ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা

বাংলাদেশ অনেক দূর যাবে ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশ অনেক দূর যাবে ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ৮৩ পেরিয়ে ৮৪ বছরে পা দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বর্ণাঢ্য এই জীবনে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী, বড় বাজেট প্রণেতা এবং টানা আট বার বাজেট ঘোষণা করার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ ধরে রেখে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আর মাত্র চার বছরের মধ্যে পুরোপুরি মধ্যম আয়ের দেশ হবে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে দেখা হচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন। বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড়, ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জটলা। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে কেউ কেউ নিয়ে আসেন কেক ও মিষ্টি। দীর্ঘ এতটা পথ পাড়ি দেয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, ‘৮৩ পূর্ণ হলো। কাজ করে যাচ্ছি। ফুল টাইম কাজ করে যাচ্ছি, এটা বড় ভাগ্যের ব্যাপার। পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ কৃপার ব্যাপার। আমি আগেও বলেছি, জীবন নিয়ে আমি খুব সন্তুষ্টির মধ্যে আছি। অনেক কাজ করা যায় না। দ্যাট ইজ লাইফ। আই এ্যাম শিওর, মানুষের দোয়া, গুরুজনের দোয়া, মা-বাবার দোয়া আমার ওপর আছে।’ মানুষ কেন আপনাকে মনে রাখবে-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে মনে রাখার যথেষ্ট কারণ আছে। ধারাবাহিক ভাল জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও বড় বাজেট দিয়ে আমাকে মনে রাখা যাবে।...দেশ নিয়ে খুব ভাল স্বপ্ন দেখি। বাংলাদেশ অনেক দূর যাবে। জন্মদিন উপলক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. ইউনুসুর রহমান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন আহমেদ, ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম ও অর্থমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তারা। ওই সময় মন্ত্রী কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এত দীর্ঘ বয়সের অর্থমন্ত্রী বিশ্বে আর নেই, সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না নেই। একসময় চীনে বয়স্ক লোকজন মন্ত্রী হতেন। এখন চীনেও হয় না।’ অর্থমন্ত্রী থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির অনেক দেশেই দেখা গেছে। আপনার ক্ষেত্রে সে রকম কি হতে পারে-এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, হলে হতে পারে। তবে আমার ইচ্ছে করে না। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, ভারতের মনমোহন সিং তো প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন, আমি কী হলাম? সাংবাদিকেরা এটা জানালে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার সে ধরনের কোন ইচ্ছে নেই। মনমোহন সিং সাদাসিধে মানুষ, যুগ্ম সচিব, গবর্নর হয়ে অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন, তারপর প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এ সময় আর্থিক খাতে বড় ধরনের কোন সংস্কার আসবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, খুব বেশি সংস্কার হওয়ার কিছু নেই। বড় ধরনের কোন সংস্কার হবে না। তিনি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ ভাল ভবিষ্যতের দিকে যাবে। আমাদের দেশের মানুষ অনেক ভাল, তারা অন্যের চিন্তা করে। অনেক কাজ করার কথা থাকলেও এর মধ্যে থেকে আমরা কিছু কাজ করতে পেরেছি। তাতে আমি সন্তুষ্ট। কারণ, এ দেশের উন্নয়নে আমার চিন্তা ও দর্শনের প্রতিফলন আছে এবং এ দেশের উন্নয়নের আমিও একজন নীতিনির্ধারক। তিনি বলেন, একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী এবং হতাশা আমাকে কখনই গ্রাস করে না। এর চেয়ে সন্তোষজনক ও সুখকর অনুভূতি একজন মানুষের জীবনে আর কী হতে পারে আমি জানি না। আগামী দিনের স্বপ্ন আমার খুব ভাল। আগামী দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বাংলাদেশের ভাল ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ অনেক ভাল, তারা অন্যের চিন্তা করে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রী নেয়া অর্থমন্ত্রী মুহিত একজন অত্যন্ত মেধাবী ও সফল মানুষ। তিনি ১৯৩৪ সালে সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত। মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চ শিক্ষা নেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনৈতিকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন মুহিত। ওই বছরের জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন তিনি। ১৯৮২-৮৩ সালে তৎকালীন এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব নেন মুহিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবারও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মুহিতের কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×