ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকা ও ব্রিটেন একযোগে নেতৃত্ব দেবে ॥ টেরেসা মে

নবায়িত হবে বিশেষ সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

নবায়িত হবে বিশেষ সম্পর্ক

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে এই নতুন যুগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করবেন। তিনি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করার প্রস্তুতিপর্বে এ মর্মে সংকল্প ব্যক্ত করবেন। মে বৃহস্পতিবার ফিলাভেলফিয়ায় এক অনুষ্ঠানে রিপাবলিকান নেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে কথা আছে। খবর বিবিসি ও টেলিগ্রাফ অনলাইনের। ব্রেক্সিট ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ব্রিটেন ও আমেরিকা তাদের আস্থা নতুন করে আবিষ্কার করবে এবং আবার একসঙ্গে নেতৃত্ব দেবে। মে তার ভাষণে এ কথা বলবেন বলেও জানা যায়। মে তাদের উদ্দেশে এ কথা বলবেন যে, বেক্সিটের পর এক ‘সার্বভৌম’ ব্রিটেন তার পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। শুক্রবার মে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে মিলিত হবেন। মে-ই হবেন প্রথম বিশ্বনেতা যিনি ট্রাম্পের সঙ্গে এরূপ বৈঠকে মিলিত হবেন। ওই আলোচনায় ব্রেক্সিটপরবর্তী বাণিজ্য সুবিধা, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সহযোগিতা ও ন্যাটোর ভবিষ্যত প্রাধান্য পাবে। মে ইতোপূর্বে বলেন যে, তার লক্ষ্য হলো তাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থের বন্ধনে আবদ্ধ দুটি জাতির মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়া। কিন্তু তিনি বলেন, তিনি যেসব বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন সেসব বিষয়ে তার সঙ্গে স্পষ্টভাষায় কথা বলতে ভীত হবেন না। ব্যবসায়ী ট্রাম্প অতীতে নারী ও মুসলিম সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছিলেন, মে সেগুলোর সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হওয়ার মতো প্রথম বিদেশী নেতা হওয়া মের জন্য এক সৌভাগ্য বলেই দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জোরালো ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং ব্রেক্সিটের প্রতি তার সমর্থনকে কাজে লাগাতে উদ্গ্রীব। ট্রাম্প ব্রেক্সিটকে এক বুদ্ধিমানের পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন। এ্যানুয়েল রিপাবলিকান রিট্রিটে মে তার ভাষণে আধুনিক বিশ্বে এবং ন্যাটো ও জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অসাধারণ অবদানের ওপর জোর দেবেন। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে না। কিন্তু ট্রাম্প বলেন, তিনি ব্রেক্সিট ঘটার পর দ্রুত একটি চুক্তি চান এবং দু’নেতা ভবিষ্যত সহযোগিতা নিয়ে কথা বলবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়। ইইউতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হতে পারেন এমন এক অধ্যাপক টেড ম্যালোক বিবিসিকে বলেছেন, কোন অবাধ বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা ৯০ দিনের মধ্যে তৈরি করা হতে পারে। ম্যালোক বলেন, শুক্রবার হোয়াইট হাউসে কোন চুক্তি সই করা হবে না, তবে সেখানে রুদ্ধদ্বার আলোচনার ক্ষমতা দিয়ে এক কাঠামো চুক্তি হতে পারে। তিনি হেনলি বিজনেস স্কুলে কাজ করেন। তিনি বলেন, এটি খুবই ইতিবাচক বলে আমার মনে হয়। এটি এ আভাস দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনের সময় গ্রেট ব্রিটেনের পাশে রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে দেন যে, যদিও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও একেবারে শুরু হতে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নিয়ে আলোচনায় কয়েক বছর লাগতে পারে এবং অনেক বাধা দেখা দিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্বোধনী ভাষণে সংরক্ষণবাদী নীতির প্রতি সমর্থন এবং বিশ্বের বর্তমান বাণিজ্য চুক্তিগুলোর প্রতি তার দৃশ্যত বৈরী মনোভাব সমঅংশীদারির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি এরই মধ্যে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এ্যাগ্রিমেন্টে (নাফটা) বড় ধরনের সংস্কারের আহ্বান জানান। লেবার পার্টি বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পকে অবাধ সুবিধা না দিতে মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দলটি সতর্ক করে দেয় যে, যুক্তরাজ্যের স্বার্থকে অবশ্যই প্রথমে স্থান দিতে হতে এবং যোগ্য নিরাপত্তা মান শিথিল করার এবং সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জন্য বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। মে এমন সময় আমেরিকা সফরে যাচ্ছেন, যখন তার সরকার পার্লামেন্টে এক সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ ৫০ বিল প্রকাশ করছে। এ বিলই ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু করবে। মে তার ভাষণে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে বেক্সিট গণভোটের সঙ্গে তুলনা করবেন। উভয় ভোটই আমেরিকা ও ব্রিটেনের পুনঃজাগরণের সুযোগ করে দিয়েছে বলে তিনি স্পষ্ট করে দেবেন। মের দু’দিনের সফরের প্রস্তুতিমূলক কাজ বড়দিনের আগেই সম্পন্ন হয়। তখন মের দু’ঘনিষ্ঠ সহকারী ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী টিমের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও ট্রাম্প মহলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
×