ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবার আগে শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

সবার আগে শিক্ষা

মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, সবার আগে শিক্ষা। শিক্ষাই সম্পদ। কেবল শিক্ষাই পারে একটি দেশ ও জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। শিক্ষা মানুষকে যাবতীয় সংস্কার ও কূপম-ূকতা পরিহার করতে শেখায়। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত করে শেখায় জিজ্ঞাসু হতে। পরিবার ও সমাজকে অগ্রসর হতে সর্বদাই অনুপ্রাণিত করে। স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার মাধ্যমে উজ্জীবিত করে মনপ্রাণ। সর্বোপরি জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপান খুলে দিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে উন্নীত করে স্বনির্ভর হতে। বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। দেশে ক্রমশ শিক্ষার হার বাড়ছে। বাড়ছে শিক্ষার মানও। প্রতিবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে অগণিত শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ প্রাপ্তিই এর একটি অন্যতম সূচক বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে লেখাপড়ার মান আরও বাড়ানো যেতে পারে। বলা যায় এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। দুনিয়া শনৈঃ শনৈঃ গতিতে এত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন শাখা ও দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সে সব অতি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে শিক্ষার পাঠ্যক্রমে। চলতি বছর এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও মুদ্রণে যে তেলেসমাতি ও অরাজকতা দেখিয়েছে, তা সর্বোতভাবে পরিহার করতে হবে আগামীতে। যোগ্য ও উপযুক্ত লোককে সংযুক্ত করতে হবে এই কার্যক্রমে। মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে কোন গোঁড়ামি ও কূপম-ূকতার স্থান নেই। শিশু শিক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ভাল ও উন্নত পর্যায়ে আছে, এমন কথা বলা যাবে না। আর সে কারণেই সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি। একদিকে উচ্চ শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ। অন্যদিকে একে ক্ষতিগ্রস্ত করছে রাজনীতি, যা মূলত অপরাজনীতি। রাষ্ট্রীয় যে মূলনীতি ও আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে, ১৯৭৫ সালে তা হোঁচট খায় প্রবলভাবে তৎকালে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তার দুঃশাসনে। এ সময়ে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে মাদক, চোরাচালান এমনকি ধর্মীয় উগ্রতা ও সন্ত্রাস প্রবেশাধিকারের সুযোগ পায়। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে ছাত্রদের নিয়ে হিজবুল বাহার জাহাজযোগে বিদেশে বিতর্কিত সফরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এ সময়ে লেখাপড়ার পাঠ প্রায় উঠে যায়; বরং শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ঢুকে পড়ে দলীয় রাজনীতি। আর রাজনীতির খোলসে ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তার, হল দখল, সিটবাণিজ্য, খুনাখুনি, সর্বোপরি মাদক, অস্ত্র ও জঙ্গীবাদ। এহেন আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে ছাত্র রাজনীতি বেরিয়ে এসেছে, এমন কথা বলা যায় না। এমনকি ঐতিহ্যবাহী দল ছাত্রলীগের একাংশও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রেরও এই দলে ঢুকে পড়ার অভিযোগ আছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমস্যা মাদক, অস্ত্র, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোও এর আওতার বাইরে নয়। ফেনসিডিল, ইয়াবার থাবার পাশাপাশি, সরকারী-বেসরকারী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার খবর আছে। এরও প্রতিকার ও প্রতিরোধ হতে পারে শিক্ষা। দলমত গড়ে তুলতে শিক্ষা সহায়ক। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করা যাবে না। এর জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে গড়ে তুলতে হবে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা ও জনমত। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কুফল সম্পর্কে সর্বস্তরের মানুষ অবহিত হলে তা পরিহার করবে অবশ্যই। আর শিক্ষাই এক্ষেত্রে হতে পারে সর্বোত্তম হাতিয়ার।
×