ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দারিদ্র্যের উৎসর্মূল নির্মুলের আর্থ-রাজনৈতিক নির্দেশনা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

দারিদ্র্যের উৎসর্মূল নির্মুলের আর্থ-রাজনৈতিক নির্দেশনা

ভালবেসে বাংলাদেশের ... নারীরা বছরে ১৬ হাজার ৬৪১ কোটি শ্রমঘণ্টা ব্যয় করেন। যার অর্থমূল্য ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। ... বাংলাদেশের সমাজ অর্থনীতি রাষ্ট্রকে ভড়ৎ ঃযব ১%, ড়ভ ঃযব ১%, নু ঃযব ১% নামে আখ্যায়িত করা যায়। ... রাষ্ট্র সরকার ও রাজনীতি এখন রেন্ট-শিকারদের অনুগত অধীন দাস সত্তা বলা চলে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ দরিদ্র (৬৬%), ৪৪ লাখ মানুষ (২৭%) ধনী। সাহসী এসব উচ্চারণ প্রচলিত ধারণাকে প্রচ- ধাক্কা মেরে মনস্তাত্ত্বিক আলোড়ন সৃষ্টিতে জোরালো ভূমিকা রাখবে। সমাজে নারীদের ভূমিকাকে যে পুরুষ সমাজপতিরা খাটো করে দেখতে অভ্যস্ত তাদের সুর অনেকটাই পাল্টাবে। দারিদ্র্যের শতকরা হারের অঙ্কটা ঝঢ়ড়হংড়ৎবফ অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক নেতাদের টনক নড়াবে সজোরে। বিশেষত: যারা মাথাপিছু আয়ের স্থ’ূল ফর্মুলায় দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছেন, তাদের তৃপ্তির ঢেকুরটা চুপসে যেতে বাধ্য। বাস্তবভিত্তিক সাহসী এসব বক্তব্য উঠে এসেছে গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত ড. আবুল বারকাত এর শেকড় সন্ধানী; নির্মোহ গবেষণার সর্বশেষ ফসল ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক গ্রন্থে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. বারকাত গত ত্রিশ বছর ধরে যে সব বিষয় নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তার মধ্যে অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, রেন্টসিকিং উদ্ভূত লুণ্ঠন ও পরজীবীবৃত্তির অর্থনীতি ও রাজনীতি, কালো টাকা, মৌলবাদ ও মৌলবাদী জঙ্গীত্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি, খাসজমি, জলা, ভূমি মামলা, ভূমি-আইন, নারীর ক্ষমতায়ন, বঙ্গবন্ধুর দর্শনভাবনা-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ, শিশু দারিদ্র্য ও শিশু বঞ্চনা, অর্থনীতি শাস্ত্রে ‘দর্শনের দারিদ্র্য’ সুশীল সমাজের রাজনৈতিক অর্থনীতি, সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্বব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৫ এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে লুটেরা তথা রেন্টসিকিং (এ তত্ত্বটিও ড. বারকাতের সৃষ্টি) গোষ্ঠীর আধিপত্য নজিরবিহীনভাবে বেড়ে চলেছে তাতে মুষ্টিমেয় শ্রেণীর হাতে দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির চাকা ঘূর্ণায়মান। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে বহুমুখী দারিদ্র্যের হার। দেশপ্রেমিক এই মুক্তিযোদ্ধা গভীর বিশ্লেষণ ও শেকড়সন্ধানী গবেষণায় প্রাপ্ত অনেক তথ্য, উপাত্ত ও তত্ত্বের প্রকাশ ঘটিয়ে, অকুতোভয়ে সত্য কথনে প্রচলিত ধারণা ও বিশ্বাসে প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দিয়েছেন। দারিদ্র্যের উৎসমূলের সন্ধানে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাওয়া গ্রন্থকার-গবেষক ড. আবুল বারকাত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। গ্রন্থের প্রাককথন পর্ব ‘কৃতজ্ঞতা এবং ...’ প্রথম অধ্যায়ে তিনি বলেছেন, ‘১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের মানুষকে অতি কাছ থেকে দেখেছি। সহজ সরল নির্ভেজাল মানুষ। এরা বেশিরভাগই গরিব মানুষ। গ্রামের এসব মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা দিয়েছিল- আগলে রেখেছিল- এসবের আমি প্রত্যক্ষদর্শী-সাক্ষী। এসবই আমার মনে স্থায়ী দাগ কাটে। যার ক্ষুদ্রফল বলা যায় আমার কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার ভাবনা।... ভেতরে ভেতরে একটা ‘ইমোশন’ কাজ করতে থাকে যে, গরিব মানুষেরই যদি জীবন মান আলোকিত সমৃদ্ধ না হয় তাহলে মুক্তি-স্বাধীনতার অর্থ কি হবে? ... এখন আর কোন সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশে প্রকৃত উন্নয়ন প্রগতি সম্ভব যে সম্ভাবনা বাস্তবে রূপায়ণে অন্যান্য অনেক জরুরী কর্মকা-ের মধ্যে অন্যতম হবে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার।’ ড. বারকাত সত্য ভাষণে কতটা অকুতোভয়, আত্মবিশ্বাসী তার লেখায় তা উঠে এসেছে। তিনি বলেন- আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্রান্তে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার মাধ্যমে বিকৃত মুক্তবাজার অর্থনীতির শাখা প্রশাখা ক্রমান্বয়ে বিস্তার লাভ করতে থাকে। সৃষ্টি হয় ‘রেন্ট-শিকার’ গোষ্ঠী। যারা অন্যের সম্পদ জোর দখলকারী, দুবৃত্ত, পরজীবী শ্রেণী। লুটেরা, ফাও খাওয়া শ্রেণী-স্বার্থের জন্য সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনকারী। এরা নিজেরা কোন সম্পদ সৃষ্টি করে না। .... এরা অন্যের সম্পদ বেদখল, জোর দখলকারী। রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতি এখন ‘রেন্ট-শিকার গোষ্ঠীর অনুগত, অধীন ও দাস সত্তা বলা চলে।’ সরকারী তথ্য মতে (২৭ জুলাই ২০১৬) : বর্তমানে সারাদেশে খাস জমির পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫৭ একর। গ্রন্থকার গবেষণা করে পেয়েছেন কৃষি খাসজমি ১২ লাখ একর, অকৃষি খাসজমি ২৬ লাখ এবং জলাভূমি ১২ লাখ একর। অর্থাৎ মোট খাসজমি-জলা ৫০ লাখ একর। সরকারী তথ্যে বলা হচ্ছে, চিহ্নিত ১২ লাখ একর জমির ৪৪ শতাংশ গরিব, ভূমিহীন ও দুস্থ জনগণের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। গ্রন্থকারের গবেষণায় সরকারী বণ্টন হিসাব মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃত চিত্র হচ্ছে খাস জমির ৮৮ শতাংশ ধনী ও প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে। ভূমিহীন গরিব মানুষ পেয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। এই একটি মাত্র তথ্য দরিদ্রবান্ধব গ্রন্থকার গবেষক ড. বারকাতের বাংলাদেশ কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের যুক্তিকে জোরালো করার জন্য যথেষ্ট। ছয়টি মূল অধ্যায়ে বিভাজন করে শাণিত যুক্তি-তর্কে, তথ্য-উপাত্তে বাস্তবতার আলোকে শেকড়ে প্রোথিত সমস্যার উন্মেষ যেমন করেছেন তেমনি বাতলে দিয়েছেন উত্তরণের গ্রহণযোগ্য সুপারিশ/নির্দেশনা। ড. আবুল বারকাত স্পষ্টবাদী সত্য কথনে ছাড় দিতে নারাজ। তার কিছু বক্তব্য তথাকথিত আঁতেল শ্রেণীর (ঝঢ়ড়হংড়ৎবফ বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও নব্য এলিট শ্রেণী) বৃহদাংশকে আহত করতে বাধ্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোন অর্থনীতিবিদই শ্রেণী নিরপেক্ষ সত্তা নন। যে কারণে অর্থনীতিবিদদের ‘অর্থনীতিবিদ শ্রেণী’ বললে অত্যুক্তি হবে না (তবে তারা রাগ করতে পারেন!) এরা বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর একাংশ। এদের অধিকাংশই ক্ষুদ্রার্থের অর্থনীতির বাইরে বিচরণে অপারগ।’ গ্রন্থের সূচনাপর্ব ‘কৃতজ্ঞতা এবং ....’ নিছক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়। গ্রন্থের পটভূমি, প্রেরণা, কৃষি-ভিত্তিক অধিকার আদায়ে তিন শ’ বছরের ধারাবাহিক বিভিন্ন আন্দোলনের ইতিহাসের বিবরণ এই অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে যৌক্তিকভাবে। বাবা তিলক মাঝি (ওরফে জব্বার পাহাড়িয়া) থেকে শুরু করে নাচোল বিদ্রোহের নেতা ইলা মিত্রকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন গ্রন্থকার। ছয়টি মূল অধ্যায়: (১) কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার নিয়ে মুখ বন্ধ কেন? (২) কৃষি-ভূমি জলা সংস্কার কি এবং কেন? (৩) কৃষিÑভূমি জলা সংস্কার সংশ্লিষ্ট প্রধান বিষয়াদির রাজনৈতিক অর্থনীতি, (৪) বণ্টনমূলক ভূমি সংস্কার প্রসঙ্গ: সম্ভাবনা, প্রভাব অভিঘাত ও পদ্ধতিতত্ত্বীয় বিষয়াদির হালনাগাদ হিসেব পত্তর, (৫) কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার: সুপারিশগুচ্ছ, (৬) কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক শেষ কথা। কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার সংশ্লিষ্ট প্রধান বিষয়াদির রাজনৈতিক অর্থনীতি শীর্ষক ৩য় অধ্যায়ে গ্রন্থের মূল উপজীব্য বিষয়ের বিশ্লেষণ আলোচনার দাবি রাখে। এই অধ্যায়ে যে সব উপ-অধ্যায় ভিত্তিক আলোচনা গ্রন্থকার ধারাবাহিকভাবে করেছেন সেগুলো হচ্ছে- (৩.১) খাসজমি ও জলা: দরিদ্র প্রান্তিক মানুষেরই হিস্যা কিন্তু লুট নিরন্তর (৩.২) চরের জমি: আল্লাহ জানে মালিক কে? (৩.৩) ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভূ-সম্পত্তি কেন্দ্রিক প্রান্তিকতা শত্রু ও অর্পিত সম্পত্তি আইন (৩.৪) আদিবাসী মানুষের জমি-জলা-বন সংশ্লিষ্ট প্রান্তিকতা: ছিটেফোঁটা সংস্কার দিয়ে হবে না। (৩.৫) মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রান্তিকতা: জল-জলায়-অধিকার নেই (৩.৬) লোনা পানিতে চিংড়ি চাষ: দারিদ্র্য ও বঞ্চনার এক নতুন মাত্রা। (৩.৭) ভাগচাষ-বর্গাচাষ বিভিন্ন ভোগদখল স্বত্ব (৩.৮) নারীর ক্ষমতায়ন জমি-সম্পত্তিতে নারীর অধিকার (৩.৯) ভূমি-মামলায় জাতীয় অপচয় (৩.১০) ভূমি-প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা, আইন ও নীতিমালা দুর্বৃত্ত-রেন্ট-শিকারদের স্বার্থ সংরক্ষণের যন্ত্রমাত্র (৩.১১) ভূমি আইন: দরিদ্রবিরোধী আর ‘রেন্ট-শিকার’ দুর্বৃত্ত সৃষ্টি পুনঃসৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম (৩.১২) কৃষি-ভূমি জলা সংশ্লিষ্ট সমবায়: বাস্তবে অনুপস্থিত কিন্তু ভাবনা জরুরী এবং (৩.১৩) কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি। প্রতিটি অধ্যায়কে যুক্তিগ্রাহ্য উপ-অধ্যায়ে বিভাজন করে খুঁটিনাটি বিষয়কেও পর্যাপ্ত বিস্তৃত করেছেন- যা অবধারিতভাবেই আলোচনার দাবি রাখে। কোন কিছুই অতিকথন, অপ্রাসঙ্গিক দোষে দুষ্ট ভাবার অবকাশ নেই। আলোচিত গ্রন্থে বিশেষ কিছু শব্দ/শব্দগুচ্ছের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যেমন কৃষি-জলা-ভূমি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, ভূমি সংস্কার, শ্রেণী নিরপেক্ষ, রেন্টসিকিং, উন্নয়ন দুর্বৃত্তায়ন, লুণ্ঠন সংস্কৃতি, সুযোগের সমতা, নগরায়ন, বস্তিয়ায়ন, প্রান্তিক, ভূমিহীন, নারীর ক্ষমতায়ন, আদিবাসী মানুষ, পলিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেমোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, মুক্তবাজার, সংখ্যালঘু, বিপ্রতীপ বর্গা, উন্নয়ন সেøাগান, ভোগান্তি বর্ষ, গলাধাক্কা অভিবাসন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ইত্যাদি। অধিকাংশ শব্দ বা শব্দগুচ্ছের উৎপত্তি, মর্মার্থ, সারার্থ, সারণি/ছকের মাধ্যমে গ্রন্থকার বিশ্লেষণ করেছেন তার নিজস্ব সাহজিক ভঙ্গিমায়। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে গ্রন্থকার দারিদ্র্য, দুর্বৃত্তায়ন, রেন্টসিকিং, ভূমি-অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন মৌলবাদ নিয়ে নিরলস, নির্মোহ গবেষণা করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। এই গ্রন্থে সর্বমোট ২৫০টি তত্ত্ব/তথ্যের উৎসের সহায়তা নিয়েছেন গবেষক-অর্থনীতিবিদ। ২৫০টির মধ্যে ৮৮টি উৎসের সহায়তা দিয়েছে তারই নিজস্ব রচনা ভা-ার। অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে তার লেখায় অর্থনৈতিক টার্ম থিউরি সঙ্গত কারণেই আসতে পারে। কিন্তু সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, নীতিশাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্রের বিভিন্ন টার্মের যথাযথ প্রয়োগ গবেষণা গ্রন্থকে সুপাঠ্য করেছে। প্রতিটি অধ্যায়ে এ ধরনের উদ্ধৃতির ব্যবহার যুক্তিযুক্ত ও প্রাসঙ্গিকভাবে করেছেন। জ্যাঁ জ্যাক রুশো, ভøাদিমির ইলিচ লেনিন, ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, এ্যারিস্টটল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জোনাথন সুইফট, কার্ল মার্কস, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির উদ্ধৃতি গবেষণা গ্রন্থটিকে সমৃদ্ধ করেছে বহুগুণ। গবেষণা গ্রন্থের ভাষা প্রয়োগে অনেক ক্ষেত্রে দুর্বোধ্য ভাষা রীতির আশ্রয় নেয়া হয়। কিন্তু ড. আবুল বারকাত ঝরঝরে সহজবোধ্য ভাষায় অর্থনীতির জটিল তত্ত্বকে বিশ্লেষণ করেছেন যা তাঁর ভাষাগত ব্যুৎপত্তি ও পা-িত্যের ব্যাপকতাকে প্রকাশ করে। নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে মিয়ানমারের নারীদের পশ্চাৎপদ অবস্থা সম্পর্কে স্যাটায়ারমূলক গল্পাংশের বাস্তবসম্মত ব্যবহার তৃতীয় বিশ্বে নারীর ক্ষমতার হাল হকিকত জানান দেয়। অকুতোভয়, আত্মবিশ্বাসী গ্রন্থকার গবেষক শেষ অধ্যায়ে এসে কিছুটা হতাশার সুরে এ্যারিস্টটল ও লিওনার্দো দ্য-ভিঞ্চির আশ্রয় নিয়েছেন। এ্যারিস্টটলের বক্তব্য: ‘আশা হলো জাগ্রত মানুষের স্বপ্ন।’ আর দ্য-ভিঞ্চির বক্তব্য ‘আমি ঈশ্বর এবং মানবসমাজকে বিরক্ত করেছি, কারণ আমার কাজ সেই মানে পৌঁছাতে পারেনি যা হওয়ার কথা ছিল।’ গবেষক তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের হাতিয়ারকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের আর্থ-রাজনৈতিক উৎসের সন্ধান করেছেন। সুপারিশমালা তুলে ধরেছেন। দারিদ্র্য নিরসনে গ্রহণীয় উপায় হিসেবে এসব সুপারিশমালা বাস্তবায়নের যথার্থ পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবেই নিতে হবে। একক কোন ব্যক্তি/গোষ্ঠীর দ্বারা সমস্যা আবর্তিত পুরো জাতিকে আলোকিত করা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয় আলোচনার শুরুতে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। তবে, এ-গবেষণাগ্রন্থ পাঠে পাঠকের জ্ঞানের পরিধি বাস্তবতাকে বোঝার দৃষ্টিকে স্বচ্ছ ও প্রসারিত করবে- এ ব্যাপারে শতভাগ আশ্বাস দেয়া যায়। আবদুল মান্নান মান্না
×