ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করুন

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করুন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ধান উৎপাদনে দেশের সফলতার ধারা আরও গতিশীল করতে হবে। সে লক্ষ্যে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য তিনি ব্রি’র বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) পাঁচ দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ নাসিরুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ মনজুরুল হান্নান। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ব্রি’র মহাপরিচালক ড. ভাগ্য রানী বণিক। কর্মশালায় ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৫-১৬’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মোঃ আনছার আলী। ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মোঃ শাহজাহান কবীর অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ব্রি, বারি, বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। পরবর্তী পাঁচ দিন ধরে চলবে কর্মশালার বিভিন্ন কারিগরি অধিবেশন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের অর্জন ও অগ্রগতির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনগুলোতে গত এক বছরে ব্রি’র ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্রি’র বিজ্ঞানীরা জানান, গত বছর ব্রি’ পাঁচটি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান ৭৬, ব্রি ধান ৭৭, ব্রি ধান ৭৮ ও ব্রি হাইব্রিড ধান ৫ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চারটি আমন মৌসুমে এবং একটি বোরো মৌসুমে চাষ উপযোগী। বিজ্ঞানীরা আরও জানান, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলার লক্ষ্যে ব্রি বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত নয়টি লবণ-সহিষ্ণু, দু’টি জলমগ্নতা সহিষ্ণু, সাতটি খরা সহিষ্ণু, একটি খরা পরিহারকারী, দু’টি শীত সহনশীল এবং চারটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিভিন্ন ধরনের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযোগী আরও ধানের জাত উদ্ভাবনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ধানের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য ‘ভিটামিন এ’ এবং আয়রন সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত সরু ও সুগন্ধযুক্ত বোরো মৌসুমের জাত ব্রি ধান৫০ বা বাংলামতি রফতানি সম্ভাবনাময়। তারা জানান, বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতের চাষাবাদ হয় এবং এর থেকে আসে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৯১ ভাগ। ব্রি এ পর্যন্ত পাঁচটি হাইব্রিডসহ মোট ৮২টি উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যার মধ্যে বেশ ক’টি প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এগুলো কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় হবে এবং সামগ্রিকভাবে ধান উৎপাদন বাড়বে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
×