ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখন আর স্বপ্ন নয়;###;সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি ও ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ শেষ ;###;চূড়ান্ত মূল্যায়ন ও সংশোধনের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে জাপানী কোম্পানি নিপ্পনকে ;###;চূড়ান্ত অনুমোদনের পর দরপত্র;###;বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী সেবা প্রদানের সক্ষমতা;###;বারোটি বোর্ডিং ব

আগামী জানুয়ারিতে কাজ শুরু ॥ থার্ড টার্মিনাল ৩০ লাখ বর্গফুটের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

আগামী জানুয়ারিতে কাজ শুরু ॥ থার্ড টার্মিনাল ৩০ লাখ বর্গফুটের

আজাদ সুলায়মান ॥ বারোটি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রতি চারটির জন্য একটি লিফট। বারোটি কনভয় বেল্ট। বিশটা চেকইন কাউন্টার। প্রতিটিতে সিকিউরিটি স্ক্যানার। ঘণ্টায় দুই হাজার যাত্রীর লাগেজ স্ক্যান করার অত্যাধুনিক চেকিং কাউন্টার। থাকছে ১২শ’ গাড়ির পার্কিং সুবিধা। বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীর সেবা প্রদানের সক্ষমতা। এভাবেই ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় সাজানো হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের দৃষ্টিনন্দন এক ড্রয়িং ডিজাইন। বিশ্বখ্যাত কোরিয়ার ইনশিয়ন কোম্পানি এক বছর ধরে যৌথভাবে এ প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি ও ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ করেছে। এখন এটার চূড়ান্ত মূল্যায়ন ও সংশোধনের জন্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে জাপানের শীর্ষ পরামর্শক কোম্পানি নিপ্পনকে। নিপ্পন চূড়ান্ত অনুমোদন দেবার পরই দরপত্র ডাকা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যাদেশ দিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হবে বহুল আলোচিত থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরীর মতে, থার্ড টার্মিনাল এখন আর কোন স্বপ্ন বা পরিকল্পনার বিষয় নয়। এ প্রকল্পটির উদ্বোধন এখন সময়ের ব্যাপার। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই এ প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার আয়োজন চলছে। এভাবেই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে থার্ড টার্মিনালের স্বপ্ন। অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলীর স্বাক্ষর হয়ে থাকবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের এই থার্ড টার্মিনাল। এটা নির্মাণ হয়ে গেলে, দেশের এভিয়েশন সেক্টর পৌঁছে যাবে নতুন উচ্চতায়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সুনাম ছড়াবে। সিভিল এভিয়েশন জানায়, এ প্রকল্পের আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জাইকার উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় সফরে আসে। হলি আর্টিজানের ঘটনায় এ দেশে জাইকার নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের ভবিষ্যত কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ায় জানুয়ারি মাসে তা আবার আশার আলো দেখতে পায়। সরকারের অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প বা থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজকেও অগ্রাধিকার হিসেবে আমলে নেয় জাইকা। এ প্রকল্প নিয়ে জাইকার প্রতিনিধিরা বহিঃসম্পদ বিভাগ ও সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। এতে উভয়পক্ষই সম্মত হয়। এ সময় প্রকল্পের ব্যয়, সময়সীমা ও ডিজাইন নিয়েও তারা একমত হন ও সন্তোষ প্রকাশ করেন। জাইকা সিভিল এভিয়েশনকে নিশ্চিত করে, প্রকল্প ব্যয়ের চৌদ্দ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব খুব শীঘ্রই জাপান সরকারের অনুমোদন পাবে। সিভিল এভিয়েশনের সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, থার্ড টার্মিনালের প্রাথমিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ও ড্রয়িং ডিজাইন জাইকার প্রতিনিধি দলকে উপস্থাপন করার পর তারা যথেষ্ট আশাবাদী হয়ে ওঠে। কত দ্রুততম সময়ে এ প্রকল্প শুরু করা যাবে সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন চলছে আরও একটি পরামর্শক নিয়োগের কাজ। নিপ্পন নামের জাপানেরই