নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৫ জানুয়ারি ॥ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার ২৬ দিন পরও তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এই নৃশংস হত্যাকা-ের কুশীলবরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। লিটন হত্যাকা-ের প্রকৃত খুনীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বুধবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে পরিবারের সদস্যরা।
এতে উপস্থিত ছিলেন লিটনের বড় বোন আফরুজা বারী, হত্যা মামলার বাদী লিটনের ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী, চাচাত ভাই তৌফিকুর রহমান আইনী মুকুট, ফুফাতো ভাই আনিসুর রহমান, ভাগ্নি মেহের নিগার মমি ও চাচাতো বোন শিবলী আকতার।
সংবাদ সম্মেলনে আফরুজা বারী লিখিত বক্তব্যে বলেন, এটি ভাড়াটিয়া খুনী দ্বারা সংঘটিত পরিকল্পিত হত্যাকা-। এর পেছনে রয়েছে মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, পরিকল্পনাকারী, অর্থ যোগানদাতা এবং সর্বশেষ হত্যাকারীরা। এরা হতে পারে কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান দল বা কোন আদর্শিক অপশক্তি। এ হত্যাকা- ঘটনার আগে ও পরে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর লিটন প্রায় ১ ঘণ্টা সচেতন ও সজ্ঞানে বেঁচে ছিলেন। সে সময় কেন খুনীদের পরিচয় নেয়া হলো না?
তিনি আরও বলেন, খুনীরা লিটন হত্যাকা-ের জন্য নিরাপদ জায়গা হিসেবে তার নিজ বাড়িকেই বেছে নেয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তার বাড়িটিই খুনীদের কাছে নিরাপদ বিবেচিত হলো কেন? কিভাবে খুনীরা পরিচয় না দিয়েই ঘরের ভিতরে ঢোকার সুযোগ পেল? তাছাড়া লিটনের অতন্দ্র প্রহরী জার্মান শেফার্ড কুকুর দু’টো ওই সময় কোথায় ছিল? কেন গিয়েছিল? দুর্বৃত্তরা রিভলবারের ৫টি গুলি করার পরও কেন তার নিকটজনরা লিটনের কাছে এলো না? লিটন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কাউকে কাছে না পেয়ে তাকে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে আঙ্গিনার দিকে ছুটে যেতে হলো কেন? তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, কেন লিটনের ঘনিষ্ঠজন, দলীয় নিবেদিত নেতাকর্মী এবং পরীক্ষিত সহযোদ্ধারা কেউই তার পাশে ছিল না, তাদের কি দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল?
তিনি আরও বলেন, লিটন আওয়ামী লীগের একজন অকুতোভয় কর্মী ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনও হতাশ নই। প্রধানমন্ত্রী হত্যাকা-ের বিষয়টি দেখছেন। আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। শীঘ্রই প্রকৃত খুনীদের মুখোশ উন্মোচিত হবে বলে আমরা মনে করি। এমপি লিটনের শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার এবং শাস্তি দেখতে চাই।
ইউপি মেম্বার ৩ দিনের রিমান্ডে ॥ লিটন হত্যা মামলায় গ্রেফতার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার রেজাউল ইসলাম লিটন ওরফে ডিস লিটনের (৩৫) ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল হাসান ইউসুফ তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২৩ জানুয়ারি ভোরে পার্শ্ববর্তী ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে লিটনকে গ্রেফতার করা হয়।
মিসকিন মুকুল ও সাইফুলকে জেলহাজতে প্রেরণ ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ইমামগঞ্জ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল ও তারাপুর ইউনিয়নের চৈতন্য বাজার গ্রামের ডিএম মাসুদার রহমান মুকুল ওরফে মিসকিন মুকুল ওরফে ছোট এমপি (৪৪) ও শিবির ক্যাডার সাইফুল ইসলামের (২৫) তিনদিনের রিমান্ড গতকাল বুধবার শেষ হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আবু মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান জানান, তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠান হয়েছে। মিসকিন মুকুল মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার পলাতক আসামি জামায়াতের সাবেক জেলা আমির সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজের পিএস ছিলেন।
দুই জামায়াত কর্মী গ্রেফতার ॥ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের নিজাম খাঁ কানিপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন (৫০) ও মশিউর রহমান (৫০) নামে দুই সক্রিয় জামায়াত কর্মীকে গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতা ও সন্ত্রাসের মামলা রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের বুধবার জেলহাজতে পাঠান হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: