ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে শান্তিময় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশকে শান্তিময় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই

নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ থেকে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তিময় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইন্্শাআল্লাহ্। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার মানিকদাহ হাউজিং প্রকল্পের বঙ্গবন্ধু এরিনায় ৭ দিনব্যাপী ১১তম জাতীয় রোভার মুট উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী রোভার স্কাউটসদের সেবার প্রশংসা করে বলেন, তোমাদের সেবাধর্মী কাজ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। আত্মমর্যাদাশালী দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। তোমরাই হবে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার সোনার সন্তান। তোমাদেরকে ফুলের মতো সৌরভ ছড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, সততাই হচ্ছে শক্তি। এখন তোমরা যারা ছোট তারা সততা, দৃঢ়তা ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চরিত্র গঠন করে আগামীতে তোমাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। স্কাউটের গুণগত মান আরও বৃদ্ধি করার জন্য স্কাউটদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে স্কাউটের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। আমি জেনেছি, বাংলাদেশ স্কাউটস্ ২০২১ সালে ২১ লাখ স্কাউট তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২টি কাব স্কাউট দল, ২টি স্কাউট ও দুটি রোভার স্কাউট দল চালু করতে হবে। স্কাউট কার্যক্রমে মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্কাউট-আন্দোলনকে জোরদার করতে সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউট শতাব্দী ভবন শীর্ষক ১২২ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য ৯৫ একর বনভূমি স্কাউটদের ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ক্যাম্প-সাইট স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মানিকগঞ্জে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অধিকহারে বৃক্ষ রোপণের কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রোভার স্কাউটদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অগ্নিকা- ও শীতার্ত মানুষের সেবায় তোমরা কাজ করে যাচ্ছ; আশাকরি তোমাদের সেবাধর্মী কাজ আরও বিস্তৃত হবে। তোমাদের স্মরণ রাখতে হবে, আমাদের দারিদ্র্যমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আমরা যে পারি সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। যেটুকু সম্পদ আছে তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ‘শান্তিময় দেশ, উন্নত দেশ’-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রোভার স্কাউটসের উদ্যোগে আয়োজিত এ রোভার মুটে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুট চিফ ও প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান, মুট সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ্ কামাল। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপি, শেখ রেহানার ছেলে ববি সিদ্দিকী, শেখ সেলিমের ছেলে এফবিসিসিআইর পরিচালক শেখ ফজলে ফাহিম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ-সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চুসহ স্কাউটস্্ ও রোভার স্কাউটসের নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০:৫৫টায় ঢাকা থেকে হেলিকাপ্টারযোগে গোপালগঞ্জ পৌঁছে মানিকদহের রোভার মুট অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন। এ সময় তাকে স্বাগত জানান, বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মুট চিফ ড. মোজাম্মেল হক খান ও সাংগঠনিক সভাপতি মোঃ শাহ্্ কামাল। এ সময় তাকে মুট ক্যাপ, ব্যাজ ও টুপি প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয়া হয়। পরে অনুষ্ঠানে প্রার্থনা সঙ্গীত ও মুট পতাকা হস্তান্তর করা হয়। এরপর পতাকা অভিবাদন ও প্রধানমন্ত্রীকে স্কাউট সালাম জানানো হয়। এ সময় প্যারেড পরিচালনা করেন প্যারেড কমান্ডার নৌ রোভার স্কাউটের অমিতা চাকমা। বেলা ১১:৩৬টায় প্রধানমন্ত্রী পায়রা উড়িয়ে মুটের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর তিনি পরে স্মারক ডাক টিকেট ও ফার্স্ট ডে কভার অবমুক্ত করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন রোভার স্কাউট দলের ডিসপ্লে প্রদর্শন ও তাবু এলাকা পরিদর্শন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল উৎসবের আমেজে পরিপূর্ণ। এ রোভার মুটে জাতীয় ৪ নেতার নামে স্থাপিত ৪টি ভিলেজে এবং টুঙ্গিপাড়ায় শেখ ফজিলাতুন্নেসা ক্যাম্পেন ক্যাম্পে নেপালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ হাজার রোভার অংশ নিয়েছে। সেই সঙ্গে ১৫টি চ্যালেঞ্জিং কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছে। বেলা পৌনে ১টায় তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্জনÑ প্রধানমন্ত্রী ॥ বেলা পৌনে ২টায় সড়ক পথে গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়ায় যান। সেখানে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহাপাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করেন। রাতে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু ভবনে রাত্রিযাপন করবেন। শুক্রবার বেলা আড়াইটায় টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
×