ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমপির ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ

মিতু হত্যার নির্দেশদাতা বাবুল হলেও শাস্তি চান বাবা-মা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

মিতু হত্যার নির্দেশদাতা বাবুল হলেও শাস্তি চান বাবা-মা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ গত বছর দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা চট্টগ্রামের সেই মিতু হত্যাকা-ের দীর্ঘ সাত মাস পেরিয়ে গেছে। তৎকালীন পুলিশের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার তদন্তে সবকিছুই মিলেছে। অর্থাৎ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত কারা, কোথায় এবং কিভাবে এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে, হত্যাকা-ের জন্য যাবতীয় পরিকল্পনা উদঘাটিত হয়েছে। শুধু রহস্যের বেড়াজালে আটকে রয়েছে মিতুকে হত্যার মূল নির্দেশদাতা কে? মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের কয়েকজন সোর্স এ হত্যাকা- ঘটানোর অভিযোগে এবং স্বীকারোক্তির প্রেক্ষাপটে গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছে। ২ জন ক্রসফায়ারে প্রাণ হারিয়েছে। মূল নেতৃত্বদানকারী মুসা সিকদার পলাতক বলে পুলিশের বক্তব্য রয়েছে। যদিও মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার বলেছেন, তার স্বামীকে (মুসা) পুলিশ ঘটনার পর আটক করে নিয়ে গেছে। এ রহস্যেরও কূল কিনারা অদ্যাবধি হয়নি। এছাড়া সর্বশেষ বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে থাকাকালীন তার চাচাত ভাই পরিচয়দানকারী সাইফুল নামের একজনকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে। এই সাইফুলের সঙ্গে বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের সখ্য ছিল। সে নিজেকে বাবুল আক্তারের চাচাত ভাই পরিচয় দিয়ে বেড়ালেও আসলে তা নয়। সব মিলিয়ে পুরো তদন্ত কার্যক্রম এগোচ্ছে ঢিমেতালে। যা সাধারণ মানুষ নয়, খোদ পুলিশ মহলেই সমালোচনার জন্ম নিয়েছে। মিতু হত্যাকা- ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলার তদন্তে কাজ করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তদন্ত কর্মকর্তা এডিসি কামরুজ্জামান সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সিএমপিতে তার দফতরে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন ও মা শাহেদা মোশারফকে তার কার্যালয়ে টানা চার ঘণ্টা মামলা সংক্রান্তে নানা আলাপ-আলোচনা তথা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিতুর বাবা ও মা যুগপৎভাবে সাংবাদিকদের বলেছেন, হত্যার নির্দেশদাতা যেই হোক তাকে বা তাদের যেন আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। এমনকি বাবুল আক্তার হলেও তার শাস্তি চান। এর পাশাপাশি মিতু হত্যাকা- নিয়ে পরকীয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন তারা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে মিতুর বাবা ও মা ঘটনা নিয়ে যা জানেন এবং শুনেছেন তা তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এর পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তাও তদন্তে এ পর্যন্ত যা পেয়েছেন তা তাদের অবহিত করেন বলে সিএমপি সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ জুন ভোরে পুত্রকে স্কুলগামী বাসে তুলে দেয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়ার পর জিইসি মোড় এলাকায় প্রধান সড়কে তাদের গতিরোধ করে কিলিং স্কোয়াডের সদস্যরা মিতুকে প্রথমে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও পরে গুলিতে হত্যা করে। বৃহস্পতিবার মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন সুনির্দিষ্টভাবে সিএমপি কার্যালয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের বলেছেন, বাবুল আক্তার হোক বা তার পরিবারের কোন সদস্য হোক বা অন্য যারাই হোক মিতু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন। মোশাররফ হোসেন ও শাহেদা মোশাররফ পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বলেছেন, হত্যার নির্দেশদাতার মুখোশ উন্মোচন করার দায়িত্ব পুলিশের। মোটিভ কি ছিল সে দায়িত্বও তদন্ত কর্মকর্তার। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এসে মিতুর বাবা-মা এও বলেছেন, আজকের এ জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তারকেও আনা উচিত ছিল। এছাড়া মিতু মারা যাওয়ার পর তার ব্যবহৃত মোবাইলটি এখনও সচল রয়েছে বলেও তথ্য দেন। জানান, ঢাকার হাতিরঝিলের এক সিএনজি অটোরিক্সা চালকের কাছে মোবাইলটি রয়েছে। যার হাতে এ মোবাইলটি রয়েছে বৃহস্পতিবার সকালেও সে মোবাইলে মিতুর কয়েক আত্মীয় কথা বলেছেন। এসব ঘটনা তারা তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তা লিপিবদ্ধ করেছেন এবং এ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। অপরদিকে পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যাকা-ে চার্জশীট প্রদানের বিষয়টি বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তদন্ত সংস্থা ডিবি এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে আসতে উর্ধতন মহলের সবুজ সঙ্কেত পাচ্ছেন না। একটি হত্যাকা- নিয়ে মামলার পর তদন্তে যা যা প্রয়োজন তার সবই এসেছে। শুধু নির্দেশদাতার নামটি কিলিং স্কোয়াডের সদস্যদের মুখ থেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে আনা যায়নি। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব সন্ত্রাসীরা ঘটনার আদোপান্ত বর্ণনা দিয়েছে। কিন্তু ওই বর্ণনা পুলিশ যেমন আদালতে উপস্থাপন করেনি, তেমনি এর কোন আইনসম্মত কার্যকারিতাও নেই। পুলিশ যত তথ্যই দিক না কেন, তা জড়িতদের মুখ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এখানেই মূল রহস্যটি লুকিয়ে আছে। কিলিং স্কোয়াডের সদস্যরা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করলেও নির্দেশদাতার নাম কেন বলেনি। এ নিয়ে পুলিশের পক্ষে কোন ইশারা ছিল কিনা সবই রহস্যময়।
×