আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসবো, কেন?
আমাদের দুজনেরই কিছু কিছু অপূর্ণতা আছে;
আমার পকেটে যা আছে তা দিয়ে
আমি একটি নদী কিনতে পারি কিন্তু তাতেই
খালি হয়ে যায় পকেট;
তোমার কাছে যা আছে তা দিয়ে তুমি একটা
পাহাড় কিনতে পারো-
কিন্তু তার বেশি কিছু নয়;
অতএব এসো, আমরা দুজনে মিলে
একটা পাহাড় এবং একটি নদী কিনে ফেলি;
তখন সমুদ্রটাা ফ্রি পেয়ে যাবো
আর প্রথম দেখার দিন থেকেই সমুদ্রের জন্য
তোমার আগ্রহ তো লোভের কাছাকাছি প্রায়।
দ্যাখো-আকাশের শপিং মলে যে বিক্রয় বিজ্ঞাপন
ঝুলে আছে—- নক্ষত্রের হকারদের লেখা—
‘দুটো কিনলে একটা ফ্রি,’
তা ষোলআনা বিশ্বাসযোগ্য;
কারণ ওটা গাজার আকাশে ঝুলে থাকা
ফিলিস্তিনীদের জন্য কোনো মার্কিনী প্রতিশ্রুতি নয়।
ভালোবাসার স্টেশন
যখন তোমার নিস্ক্রিয়তায় থেমে থাকে
অনুরক্ত কারো আহ্নিকগতির ট্রেন
এবং সেটা জেনেও তুমি নিস্ক্রিয় থাকো,
তোমার ডায়মন্ড পায়ের কাছে পড়ে থাকে
সবুজ সিগন্যালের ফ্ল্যাগ,
তখন লোকাল ট্রেন, ইন্টারসিটি ট্রেনের
শব্দ ছাপিয়ে——
একটি মনের মৃত্যুঘণ্টা শোনে স্টেশনমাস্টার!
পরাজিত প্রেমিকের দেশে
এই আমি, যার হাঁটুর নিচে দংশনের দাগ,
বাহুতে তীরের ক্ষত, নাকে বারুদের গন্ধ,
সে-ই প্রণয়ী উঠোন থেকে তাড়িয়েছি সাপ;
কিন্তু তারপরও কেন এত উত্তোলিত ফণা?
কেন আমি জানালা খুলে ঘুমুতে পারি না ?
ভাতঘুমে ঝিমুলেই হিস্ হিস্ শব্দ ওঠে
সুজনী বিছানো সিথানে পৈথানে আমার!
সাক্ষী মহাকালের চৌকিদার-তিস্তা-করতোয়া-মহানন্দা,
সেই কবে কলার ভেলার সাথে ভেসে গেছে
পরাজিত সওদাগরের যুগ; তবু মাথার ওপর
থেকে আজও কেন সরে নাকো মনসার ছায়া?
ও আমার ভালোবাসার গৌড়রাজকন্যা
আমি যে তোমার ঈষৎ ঝুঁকে থাকা মেঘস্তনে
পাহাড়ী নাক রেখে ঘুমুতে চাই একবার—-!
সেদিন আসবে কবে? কবে আসবে সেদিন?
একটি শাড়ি অথবা ওথেলীয় সন্দেহের রুমাল
আমি দেখছি, দেখছে সেও,—- রাজধানীর সীমান্ত ছোঁয়া বাতাস; সে বাতাসে
উড়ছে একটি শাড়ি। ফ্যানের বাতাসে শাড়িটি পেরিয়ে এসেছে জানালা ।
শাড়িটি সুন্দর, নিষ্কলঙ্ক। কিন্তু শাড়িটি আর শাড়ি নয়; সেটি এখন ওথেলোর
ডেসডিমোনার রুমাল। সাফারি পার্কে দাঁড়ানো ও ভাই, ও বোন, তোমরাও কি
দেখছো ওই রুমাল? দেখতে পাও বা না পাও, শাড়িটি আর জড়াবে না ঐ শরীর।
মন মরে গেলে শরীর জীবন্ত লাশ; লাশের গায়ে রঙিন কোনো শাড়ি লাগে না।
কিন্তু কেন এই সন্দেহ? কেন এই অবিশ্বাস? আর কেনইবা এই নিষেধাজ্ঞা !
যে শুধু তোমাকেই ভালোবেসে নক্ষত্রদের অনুরাগ উপেক্ষা করে ঘরে নিয়েছে
লোডশেডিঙের রাত, তার মধ্যে অন্ধকার আবিষ্কারের চেষ্টা প্রেম নয়, হে নর!
বিপরীত কোণ? একই কথা। কান টানলে মাথা আসে; মাথা টানলে কানও!
খাঁচায় পোষার নাম প্রেম নয়; প্রেম হচ্ছে প্রিয়জনকে উড়তে দেখে এবং তার
ডানায় অকটেন জুগিয়ে হাততালি দিতে পারার আনন্দ। প্রেম ভালোবাসে
শরতাকাশে ঝুলে-থাকা মেঘের আইসক্রিম আর কাশবন ছুঁয়ে উড়ে আসা
বাতাসের উদার আদর। ভালোবাসা সারাবছরের নীলাকাশ নয়, মাঝেমাঝে
ঝড়-বৃষ্টি-কুয়াশাও। প্রণয়ের ঘরের দরোজা-জানালা খোলাই থাকে, সেই
ঘরে প্রবেশ করে সবই, সবাই; কেবল ঢুকতে পারে না অন্ধকার। তালাচাবি-
মন নিয়ে ব্যক্তিগত কাশিমপুর কারাগারের জেলার হওয়া যায়, প্রেমিক নয়।
হায় মানুষ, তুমি হিমালয়ে উঠেছো, চাঁদের গায়ে সেই যে সে-পদচ্ছাপ,
সেটা তোমার মেধার বিজয় ঘোষণা করে চলেছে আকাশে; কিন্তু আজও
তোমার মন পড়ে রয়েছে ওথেলীয় সন্দেহের গর্তে- যেখানে সূর্য-যুক্তির
ক্রেইনও কোনো কাজে লাগে না। শুধু রক্তক্ষরণে মুমূর্ষু হয় প্রণয়ী হৃদয়।
ব্যর্থতার প্রেসনোট
দ্যাখো—গায়ে ভালোবাসার ইউনিফর্ম আর
হিরোইনসেবীদের মতো জড়িয়ে সে—
বহুগামী অন্ধকারের শরীরে,—যেখানে
জোছনাকে কুকুরের চোখ বলে মনে হয়!
তথাপি চেষ্টা করেছি। একবার। বহুবার।
কখনো একাদশীর চাঁদ, কখনো পূর্ণিমা।
পারলাম না। মনটা খারাপ। আকাশের গায়।
মাই লর্ড, ইওর অনার,—
ব্যর্থতা কি শুধুই আমার !
পায়ের কাছে বঙ্গোপসাগরের অফুরন্ত রিজার্ভ
কিন্তু আকাশ কি পারে
শ্রাবণের ঝারি দিয়ে—
মুক্ত করতে শীতলক্ষ্যাকে দূষণের গ্রাস থেকে?
মেইল : [email protected]
শীর্ষ সংবাদ: