ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার মৃত্যু যেন হয় জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে ॥ আইভী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

আমার মৃত্যু যেন হয় জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে ॥ আইভী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাবার মতোই জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সঙ্গে বেইমানি না করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। আমি সেগুলো মাথায় নেইনি। আমি শুধু আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেছি। আমি এখানে (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) দাঁড়িয়ে আমার বাবার মতোই বলতে চাই, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত বেইমানি করব না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। বেইমানি করব না দলের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে। আমার মৃত্যু যেন হয় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী যুবলীগের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা হয়। সভা পরিচালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। এ সময় যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ‘জয় বাংলাকে’ দেশের সার্বজনীন সেøাগান করার জন্য যুবলীগকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সেলিনা হায়াত আইভী আরও বলেন, এটা যেন শুধু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমাদের জাতীয় সেøাগানে পরিণত হয় এ ব্যাপারে আপনারা কাজ করবেন। মতবিনিময় সভায় আসার কারণ তুলে তিনি বলেন, এসেছি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে। আপনারা হয়ত আমাকে অনেকে চেনেন আইভী হিসেবে। আমার বাবার চুনকার নামে। তাঁর পরিচয়েই আমি পরিচিত। বাবার একটি মাত্র পরিচয় ছিল। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একদিনের জন্য বেইমানি করেননি। উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে বেড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আইভী বলেন, রাজনীতি মানেই মানুষকে নিয়ে কাজ করা। মানুষের মধ্যেই আল্লাহ রসুল, ভগবান ঈশ্বর বিরাজ করে। এটা আমার ছোট বেলা থেকেই শিক্ষা নেয়া। সেই শিক্ষা থেকেই আমার রাজনীতিতে আসা। বাবার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিভিন্ন নাসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়া অবধি বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে তিনি বলেন, আমি যখনই দেশে এসেছি প্রতিবারেই নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে যখন এত ভাল অবস্থা ও কাজ করার পরও বহির্বিশ্বে এবং অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগে হেরে যায়। এরপর ২০০২ সালের শেষের দিকে নারায়াণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ঘোষণা করা হয়। তখন আমাদের দলের অনেকেই দেশের বাইরে ছিলেন। জোট সরকারের অত্যাচার জেল-জুলুম নির্যাতনের কারণে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের নেতাকর্মীরা তখন মাঠে দাঁড়াতে পারতেন না। ঠিক সেই সময় দেশে এসে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ছিলাম। তখন একা একা হেঁটে ছিলাম। আমার সঙ্গে দুই থেকে তিনজন লোক থাকত। ভয়ে কেউ হাঁটতে চাইত না। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেই, সকলেই পলাতক। কারণ ওই সময় ওই পরিস্থিতি আমার জানা ছিল না। হঠাৎ দেশে এসে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সে সময় নেত্রী আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, আর দেশের বাইরে যাওয়া হবে না। আমি বলেছিলাম, আর যাব না। দেশেই নির্বাচন করব। ডাঃ আইভী বলেন, এই পথ চলায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও সততা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। আমি আমার নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে শত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। মিথ্যা প্রচারণা করা হয়েছে। কখনও কখনও আমি তৃতীয় শক্তি। কখনও আমি বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট। কিন্তু আমি একটি কথারও প্রতিবাদ না করে শুধু কাজ করে গেছি মানুষের জন্য বলে দাবি করেন নাসিক মেয়র আইভী। বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করে ডাঃ আইভী বলেন, নেত্রী সেদিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন- আমরা এত উন্নয়ন করলাম, এত কাজ করলাম। আইভী ১ লাখ ৯৫ হাজার ভোট পেয়েছে এটা তো বড় কথা নয়, ধানের শীষ ৯৫ হাজার ভোট পেল! এটা কিভাবে হলো? নেত্রী সেদিন আরও বলেন, আমাদের প্রচার কম হয়েছে। আমরা যে উন্নয়ন করেছি তাও তুলে ধরতে পারছি না তৃণমূল মানুষের কাছে।
×