ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিকেট কাটার দিন শেষ হচ্ছে, আসছে র‌্যাপিড পাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

টিকেট কাটার দিন শেষ হচ্ছে, আসছে র‌্যাপিড পাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গণপরিবহনে উঠতে লাইন ধরে টিকেট কাটার দিন শেষ হচ্ছে। টিকেট কাটতে আর কাউকে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। একটি স্মার্ট কার্ড দিয়ে বাস, ট্যাক্সিক্যাব, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহনে চলাচল করা যাবে। অর্থাৎ এই স্মার্ট কার্ড দিয়েই গাড়িতে ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হবে। আগামী বছরের পর থেকেই রাজধানীবাসী এ সেবা পাবেন। সব ধরনের গণপরিবহনে এই সেবা চালু বাধ্যতামূলক করা হবে। গাড়িতে সহজ যাতায়াত নিশ্চিত করতে ব্যাংক থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। প্রি-প্রেইড কার্ডটি সহজেই মোবাইল ফোনের মতো রিচার্জ করারও সুযোগ থাকছে। অর্থাৎ কার্ডে টাকা থাকলেই গাড়িতে চলাচল নিশ্চিত। যে কোন গণপরিবহনে উঠার পর গাড়িতে থাকা মেশিনে পান্স করলেই নির্দিষ্ট দূরত্বের ভাড়া পরিশোধ হয়ে যাবে। তবে এই সেবা শুধু ঢাকার মানুষদের জন্য। সুখবর আছে আরেকটি। এই কার্ড দিয়ে পর্যায়ক্রমে যে কোন দোকান থেকে বাজারও করা সম্ভব হবে। রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় যাত্রীদের হয়রানি কমাতে সমন্বিত ই-টিকেটিং পদ্ধতি ‘র‌্যাপিড পাস’ সেবা চালু করতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ)। বুধবার দুপুরে ‘র‌্যাপিড পাস’ সেবা শুরু করতে ক্লিয়ারিং হাউস স্থাপনে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সব পরিবহনে একই কার্ড অর্থাৎ ‘র‌্যাপিড পাস’ দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা। ভবিষ্যতে মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), রেল, বিআরটিসির সব রুট, বিআইডব্লিউটিসি, পাবলিক পরিবহনে এই কার্ড ব্যবহার করে পরিবহন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন যাত্রীরা। একাধিক পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাড়া আদায় ব্যবস্থার সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে একটি ‘ক্লিয়ারিং হাউস’। ভাড়া বণ্টন ও কার্ড ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোর দেখভালও করবে তারা। ক্লিয়ারিং হাইস পরিচালনায় একটি ক্লিয়ারিং হাউস ব্যাংক থাকবে। যা পরিবহন সেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্টদের প্রাপ্য অর্থ স্ব-স্ব এ্যাকাউন্টে প্রদানের ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া র‌্যাপিড পাসের জন্য প্রদেয় ফি এবং রিচার্জ কার্যক্রম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে। র‌্যাপিড পাস ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি পরিবহন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও নগদ অর্থ বহনের ঝামেলা এড়াতে পারবে বলে মনে করছে ডিটিসিএ। রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা সমন্বিত ই-টিকেটিং পদ্ধতির আওতায় আনতে জাইকার কারিগরি সহায়তায় এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৯ দশমিক শূন্য ৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার কারিগরি সহায়তায় রয়েছে ২৮ দশমিক ৫২ কোটি টাকা এবং সরকারের ১০ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০১৪ থেকে জুন ২০১৮ এর মধ্যে। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা চালু হলে টিকেট কাটার আর ঝামেলা থাকছে না। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটার যুগের অবসান হবে। এক পাস দিয়েই যাত্রীরা সব ধরনের গণপরিবহনে উঠে গাড়িতে ভাড়া পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। এতে যাত্রী ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। ডিটিসিএ’র পক্ষে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মোঃ শিরিন চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘র‌্যাপিড পাস’ ব্যবহারকারীদের নগদ অর্থ বহন করে যাতায়াত করতে হবে না। যাতায়াত হবে ঝামেলামুক্ত। ভবিষ্যতে এই কার্ড দিয়ে নির্দিষ্ট দোকানে কেনাকাটাও করা যাবে। এখানে আধুনিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, এ কার্ড জাল করা সম্ভব হবে না। এ সময় জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে, জাইকার চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকাতোশি নিশিকাতা, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দাবি করেছেন। বাস্তবতা হলো বিএনপি কারফিউ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া গতকাল বলেছেন বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। এর জবাবে আমি বলতে চাই, বিএনপি কারফিউ গণতন্ত্রের প্রবক্তা। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতির করা সার্চ কমিটিতে আওয়ামী লীগ তার দলের পক্ষ থেকে কোন দলীয় ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে না বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এ কমিটিতে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদেরই আসা উচিত, তবে সব সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতি তার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে গ্রহণ করবেন বলে আশা করি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পদক্ষেপ হিসেবে সকল গণপরিবহনের জন্য এই কার্ড এই সেøাগানকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা সমন্বিত ই-টিকেটিং পদ্ধতির আওতায় আনার লক্ষ্যে জাইকার কারিগরি সহযোগিতায় ডিটিসিএ স্ট্যাবলিস্টমেন্ট অব ক্লিয়ারিং হাউস ফর ইন্টিগ্রেটিং ট্রান্সপোর্ট টিকেটিং সিস্টেম ইন ঢাকা সিটি এরিয়া শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো র‌্যাপিড পাস নাম আইসি কার্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে সব ধরনের যানবাহনে ব্যবহারযোগ্য একটি সমন্বিত ই-টিকেটিং পদ্ধতির প্রচলন করা। র‌্যাপিড পাসের ব্যবহার বাংলাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে এ কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশসমূহের ন্যায় বাংলাদেশের মানুষও ই-টিকেটিং সুবিধা গ্রহণ করে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। যা দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
×