিতে বিশ্বাস করেন এমন এক রক্ষণশীল সহযাত্রী হিসেবেও ভাষণ দিচ্ছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার মূল্য, কাজের মর্যাদা, জাতীয়তা, পরিবার, অর্থনৈতিক বিজ্ঞতা, দেশপ্রেম এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত রাখা- এসব নীতিই আপনাদের সরকার চালানোর পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। মে বলেন, আমাদের স্বার্থে ব্রিটেন ও আমেরিকার যৌথ স্কার্ফে আমাদের মূল্যবোধ ও আমাদের বিশ্বাস রক্ষার জন্য একযোগে শক্তিশালী হয়ে দাঁড়ানো উচিত। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটিই পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, এর অর্থ অতীতের ব্যর্থ নীতিতে ফিরে যাওয়া নয়। আমাদের নিজস্ব কল্পনামতো বিশ্বকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর চেষ্টায় সার্বভৌম দেশগুলোতে ব্রিটেন ও আমেরিকার হস্তক্ষেপ করার দিন আর নেই। কিন্তু যখন বাস্তবেই হুমকি দেখা দেয় এবং যখন আমাদের নিজস্ব স্বার্থেই হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন তখন আমরা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে। আর আমাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গীকার অবশ্যই দেখাতে হবে। তার মন্তব্যে বোঝা যায় যে, ব্রিটেন ড্রোন ব্যবহার করে জিহাদীদের ওপর হমালা চালিয়ে যেতে চায় কিন্তু স্থলসৈন্য দিয়ে আক্রমণ চালানো এখন অতীতের এক বিষয়। মে স্পষ্ট করে দেন যে, ব্রিটেন ও আমেরিকা যাতে চীন ও ভারতের মতো এশীয় দেশগুলোর অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে দুটি দেশের মধ্যে আরও শক্তিশালী মৈত্রী প্রয়োজন। ট্রাম্প ও ভøাদিমির পুতিনের মধ্যকার ইতিবাচক সম্পর্ক সত্ত্বেও মে রাশিয়ার সমালোচনা করতে তার ভাষণকে কাজে লাগান।
×