ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিনা বিচারে এক যুগের বেশি কারাবন্দী ৫ জনের জামিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

বিনা বিচারে এক যুগের বেশি কারাবন্দী ৫ জনের জামিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিনা বিচারে এক যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা এক গারো তরুণসহ পাঁচজনকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া আরও দুই আসামির মামলা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার জন্য গঠন করা আট জেলার কমিটির ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জেলাগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঝালকাঠি ও সিলেট। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছেন। উল্লেখ্য, ৫ থেকে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বিনা বিচারে আটক এমন ৪৬২ জন বন্দীর তালিকা হাতে পেয়েছে সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটি। একই সঙ্গে তালিকায় ১০ থেকে ১৭ বছর ধরে দেশের ২৪টি কারাগারে ৬০জন বন্দী বিচারাধীন অবস্থায় আটক রয়েছেন। তালিকা যাচাই বাছাই করে লিগ্যাল এইড কমিটির আইনজীবীরা তা পর্যায়ক্রমে আদালতে উপস্থাপন করছেন। এক যুগ পর কারাগারে আটক ৫ বন্দীকে জামিন ও ২ জনকে তিন মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই সাতজনকে বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার পর তাদের বক্তব্য শুনে বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএইচ মোঃ নুরুল হুদা জায়গীরদারের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। সাত আসামির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী বেহেশতী মারজান। আদালতের আদেশের পর আইনজীবী বেহেশতী মারজান সাংবাদিকদের বলেন, সাইদুর ও রাজীব হোসেন এর আগে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আদালত তাদের জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করেনি। জামিন পাওয়া পাঁচজন হলেন- কুষ্টিয়ার রাসেল শেখ, মতিঝিলের মাসুদ, গাজীপুরের বোর্ড বাজারের বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পারভেজ ও নেত্রকোনার গারো তরুণ লিটন। দুটি হত্যা মামলায় রাজধানীর বাড্ডার সাইদুর রহমান ও কেরানীগঞ্জের রাজীব হোসেন এর আগে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ায় তাদের জামিন না দিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয় আদালত। রাসেল শেখ, কুষ্টিয়া সদরের আইয়ুব শেখের ছেলে রাসেল শেখ ২০০৪ সালে কাফরুল থানায় একটি মামলায় ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-৩ ঢাকায় বিচারাধীন এ মামলায় তাকে এ পর্যন্ত ৫৫ কার্যদিবস হাজির করা হয়। সাইদুর রহমান,বাড্ডার আদর্শনগরের তাইবুর রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান নারী নির্যাতনের এক মামলায় ২০০৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। ঢাকার নারী ও শিশু আদালত-৪ বিচারাধীন এ মামলায় সাইদুরকে ৫৯ বার আদালতে হাজির করা হয়। রাজীব হোসেন, কেরানীগঞ্জের ইমানদীপুরের মাহবুব আলমের ছেলে রাজীব হোসেন খিলগাঁও থানায় দায়ের করা এক মামলায় ২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-৪ ঢাকায় বিচারাধীন এ মামলায় ৪৪ কার্যদিবস হাজির করা হয়েছে। মোঃ পারভেজ, বি-বাড়িয়ার পৈতলার চান মিয়ার ছেলে মোঃ পারভেজ কোতোয়ালি থানায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে করা এক মামলায় ২০০৪ সালের ২ জুলাই থেকে কারাগারে রয়েছেন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত-৩ বিচারাধীন এ মামলায় পারভেজকে ৪২ কার্যদিবসে আদালতে হাজির করা হয়েছে। মাসুদ মতিঝিলের ওবায়দুর রহমানের ছেলে, শ্যামপুর থানার এক মামলায় ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে কারাগারে রয়েছেন। অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-২ ঢাকায় মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। লিটন, নেত্রকোনার কলমাকান্দার চেংগিনি এলাকার প্রসেন সাংমার ছেলে লিটন উত্তরা থানায় দায়ের হওয়া এক মামলায় ২০০৫ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-৮ ঢাকায় বিচারাধীন এ মামলায় ৫৮ কার্যদিবস হাজির করা হয়েছে। বাবু গাজীপুরের জয়দেবপুরের বোর্ডবাজার এলাকার শাহাবুদ্দিনের ছেলে। রমনা থানায় দায়ের হওয়া নারী নির্যাতনের এক মামলায় ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত-৩ বিচারাধীন এ মামলায় বাবুকে ৪৪ কার্যদিবসে আদালতে হাজির করা হয়েছে। একটি টেলিভিশন চ্যানেল এই সাতজনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করলে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী বেহেশতী মারজান বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এরপর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কারাবন্দী সাতজনকে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে আদালত। কেন তাদের জামিন দেয়া হবে না- রুলে তা জানতে চায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ। ওই সাতজনই বিভিন্ন মামলায় এক যুগের বেশি সময় ধরে কাশিমপুর-২ কারাগারে রয়েছেন। ৮ জেলার কমিটি স্থগিত ॥ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার জন্য গঠন করা আট জেলার কমিটির ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জেলাগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঝালকাঠি ও সিলেট। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের করা এক রিট আবেদনের শুনানি করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোঃ মনিরুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। আইনজীবী মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, ২১ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আট জেলার কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। এতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সরদার আব্দুল মালেককে বাদ দিয়ে ডেপুটি কমান্ডার মোঃ মজিবুল হক মিয়াকে কমিটিতে রাখা হয়। নিয়ম হচ্ছে কমান্ডার থাকবে। কিন্তু কোটালীপাড়ায় কমান্ডারকে রাখা হয়নি। তাই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন আব্দুল মালেক।
×