ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত হবে

ড. ইউনূস গ্রামীণের নামেঅবৈধ কর সুবিধা নিয়েছেন ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

ড. ইউনূস গ্রামীণের নামেঅবৈধ কর সুবিধা নিয়েছেন ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গ্রামীণের নামে গড়া মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ কর সুবিধা নেয়ার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, গ্রামীণের যত প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে তার অনুকূলে তিনি অবৈধভাবে কর সুবিধা নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এ এমডির বিভিন্ন কর্মকা- এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর না দেয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনা করার একদিন পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ইউনূস মামলা করে তার স্থায়ী আমানতের কর দিচ্ছেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে বলেন, তার টাকা আছে প্রচুর। ট্যাক্স দেন না। মামলা করে রেখে দিয়েছেন। ট্যাক্স না দিয়ে ভালই চলছেন। কোথা থেকে এলো এ টাকা? এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনি। এটা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি মামলা করে রেখে দিয়েছেন। ট্যাক্স না দিয়ে ভালই চলছেন। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলে বিশাল আকারে দেখানো হয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কী ভাবছেন, সাংবাদিকরা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা একটি কঠিন বিষয়। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের নামে অনেক কর সুবিধা নিয়েছেন। এগুলো তদন্ত হওয়া উচিত। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পক্ষ থেকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়। এ সময় অর্থমন্ত্রীর কাছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা চেয়েছে বেসিস। অর্থমন্ত্রী নগদ সহায়তার বিষয়ে কোন আশ্বাস দেননি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহজ ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও উদ্যোক্তাদের জন্য ইক্যুইটি এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ড (ইইএফ) বর্তমানে বন্ধ আছে। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ইইএফ আবার শুরু করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, শুরু করা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে, জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় আরও উপস্থিত ছিলেনÑ অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী, বেসিসের বর্তমান সভাপতি মোস্তাফা জব্বার, সাবেক সভাপতি শামীম আহসান প্রমুখ। প্রসঙ্গত, নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থ এক তহবিল থেকে অন্যটিতে সরানোর অভিযোগ ওঠার পর ২০১১ সালে অবসরের বয়স পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আইনী লড়াইয়ে গেলেও তাতে হেরে যান ইউনূস। এছাড়া অবসরের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর আরও ১১ বছর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে দায়িত্ব পালনকালে বেতন ও অন্যান্য ভাতা বাবদ ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৪ টাকা নিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। ইতোপূর্বে এক প্রতিবেদনে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর দায়িত্ব পালনের সময় ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে দেশের ভেতরে ভ্রমণ ব্যয় বাবদ ৮০ হাজার ৬৫ টাকা নিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে মুহাম্মদ ইউনূসের এ বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন বৈধ ছিল কি-না, ওই সময়ে তিনি কিভাবে কত টাকা ব্যাংক থেকে নিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখতে গত বছরের ২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রিসভা। সে অনুযায়ী গত বছরের ৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তথ্য চায়। গত ২০০০ সালের জুন থেকে ২০১১ সালের মে পর্যন্ত সময়ে ইউনূস মোট ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৪ টাকার আর্থিক সুবিধা গ্র্রহণ করেন। এর মধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ নিয়েছেন ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪১ টাকা এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বাবদ নিয়েছেন ২ লাখ ১৬৩ টাকা। এদিকে, ১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হওয়ার পর থেকেই ইউনূস এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে এলেও ২০১১ সালে বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়, তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৭১ বছর।
×