ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইল সেবায় টেলিনর বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

মোবাইল সেবায় টেলিনর বাংলাদেশে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টেলিনর তাদের প্রথম ‘গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ছয়টি ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ বাজারে টেলিনর গ্রুপের আর্থসামাজিক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এশিয়া অঞ্চলের বাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়। কেপিএমজি’র তৈরি করা ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিনরের আর্থসামাজিক প্রভাবের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে টেলিনর। এর বাইরে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অসমতা দূর করার বিষয়ে টেলিনর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে টেলিনরের প্রভাব সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে সম্প্রতি এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে চারটি মূল বিষয়ের ওপর টেলিনরের প্রভাব বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে টেলিনরের প্রভাব, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিসহ অর্থনীতি বিস্তৃতির লক্ষ্যে টেলিনরের প্রভাব, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং লৈঙ্গিক সমতার উন্নয়ন, সাপ্লাই চেনের টেকসই উন্নয়নে টেলিনরের প্রভাব ও সঙ্কট অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব। এ নিয়ে টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সিগভে ব্রেক্কে বলেন, আমাদের বিশ্বাস, সংযুক্ত সমাজব্যবস্থা সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। যাতে ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে উন্নত কাঠামো তৈরি করা যায়। আমাদের ডিজিটাল ভবিষ্যতের সুযোগগুলোকে বাস্তবায়ন করা। এ বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনায় অবদান রাখাই হচ্ছে প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য। গ্রামীণফোনের সিইও পিটার বি ফারবার্গ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং দেশের প্রধান অর্থনৈতিক সুচকগুলোতে গ্রামীণফোনের কার্যক্রম যেভাবে প্রভাব ফেলছে তা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিবর্তনে মনোযোগ দেয়ায় আমরা আরও সামাজিক ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রত্যাশা করছি। টেলিনর বাংলাদেশে তার পথচলা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পেরে গ্রামীণফোন গর্বিত। সংযোজিত মূল্য (গ্রস ভ্যালু এ্যাডেড-জিভিএ) গত ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১,৫০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে মূল্য সংযোজন করেছে টেলিনর। দেশের অর্থনীতিতে মোট মূল্য সংযোজনের শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। প্রযুক্তি খাতের ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে এশিয়ার অর্থনীতিতে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিভিএ ও উল্লিখিত ১৩ বাজারে ২০ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জিভিএ যোগান দিয়েছে টেলিনর। গত ২০১৫ সালে বাংলাদেশে টেলিনরের প্রতিটি পূর্ণকালীন কর্মীর সরাসরি মূল্য সংযোজন ছিল ১৬৯,৬২৩ মার্কিন ডলার যা জাতীয়ভাবে একজন পূর্ণকালীন কর্মীর গড় উৎপাদনশীলতার ২৩ গুণ (৭,৪৯২ মার্কিন ডলার)। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে গ্রামীণফোনের পূর্ণকালীন বা তার অনুরূপ ৪৭২৮ কর্মী ছিল। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ পুরুষ ও ২৭ শতাংশ নারী এবং ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশই বাংলাদেশী নাগরিক। এছাড়া সাপ্লাই চেনে পরোক্ষভাবে ১৬৯,৯০০ চাকরি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ১১৯,১০০ প্রবর্তিত চাকরির সূত্র তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। টেলিনরের তৈরি করা প্রতিটি চাকরির বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে আরও ৬১টি চাকরির সুযোগ। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টেলিনর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত পাঁচ বছরে ১,১৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০১৫ সালে টেলিনর বিনিয়োগ করেছে ২৪৮ মিলিয়ন ডলার। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেলিনরের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি : ৫৬ মিলিয়নের বেশি গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহত মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে। এটি ইতোপূর্বে উল্লেখিত মোট মূল্য সংযোজনের অতিরিক্ত। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে দেশজুড়ে গ্রামীণফোনের বিল-পে সেবার মাধ্যমে সর্বমোট ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে টেলিনর ওই বছর ৮ হাজার ৪শ’ ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে মোবাইল আর্থিক সেবার লেনদেন সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও, ২০১৬ সালে গ্রামীণফোন বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমা সেবা নির্ভর লাইফ ইনস্যুরেন্স সেবাগ্রহণে ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ৭১ মিলিয়ন গ্রাহক যুক্ত করেছে। টেলিনরের ‘গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট রিপোর্টে’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ বিজনেস ইউনিটের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যক্তিগত অবদানের বিস্তারিত তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।
×