ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে সংবর্ধনা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টকে সংবর্ধনা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সফর সামনে রেখে এখন ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য চলছে প্রস্তুতি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। তিনি ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা সফরের প্রস্তুতি হিসেবে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব্ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চীফ প্রটোকল অফিসার এ কে এম শহীদুল করিম। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে বিমানবন্দরে উষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হবে। এছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক সাজানো হবে। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মাহমুদ আব্বাসকে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও কিংবা হোটেল লা মেরিডিয়ানে রাখার জন্য আলোচনা হয়েছে। এর যে কোন একটি হোটেলে তিনি অবস্থান করবেন। তবে মাহমুদ আব্বাসের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয় বৈঠকে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঢাকায় এসে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এমন একটা সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসছেন, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরাইলকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনও অবশ্য বরাবরের মতো ইসরাইলকে সমর্থন দিয়েছিল। এর আগের ওবামা সরকার শেষ সময়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপনের নিন্দা প্রস্তাবে ভেট দেয়নি। তবে ইসরাইলের তেল আবিবে থাকা মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নেয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অঙ্গীকারের বিষয়ে আলোচনা মাত্র শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও তার জনগণের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। ইসরাইলের আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের পক্ষেও কথা বলে আসছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি দিন দিন বিশ্বের সমর্থন বাড়ায় সে দেশের মানুষের জীবনেও পরিবর্তন আসছে। ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পতাকা তোলা হয়। তবে ঢাকা সফরের সময় ফিলিস্তিনের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন মাহমুদ আব্বাস। এছাড়া তিনি মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রশিদ মালিকী। তিনি গত ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় এসেছিলেন। দুই দেশের মধ্যে কি কি চুক্তি হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করে গেছেন রশিদ মালিকী। সে সময় ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে মুক্ত বাণিজ্য করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। বাংলাদেশ সেই প্রস্তাবটি যাচাই বাছাই করেছে। মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়ে একটি চুক্তির প্রস্তুতি চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের অনেক শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে। মাহমুদ আব্বাসের ঢাকা সফরে ফিলিস্তিনের আরও বেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে যেন পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে সে বিষয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঁচিশ বছর পূর্তিতে ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ঢাকায় এসেছিলেন। তবে ইয়াসির আরাফাতও একাধিকবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করেছেন। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সফরের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপ্রধানরা ঢাকার বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করে থাকেন। সে কারণে ১৩ ফেব্রুয়ারি জাপান যাওয়ার সময় ঢাকায় যাত্রাবিরতি করেছিলেন মাহমুদ আব্বাস। সে সময় তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে ২০১০ সালে জাপান ও কোরিয়া সফরের সময়ও ঢাকায় যাত্রা বিরতি করেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
×