একটি কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়ার সব প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হবার পথে। নিপ্পনের কাজ হবে- ইতোমধ্যে যে সমীক্ষা প্রতিবেদন ও ড্রয়িং ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে, সেটাকে মূল্যায়ন, সংশোধন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা। এছাড়া টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরির পর প্রকাশ করা। এ কাজটা শেষ করতে হয়ত ডিসেম্বর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। কারণ যে কোন মূল্যে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরু করতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই এখন চলছে বিভিন্ন ধাপের প্রক্রিয়া। সিভিল এভিয়েশান সূত্র জানায়, সমীক্ষা প্রতিবেদনের এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা ও সময়সীমা ধরা হয়েছে সাড়ে তিন বছর। জাইকার আর্থিক সহায়তায় এটি নির্মাণ করা হবে। সমীক্ষা প্রতিবেদন ও ড্রয়িং ডিজাইনে থার্ড টামিনাল নির্মাণের জন্য বর্তমান ভিভিআইপি লাউঞ্জের দক্ষিণাংশকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। পদ্মা ওয়েল ছাড়াও ওই এলাকায় রয়েছে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের পুরনো ফ্লাইং ক্লাব, কয়েকটি দেশী-বিদেশী হেলিকপ্টার সার্ভিসের হ্যাঙ্গার ও আর্মি এভিয়েশনের ইউনিট। এ সব প্রতিষ্ঠান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উত্তর পাশে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মালিকদের ডেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারা সেটা মেনেও নিয়েছেন। খুব শীঘ্রই এসব স্থাপনা সরানোর কাজ শুরু হবে। প্রশ্ন করা হলে মেম্বার অপারেশান এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রাথমিক সমীক্ষা ও ড্রর্য়িং ডিজাইনে যা প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো নিয়েই নিপ্পনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কয়টা বোর্ডিং ব্রিজ, কয়টা চেক-ইন কাউন্টার, কয়টা লাউঞ্জ রাখা হবে, নাকি বাদ দেয়া হবে, সেটা নিয়ে আরও বিবেচনা করতে হবে। তবে যে ড্রয়িং ডিজাইন করা হয়েছে সেটাকে মূল ধরেই কাজ করবে নতুন পরামর্শক কোম্পানি নিপ্পন। কাজেই এতে বেশি ব্যয় হবে না। জানা যায়, সমীক্ষা প্রতিবেদনে থার্ড টার্মিনালের স্থান হিসেবে বর্তমান টার্মিনালের দক্ষিণাংশ থেকে সোজা দক্ষিণের পদ্মা ডিপো পর্যন্ত স্থানটিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। থার্ড টার্মিনাল করতে হলে এখানেই করতে হবে। সেক্ষেত্রে সরিয়ে নিতে হবে এখানকার সব স্থাপনা। যে স্থানে থার্ড টার্মিনাল করার জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই বা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেখানে বিপুলসংখ্যক সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। আছে বিমানের সদর দফতর বলাকা, ভিভিআইপি টার্মিনাল, পদ্মা ওয়েল ডিপো, দীর্ঘ ৫০ বছরের পুরনো ফ্লাইং ক্লাব, বেসরকারী এয়ারলাইন্স আরিরাং, হেলিকপ্টার সার্ভিসেস আর এ্যান্ড আর এভিয়েশন, বাংলা এয়ার, স্কয়ার এয়ার, বিআরবি এয়ার, মেঘনা এয়ার, পিএইচপি ও আর্মি এভিয়েশান। আরও আছে সেমসূ, আর্মড পুলিশের কোয়ার্টার, পুকুর, জলাশয় ও বাগান। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ইকবাল করিম জানান, বর্তমানে বছরে কমবেশি ৬৫ লাখ যাত্রীর সেবা দেয়া হচ্ছে এখানে। যে হারে যাত্রী বাড়ছে তাতে বছর শেষে হয়ত আর কমপক্ষে লাখ পাঁচেক যাত্রী বাড়বে। ২০২০ সালে সেটা আশি লাখের মতো বাড়বে। এত সংখ্যক যাত্রী বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে সামাল দেয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কেননা আরও কয়েকটি এয়ারলাইন্স পাইপ লাইনে রয়েছে। তারা ফ্লাইট সিডিউল চাচ্ছে। এ অবস্থায় সিডিউল দেয়ার আগে বিমানবন্দরে সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। যেমন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং আরও গতিশীল করার জন্য বিমানকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিমান প্রয়োজনীয় জনবল নেবে, যন্ত্রপাতি কিনবে। তখন পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে। একই সঙ্গে বর্তমানের