ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রানীনগরে কমছে আবাদি জমি বাড়ছে পুকুর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

রানীনগরে কমছে আবাদি জমি বাড়ছে পুকুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২৫ জানুয়ারি ॥ রানীনগর উপজেলায় এক শ্রেণীর পুকুর ব্যবসায়ী স্থানীয় কৃষকদের ধানি জমি চাষের বদলে বড় পুকুরের মালিক বানিয়ে দেয়ার লোভ দিয়ে ১০ বছর মেয়াদী লিজ প্রক্রিয়া চালু করে জমির মালিককে বোকা বানিয়ে ফসলী জমিতে পুকুর খননের মহোৎসব শুরু করেছে। স্কেবেটার মেশিন দিয়ে আট ফুট গভীর করে জমির চার দিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের ধুম। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা বিরতিহীনভাবে পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় ২৫টি ইটভাঁটিতে বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে একদিকে হারাচ্ছে তাদের পৈত্রিক ফসলী জমি, অন্যদিকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে তথাকথিত পুকুর ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর থেকে এসে এখানে জমি লিজ নিয়ে ফসলী জমিতে পুকুর কেটে ইটভাঁটির মালিকদের সঙ্গে চুটিয়ে মাটি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিকার চেয়ে গত ৭ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি। ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমিও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। জানা গেছে, ইউনিয়নে নদী-নালা, খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলী জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোন না কোন ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় এক শ্রেণীর কৃষক পুকুর ব্যবসায়ী ও ইটভাঁটি মালিকদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে প্রতি বিঘা জমি বছরে ১৪ হাজার টাকা দরে ১০ বছরের জন্য লিজ প্রক্রিয়া চুক্তিনামা করে চাষযোগ্য ফসলী জমিতে বড় বড় পুকুর খনন করছে। আর সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায় ইটভাঁটিতে বিক্রি করছে। জমি দেখে মনে হচ্ছে এ যেন উন্মুক্ত জলাশয়। ভূমি আবাদি জমি। অন্যদিকে পাশের জমির মালিকরা পুকুর পাড়ের প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল বন্ধ হওয়ায় বোরো ধান রোপণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই কেউ চলে যাচ্ছে পুকুর দস্যুদের কাছে আবার কেউ জমি চাষ না করে ফেলে রাখছে। এতে রানীনগরে চলতি মৌসুমেই পাঁচ শ’ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি ৯টি স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাঁটিতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। খননের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে মিরাট ইউপির আয়াপুর ও আতাইকুলা মৌজার ১নং ও ২নং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া বিনতে তাবিব মিরাট ইউপির কয়েকজন কৃষকদের কাছ থেকে মৌখিকভাবে জেনে তাৎক্ষণিক মেশিন দিয়ে পুকুর খনন বন্ধসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ওসি রানীনগরকে নির্দেশ দেন। পুলিশ এক স্কেবেটার চালককে থানায় আনলেও পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়ায় পুকুর দস্যুরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
×