ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকায় অনেক কিছুই যোগ হয়েছে। কিন্তু মার খাচ্ছে নান্দনিকতার বোধ। সরকারের এই দফতরে ওই দফতরে বড় বড় কর্তারা বসে আছেন। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে কি? উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন কি আসছে কোথাও? অথচ ‘অকাজ’ থেমে নেই। গত মঙ্গলবার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় আরও একবার মনে হলো, ‘অকাজ’ থেমে নেই। জাতীয় গণগ্রন্থাগার বা পাবলিক লাইব্রেরীর এই সিঁড়িটি সবার চেনা। যিনি কোনদিন আশপাশ দিয়ে যাননি, তিনিও সিঁড়ি দেখে বলে দিতে পারেন- এটি পাবলিক লাইব্রেরী। আর খোলামেলা সিঁড়ির বিভিন্ন অংশে বসে আড্ডা গল্প জমানোর স্মৃতি তো ভোলার মতো নয়। ভূমি থেকে ভবনের দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ওঠে যাওয়া লাল সিরামিক ইটের সিঁড়িটি কেবল সিঁড়ি হয়ে নেই। এর আলাদা সৌন্দর্যই। পুরনো স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। সিঁড়িটির প্রধান বৈশিষ্ট্য- এটি খোলামেলা। আর খোলামেলা সিঁড়ির বিভিন্ন অংশে বসে আড্ডা গল্প জমানোর স্মৃতি তো ভোলার মতো নয়। অথচ সব ভুলে বসে আছে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর। কর্তা-ব্যক্তিরা বিশাল সিঁড়ির ঠিক মাঝখানে স্টেনলেজ স্টিলের একটি বেড়া তুলে দিয়েছেন। ভবনের দুই দেয়াল ঘেঁষে আছে আরও দুটি বেড়া। এভাবে এতকাল ধরে হৈ হুল্লোড় করে চলা পথটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন তারা। প্রবীণ পাঠকদের কথা ভেবে কিছুদিন আগে দেয়ালের কাছাকাছি অংশে ছোট একটি রেলিং নির্মাণ করা হয়েছিল। ওই একটি রেলিং ব্যবহার করার লোক তেমন চোখে পড়েনি। অথচ সম্প্রতি আরও দুটি নির্মাণ করা হয়। এতে করে পাঠকের প্রাণবন্ত চলাচল মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে মাঝের সিঁড়িটির দিকে তাকানো যায় না। যেন বাথরুমের তাওয়াল রাখার স্ট্যান্ড! মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা পাঠককে খাঁচায় বন্দী বলে মনে হয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। ফিরে আসার সময় কয়েকজন পাঠককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তারা বলেন, কর্তা-ব্যক্তিদের শিল্প সুন্দর চোখ নেই। নতুন তেমন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না। উল্টো বহুকাল আগের স্বীকৃত সৌন্দর্য বিনষ্ট করা হয়েছে। তারা বলেন, ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি এই সিঁড়ি। কোন সমস্যা হয়নি। আজ সমস্যা হবে কেন? লোহার জঞ্জাল তুলে নিয়ে সিঁড়ির পূর্বের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তারা। আর মাত্র কয়েকদিন। এর পর শুরু হচ্ছে ভাষার মাস। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলাও। প্রতি বছরের মতো এবারও মেলার আয়োজন করছে জাতির মননের প্রতীক বাংলা একাডেমি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অমর একুশের গাঢ় আবেগ ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। পেরেক ঠোকার শব্দ, করাতের ধ্বনি দিচ্ছে উৎসবের আগমনী বার্তা। মূল মেলা অনুষ্ঠিত হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অধিকাংশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এখানে নিজেদের বই প্রদর্শন ও বিক্রি করবে। মেলায় থাকবে সাড়ে চার’শর মতো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমি ছাড়াও নামকরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ্ছে প্যাভিলিয়ন সুবিধা। অন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো সাজাচ্ছে এক দুই তিন ও চার ইউনিটের স্টল। উভয় অংশ মিলিয়ে ইউনিট হবে ৬৫০টি। সোমবার লটারি শেষে প্রকাশকদের স্টল বুঝিয়ে দিয়েছে একাডেমি। এর পর থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে বিভিন্ন সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের নিজস্ব স্টল সাজাচ্ছে। বহেরা তলায় প্রস্তুত লিটলম্যাগ চত্বর। একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি বিশেষ স্টল নির্মাণ করা হচ্ছে। স্টলটি থেকে প্রতিদিন প্রকাশিত বইয়ের তালিকা পাওয়া যাবে। প্রকাশিত বইয়ের একটি করে কপিও রাখা হবে। এছাড়া বর্ধমান হাউসের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে মেলা মঞ্চ। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫৫০ ইউনিটের স্টল। স্টল সাজানোর কাজ হচ্ছে এখন। এবার প্রথমবারের মতো স্টলের উপরিভাগে দেয়া হয়েছে টিনের ছাউনী। আয়োজক একাডেমির প্রস্তুতি সম্পর্কে মেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, আমরা প্রকাশকদের স্টল বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা তাদের নিজেদের পছন্দমতো স্টল সাজিয়ে নেবেন। এই কাজ শেষ করতে হবে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে। মেলা সফল করতে বাকি সব প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি। ঢাকায় এখন চলছে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। প্রধান ভেন্যু জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন। এখানে উৎসবের আমেজটা টের পাওয়া যাচ্ছে। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে ১২৫ জন শিশু প্রতিনিধি। উৎসবে যোগ দেয়া বিদেশী অতিথি আছেন ১৮ জনের মতো। সবার উপস্থিতিতে মুখরিত গণগ্রন্থাগার চত্বর। পরিচালক মোহাম্মদ আবীর ফেরদৌস জানান, সাতদিনব্যাপী আয়োজনে বাংলাদেশসহ ৫৪টি দেশের দুই শতাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। জাতীয় গণগ্রন্থাগারের মিলনায়তনে প্রতিদিন ৪টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেলা ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় দেখা যাচ্ছে ছবি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ভেন্যু জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ধানম-ি ও উত্তরা শাখা, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে উৎসব। উৎসব শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি।
×