ফ্লাইট সিডিউল ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে। এখন একটা বিশেষ সময়ে অধিকাংশ ফ্লাইট একসঙ্গে ওঠানামা করছে। নতুন ফ্লাইটকে সিডিউল দেয়ার আগে শর্তই থাকবে- সিভিল এভিয়েশনের সুবিধামতো সময়ে সিডিউল মেনে নিতে হবে। তারপর সব ফ্লাইটের এমনভাবে সিডিউল সাজানো হবে যাতে পিক আওয়ারের মতো কঠিন পরিস্থিতি দেখা না দেয়। যেহেতু বর্তমানের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২-এ যে বেল্ট ও জায়গা আছে তা বাড়ানোর কোন উপায় নেই। এ সীমিত স্থানেই সব কিছু সামাল দিতে হবে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট দিয়ে। এ জন্য সিভিল এভিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে চেকইন কাউন্টার ও কনকর্স হলের মাঝখানের গ্লাস ফেন্স খুলে ফেলার। যাতে এখানে বেশিসংখ্যক যাত্রী একসঙ্গে দাঁড়ানোর সুবিধা পান। জানা যায়, বিগত মহাজোট সরকারের আমলের বিমানমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খান এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তাব উপস্থাপনের পর নেয়া হয় থার্ড টার্মিনালের উদ্যোগ। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে সিঙ্গাপুরের সিপিজে, কোরিয়ার ইউনসিন ও বাংলাদেশের শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডিডিসি যৌথভাবে থার্ড টার্মিনালের সমীক্ষা, নক্সা ও আকৃতি তৈরির কাজ করে। এদেরই হাতে তৈরি করা সমীক্ষা প্রতিবেদন ও ড্রয়িং ডিজাইনেই এখন চূড়ান্ত মূল্যায়ন ও যাচাই বাছাইয়ের জন্য কাজ করবে নতুন কনসালট্যান্ট নিপ্পন কোং। আগামী তিন মাসের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের ড্রয়িং ডিজাইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই দরপত্র ডাকা হবে। যা ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রকৌশল বিভাগ। এ সম্পর্কে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, যে কোন মূল্যে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করতে হবে। কেননা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আংশিক হলেও এটি চালু করতে হবে। এটি বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহ যে কোন মূল্যে যত দ্রুত সম্ভব এর কাজ শুরু করা। সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী বলেছেন, সিঙ্গাপুর কোরিয়ার যে দুটো প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে থার্ড টার্মিনালের ড্রয়িং ও ডিজাইন করেছে, তাদের রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ দশটি বিমানবন্দরের ডিজাইন তৈরির অভিজ্ঞতা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্ট ও কোরিয়ার ইনচেন এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্টের ডিজাইন করে এই কোম্পানী বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। সে বিবেচনায় তাদের নিয়োগ দেয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই থার্ড টার্মিনালের ডিজাইন ও ড্রয়িং তৈরি কাজ শেষ করে এবং প্রকল্পটি ব্যয় ও সময়সীমাও নিধার্রণ করে দিয়েছে। এখন সেটার ওপর কাজ করবে নিপ্পন। আশা করা যাচ্ছে- আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দরপত্রের কাজ শেষে কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হবে। জানুয়ারির দিকে প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করার লক্ষ্য নিয়েই পূর্ণ গতিতে চলছে কাজ। তিন বছর প্রকল্পের মেয়াদ হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আংশিক উদ্বোধনের লক্ষ্য নিয়েই কাজ ত্বরান্বিত করা হবে। প্রকৌশল বিভাগ জানায়, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের স্থান হিসেবে প্রাথমিকভাবে বর্তমানের ভিভিআইপি টার্মিনাল থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিকের হেলিপ্যাাড টার্মিনাল পর্যন্ত সুবিস্তৃত জায়গা বাছাই করা হয়েছে। এ জন্য হেলিকপ্টার টার্মিনাল কার্গো হাউহের উত্তর দিকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে নোটিস দেয়া হয়েছে। থার্ড টামির্নাল নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই সেসব স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হবে। স্থানান্তর করা হবে চার দশকের পুরনো ফ্লাইং ক্লাবও। প্রস্তাবিত ডিজাইনে দেখা যায়, থার্ড টার্মিনালের কাজ শুরু হবার আগেই হযরত শাহজালালের উত্তর পাশে নির্মাণ করা হবে জেনারেল এভিয়েশন। যা সিভিল এভিয়েশন নিজ খরচে তৈরি করে দেবে বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলোকে। তবে বড় দুটো এভিয়েশন কোম্পানি শিকদার গ্রুপের আর এ্যান্ড আর এভিয়েশন এবং আরিরাং নামের দুটো প্রতিষ্ঠানকে আলাদা আলাদা হ্যাঙ্গার করে দেয়ার প্রস্তাবও বিশেষ বিবেচনায় রয়েছে। থার্ড টার্মিনালের কাজ শেষ হবার পর বর্তমানের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া হবে শাহ জালালের ১ নং টার্মিনালে। ভিভিআইপি সরিয়ে নেয়া হবে আরও দক্ষিণে পদ্মা ডিপোর কাছাকাছি। বর্তমান আমদানি রফতানি কার্গো সরানো হবে উত্তরে। শতভাগ অটোমেশান সিষ্টেম চালু করা হবে এ দুটো কার্গোতে। কি কি থাকছে নতুন টার্মিনালে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী বলেন, আধুনিক বিশ্বের অন্যান্য এয়ারপোর্টের মতোই সব ধরনের সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অবকাঠামোগত সুবিধা রাখা হবে এখানে। পর্যাপ্ত বোডির্ং ব্রিজ, লিফট, চেকইন কাউন্টার, কনভেয় বেল্ট, ডিজিটালাইজ লাগেজ কেরিয়ার, ভিআইপি লাউঞ্জ, পর্যাপ্ত দোকান, রেস্তরাঁ, ইমিগ্রেশান পয়েন্ট, কার পার্কিংসহ যাত্রী ছাউনি। থার্ড টার্মিনালে যোগাযোগের জন্য রাখা হচ্ছে আন্ডারপাস, ওভারপাস, ফ্লাইওভার। দক্ষিণ দিক থেকে মেইন রোড ধরে যদি লা মেরিডিয়ান পয়েন্ট থেকে বামে মোড় নিয়ে সোজা একটি সুবিস্তৃত লেন চলে যাবে টার্মিনালে নিচ ও উপরের তলায়। টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গোল একাধিক লেনের রাস্তার চলে যাবে গোলচক্করে। উত্তরা গাজীপুর থেকে আসা যাত্রীরা আসবেন বলাকার সামনে থাকা একটি ইউলুপ দিয়ে টার্মিনালে প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন। ত্রিশ লাখ বর্গফুটের এই টার্মিনালের প্রতিটি কাউন্টার এমনভাবে সাজানো হবে যাতে কোন অবস্থাতেই যাত্রীদের ভিড় না জমে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞের মতে, ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন্স অব ট্রাভেলস এজেন্টসের (আইএটিএ) গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বে যাত্রী বৃদ্ধির শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। যাত্রী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে বিদেশগামী শ্রমিকের উর্ধমুখী অবস্থান। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশের দরুন যাত্রী বৃদ্ধি পাচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করলেও সেটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে বড়জোর দশ থেকে পনেরো বছর। তারপর কি হবে? সেটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে ২০৩২ সাল পর্যন্ত। যখন যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে কমপক্ষে দেড় কোটি। তখন কিভাবে এসব যাত্রী মোকাবিলা করা হবে? তখন তো থার্ড টার্মিনাল দিয়েও সামাল দেয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে নতুন করে একটা বিশাল বিমানবন্দর নির্মাণ করতে হবে। যা করতে সময় লাগবে, কমপক্ষে দশ বছর থেকে পনেরো বছর। এ বাস্তবতায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে নতুন একটি বিমানবন্দর নির্মাণের। সেজন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প নিয়ে ঢিলেমি করারও কোন অবকাশ নেই। যে কোন মূল্যে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট নির্মাণের। সাবেক বিমানমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খানও জনকণ্ঠকে বলেন, থার্ড টার্মিনালের চাইতেও বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট নির্মাণের ওপর বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত। বিগত সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট প্রকল্পের কাজ অনেকটাই অগ্রসর হয়েছিল। আমি নিজে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আশ্বাস আদায় করেছিলাম, তারা পৃথিবীর সেরা ইনচেন এয়ারপোর্টের মতো বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট তৈরি করে দেবে। বিওটি পদ্ধতিতে তারা অর্থায়নেও আগ্রহী ছিল। তবে পদ্মা সেতুর মতোই গুরুত্ব দিয়ে এখনই উচিত বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
×